তারুণ্যের পেশা: পিএইচডি করতে মেথর!
- Details
- by এম, এম, আসাদ
আমার পরিচিত সাবেক একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। নাম বলছি না সংগত কারণেই। স্ত্রী রাশিয়ান, একমাত্র ছেলে জন্মসূত্রে ব্রিটিশ, ভদ্রলোকের জন্ম বাংলাদেশে হলেও পাসপোর্ট অস্ট্রেলিয়ান। পুরোপুরি একটি বহুজাতিক পরিবার। একদিন দেখি বসের মেজাজ খুব খারাপ। কথায় কথায় বলেই ফেললেন- তাঁর পিএইচডি করা ছেলে ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডে কাজ করত। বেশ হ্যান্ডসাম উপার্জন ছেড়ে দিয়ে লন্ডনের নিম্ন আয়ের মানুষের উপর গবেষনা করবে এবং বই লিখবে, তাই চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছে। এই নিম্ন আয়ের শ্রেণিকে বোঝার সুবিধার জন্য সে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনে জেনিটারের (মেথর!) কাজ নিয়েছে। এজন্য তাঁর বাঙালি রক্তের বাবার বিষয়টা মানতে বেশ কষ্ট হচ্ছে! ওখানে সামাজিক ভেদাভেদ কম থাকার কারনে বসের ছেলে নাকি তার নতুন অবস্থানকে দারুণ উপভোগ করছে।
ইদানিংকালে বাংলাদেশে ছেলে মেয়েদের মধ্যে শুরু হয়েছে বিসিএস ক্রেজ। যারা ঠিক করেছে বিদেশে যাবে না এমনসব মেধাবি ছেলে মেয়েদের এখন প্রথম আগ্রহ বিসিএস প্রশাসন অথবা পুলিশ। না, প্রশাসনে কিংবা পুলিশে মেধাবিরা যেতে পারবে না- এমনটি বলছি না। কিন্ত ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং এর মতো পেশাভিত্তিক পড়াশুনায় শিক্ষিত থেকে শুরু করে বিষয় ভিত্তিক আরবি-ইতিহাস পাশ করা, সবাই যখন প্রশাসনে যেতে কিংবা পুলিশ হতে চায়, সেটা নিশ্চয়ই অস্বাভাবিক। এখন বিসিএস নিয়ে সব মেধাবি ছেলে-মেয়ে গুলোই কেমন যেন একটা হিপনোটিজমের মধ্যে। এরা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের চকচকে গাড়ি দেখে, পুলিশের প্রতিপত্তি দেখে আর পড়াশুনার মূল উদ্দেশ্য ভুলে অকারণে মোহিত হয়। যে ছেলেটা শিক্ষা জীবনের প্রথম থেকেই পলিটিক্যাল সায়েন্স এবং যে মেয়েটা লোকপ্রশাসন থেকে কৃতিত্বের সাথে পাশ করল, প্রশাসন ক্যাডারে তার দাবি অবশ্যই এই ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিং পাড়াদের চেয়ে বেশি হওয়া উচিত- এটাও কেন যেন এখন কেউই বুঝছে না। এই এক বড় অসংগতি, তারুণ্যকে ঠিক মতো সঠিক পেশা নিয়ে গাইড করার মতো সামনে কেউ নেই। প্রার্থী থেকে শুরু করে চাকরিদাতা সবাই বিভ্রান্ত!
দেশের পুলিশ সাগর-রুনী হত্যা মামলার মতো মামলার সমাধান করতে পারেনি দীর্ঘ দিনেও। আবার এদেশেই অপরাধ বিজ্ঞান থেকে থেকে পাশ করা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্র ছেলেটি ব্যাংকের টাকা গুনে হতাশায়, নতুন করে এমবিএ করে জাতে ওঠার প্রাণপণ চেষ্টা করে- এটাও অহরহ ঘটনা। কে কাকে বোঝাবে যে- পুলিশের শুধু সাত ফুট উচ্চতার শক্ত শরীরই নয়, নিয়মসিদ্ধ পড়াশুনা করা অলরাউন্ডার তীক্ষ্ম মন ওয়ালা সমাজ বিজ্ঞানী বা অপরাধ বিজ্ঞানীরও প্রয়োজন। গ্রামের তেলমাখা সিঁদকাটা রুস্তম চোরের দিন অনেক আগেই শেষ হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে সেরা মেধাগুলোর ভেতর থেকে হ্যাকার, সাইবার অপরাধী আর ক্রিমিনালরা আসছে। সেটার প্রতিকার বা প্রতিরোধ করতে চকচকে ঋজু বাহুর চেয়ে ক্ষুরধার কম্পিউটার মাথা কম জরুরি নয় বৈকি!
অভিজ্ঞতায় দেখেছি ক্রিয়েটিভ মানুষ একই কাজ দিনের পর দিন করতে পারে না। এক বেলা ভাত কম খেয়ে হলেও তাঁরা কাজে বৈচিত্র খোঁজে। বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে এই বৈচিত্রের সুযোগ খুবই কম। মাথা খাটানোর চেয়ে গৎবাঁধা তেলবাজি আর রুটিন কাজই বেশি। কাজ করলে ভুল হয়, কনফ্লিক্ট হয়, না করলে নয়- তাই কাজ না করে পার পেতে চাওয়াদের সংখ্যা অনেক বেশি। অবস্থা ধীরে ধীরে পাল্টালেও- নতুন নতুন আইডিয়া, টেকনোলজি কিংবা ইনোভেশন এবং তার প্রয়োগ অনেক ক্ষেত্রেই সরকারি চাকুরিতে একান্ত বিপদজনক। তাই দেখি পুরকৌশল সারা পৃথিবীতে বহুদূর এগোলেও, অযাচিত জবাবদিহিতার ভয়ে আমাদের পুরকৌশলীরা বহু পুরনো নিয়ম মেনে এখনো যে রাস্তা-ব্রিজ বানান, তাতে খরচ লাগে পাঁচগুণ, জনগণের ভোগান্তি হয়রানি বহুগুণ - অপচয় কত গুন তা বলাই বাহুল্য। আমার নিজের আন্ডার গ্রাজুয়েশনে মেজর ছিল ব্রিজ স্ট্রাকচার। প্রায় পনের বছর কর্ম জীবনে পাঁচ মাস একটা রাস্তার কিয়দংশ এবং একটা ১১০মিটার ব্রিজের অর্ধেক বানিয়েই বিদ্যা শেষ করেছি। এই শতকের শুরুর দিকে- সে সময় টেলিকমিউনিকশনে চাকরি অনেক লোভনীয় ছিল। তাতে টাকা থাকলেও পছন্দের চ্যালেঞ্জিং প্রকৌশল বিদ্যা ছিল না। তিনগুণ বেশি ভাল বেতন, চকচকে জীপ গাড়ীর পেছনে দৌঁড়ে সে সময় ভালো লাগাকে বিসর্জন দিয়েছিলাম অবলীলায়। এখন অনভ্যাসে একটা বেসিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়েও কষ্ট হয়। আর রুটিন কাজ করতে করতে অনেক সময়ই একঘেঁয়ে লাগে।
আমার মতো পরিচিত অনেকেই চ্যালেঞ্জিং পেশার বাহিরের রুটিন প্রশাসনিক কাজে হাঁপিয়ে পড়েছেন। তাছাড়া বয়স চল্লিশের কোটায় এলে আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে নতুন করে কিছু শুরু করা (একান্ত মনের জোড় না থাকলে) বেশ কঠিন হয়ে যায়। যে কাজ করে সামান্য আনন্দও সে পায় না, সেটাই করতে হয় দিনের পর দিন করতে হয় জীবিকার জন্য, টাকার জন্য! আনন্দহীন অমানুষিক কাজ করতে করতে তাঁর প্রথম জীবনে উপার্জন করা টাকাগুলো পানসে মনে হয়। সাথে সাথে তার শিক্ষার অপচয় হয়, সারাজীবন কাজ করে কোন তৃপ্তিই আসে না। একসময় ঝাড়ুদারের, ভিখারীর জীবনও বেশি বৈচিত্রময় মনে হয়। সামাজিকতার ভয়ে বিদেশের মতো সে জীবনে ফেরাও যায় না। অন্যদিকে যারা সঠিক ক্যারিয়ারে থাকেন প্রথম দিকে একটু কষ্ট হলেও এক সময় অর্থনৈতিক দুর্যোগকে তারা অতিক্রম করে যান অবলীলায়; ক্যারিয়ার নিয়েও তৃপ্তিতে থাকেন। এজন্যই তরুণদের প্রতি আমার আহ্বান বুঝে শুনে ক্যারিয়ার পছন্দ করুন। বিশেষ করে প্রকৌশল, চিকিৎসা কিংবা কৃষির মত পেশা ভিত্তিক শিক্ষা থেকে যারা নতুন পেশায় যেতে চাচ্ছেন। ভেবে দেখুন সত্যিই আপনি নতুন পেশাটি সম্পর্কে গভীরভাবে জানেন কিনা? নতুন পেশাটির ভালো-খারাপ পরিস্থিতিগুলো সম্পর্কে (যেমন বদলি, মফস্বল জীবনযাত্রা, আদবকেতা ইত্যাদি) অবহিত আছেন কিনা? পেশাটিকে এখন ভালোবাসেন, ভবিষ্যতেও এতে মানিয়ে চলতে কিংবা উপভোগ করতে পারবেন কিনা?
লেখক: টেলিটক বাংলাদেশ লিঃ এর কর্মকর্তা
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.