আজকের দিনের যে হামলা পাল্টে দিয়েছে পুরো বিশ্বকে
- Details
- by সাইফ বিন আইয়ুব
আজকের বিশ্বের বর্তমান যে হালচাল এর পিছনে অনেকাংশেই দায়ী ২০০১ সালের একটি বিমান হামলা। সেপ্টেম্বর মাসের ১১ তারিখে হওয়া ওই হামলাই পৃথিবীর পরবর্তী ভবিষ্যত নির্ধারণ করে দিয়েছিলো। চলমান বিশ্বে এক দেশের সাথে আরেক দেশের যুদ্ধংদেহী মনোভাব প্রদর্শন আর সারা বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির যে ভঙ্গুর অবস্থা তার পিছনেও ওই হামলাকে দায়ী করা হয়।
‘নাইন ইলেভেন’ নামে পরিচিত ওই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রেরই চারটি বিমান অংশ নেয়। তৎকালীন জঙ্গি গোষ্ঠী আল কায়েদার ১৯ জন সদস্য এই চারটি বিমান ছিনতাই করে। এরপর সেগুলো দিয়েই রচিত হয় বিশ্বের সর্বকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান হামলা।
হামলায় প্রথম যে বিমানটি আঘাত হানে সেটি ছিলো আমেরিকান এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৬৭ মডেলের একটি বিমান। ২০ হাজার গ্যালন জেট ফুয়েল নিয়ে এটি টুইন টাওয়ার নামে পরিচিত ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ১১০ তলাবিশিষ্ট নর্থ বিল্ডিংয়ের ৮০তম তলায় সরাসরি আঘাত হানে। বিমানটিতে বিপুল পরিমান জেট ফুয়েল থাকায় এর তাপে ভবনের শক্তিশালী ইস্পাতের কাঠামো একেবারে মোমের মতো গলে পড়ে।
দ্বিতীয় আঘাতটা আনা হয় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের অপর টাওয়ারটিতে। এটিও ছিলো ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের একটি বোয়িং ৭৬৭ বিমান। টুইন টাওয়ারের সাউথ বিল্ডিংয়ের ৬০তম তলায় আঘাত হানে এই বিমানটি। আধা ঘণ্টার ব্যবধানে ভবন দুটি একেবারে মাটির সাথে মিশে যায়। শুধুমাত্র এই দুটি ঘটনায় দুই হাজার ৭৬৩ জন প্রাণ হারান। আহত হন প্রায় ১০ হাজার মানুষ।
ঘটনার শেষ এখানেই নয়। স্থানীয় সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের আরেকটি বোয়িং ৭৫৭, ফ্লাইট ৭৭ উড়ে যায় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার থেকে আরও দক্ষিণ-পশ্চিমে। এরপর মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দফতর পেন্টাগনের পশ্চিম পাশে গিয়ে মারাত্মক এক আঘাত হানে। ওই হামলায় পেন্টাগনের এক পাশের ভবন ধসে পড়াসহ আগুন প্রায় পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। মারা যায় ১২৫ জন মানুষ। বিমানের সব যাত্রী ও ক্রুদের পরিণতিও একই ছিলো।
তখনও মঞ্চে আরও ঘটনা ঘটার বাকি ছিলো। নিউ জার্সির লিবার্টি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে উড্ডয়ন করে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৯৩। ছিনতাইকারীরা উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরেই বিমানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। ততোক্ষণে যাত্রীরা আমেরিকার বিভিন্ন স্থানে বিমান হামলার খবর জেনে গেছেন। তাদের নিজেদের ভাগ্যে কী ঘটতে যাচ্ছে তা অনুমান করে নিতে কষ্ট হলো না তাদের। বিমানে থাকা ফায়ার এক্সটিংগুইশার হাতে নিয়ে তখনই ছিনতাইকারীদের প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নেন যাত্রীরা। ৪৪ জন যাত্রীর সবাই যখন ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেন তখন পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হয় হামলাকারীদের। যাত্রীদের বাধার মুখে পড়ে সকাল ১০টা ১০মিনিটে বিমানটি পেনসিলভানিয়ার একটি গ্রামীণ এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। সাথে সাথেই বিমানে থাকা সকল যাত্রীদের মৃত্যু হয়।
ধারণা করা হচ্ছিলো, এই বিমানটি দিয়ে প্রেসিডেন্টের বাসস্থান হোয়াইট হাউজ বা মেরিল্যান্ডের ক্যাম্প ডেভিড কিংবা পারমাণবিক কোনও বিদ্যুৎ কেন্দ্রে হামলা করার ইচ্ছা ছিলো ছিনতাইকারীদের। কিন্তু যাত্রীদের বাধায় তা ভেস্তে যায়।
আমেরিকার জাতীয় জীবনে নাইন ইলেভেন একটি ভয়-আতঙ্ক আর দুর্যোগের নাম। ওই ঘটনার পর হামলার জন্য ওসামা বিন লাদেনকে দায়ী করে আল-কায়েদার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। গঠিত হয় নতুন বাহিনী, নতুন মন্ত্রণালয়। সব ইউরোপীয় দেশগুলো এগিয়ে আসে মার্কিনীদের পাশে। বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধের ডাক দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধের সূত্র ধরে টুইন টাওয়ার হামলার এক মাস না পেরোতেই ২০০১ সালের ৭ অক্টোবর আফগানিস্তানে হামলা করে ন্যাটো। উৎখাত করে তালেবান সরকারকে। যদিও তখন পর্যন্ত ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজে পায়নি আমেরিকা তারপরও তাদের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অব্যহত থাকে। এর ধারাবাহিকতায় ২০০৩ সালে ইরাকে হামলা করে সেখানকার শাসক সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাত করে মার্কিন সামরিক জোট। পুরো বিশ্বে যুদ্ধের দামামা ছড়িয়ে পড়ে।
২০১১ সালে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদ শহর থেকে ওসামা বিন লাদেনকে আটক ও হত্যা করে মার্কিন নেভি সিল টিম। তারপরও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় আমেরিকা। লাদেনের মৃত্যুর পর আল-কায়েদার দূর্বল হওয়ার সুযোগ নিয়ে যুদ্ধের ময়দানে হাজির হয় অপর সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএস। এখনও এই আইএসের বিরুদ্ধে সিরিয়া, ইরাকে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলো। যুদ্ধের এই উত্তাপ থেকে রেহাই পায়নি ময়দানের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোও। ফলে তুরস্ক, জর্দান, সৌদি আরব, ইরান এখন অস্থিতিশীল। যুদ্ধ চলছে ইয়েমেনেও। সারা বিশ্বের রাজনৈতিন অঙ্গন উত্তপ্ত কড়াইয়ের তেলের মতো অনবরত ফুটছে। আর এই সব কর্মযজ্ঞের পিছনে একমাত্র দায়ী করা হয় নাইন ইলেভেনের হামলাকে। ওই দিনের ওই হামলাটি না হলে পৃথিবীর ইতিহাস হয়তো অন্যভাবে লিখা হতো।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.