বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশ থেকে দলটির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিসহ চার দফা দাবি পেশ করা হয়েছে। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের পরিবেশ তৈরি করার আহ্বান জানিয়ে দলটির পক্ষ থেকে এ দাবিগুলো জানানো হয়েছে। নয়া পল্টনে বিএনপির ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশ থেকে নেতারা বলেছেন, তাদের দাবি মানা না হলে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। তাদের ভাষ্য, ‘জনগণ নির্বাচন হতে দেবে না’।

Mirza Fakhrul Islam september 2018

চেয়ারপার্সনের মুক্তি ব্যতিত তাদের বাকি দাবিগুলো হল- সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে এবং নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করতে হবে।

আজ ১ সেপ্টেম্বর, শনিবার বিকেলে বিএনপির কেন্দ্রীুয় কার্যালয়ের সামনে ট্রাকের ওপর তৈরি মঞ্চ থেকে র এ দাবিগুলো পেশ করে বলেন, ‘এ দেশের জনগণ বুকের রক্ত দিয়ে দেশের স্বাধীনতা এনেছে। প্রয়োজনে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আবারও বুকের রক্ত দিতে হবে, তবুও তাঁকে মুক্ত করতে হবে। খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে এ দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।’

সভাপতির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকের জনসমুদ্র প্রমাণ করেছে আজ বাংলাদেশ আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। জনগণের দাবি আদায় করতে হবে। অপশাসনকে পরাজিত করতে হবে। জাতিকে মুক্ত করতে হবে। গণতন্ত্রকামী সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে ঐক্যবদ্ধ হোন। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করুন। দেশকে স্বৈরাচারের হাত থেকে মুক্ত করুন।’

খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি তুলে ফখরুল বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানকে সাজা দিতে চাইছে। রায়ের আগে আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলে দিচ্ছেন এ মামলায় তারেক রহমানের সাজা হবে। তাহলে কি তাঁরা আগেই রায় লিখে রেখেছেন? মনে রাখবেন, কোনো ষড়যন্ত্রের রায় দেশের জনগণ মেনে নেবে না।’

প্রধান অতিথি খন্দকার মোশাররফ হোসেন: বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। আওয়ামী লীগ বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে দেশে রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি করেছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান রাজনৈতিক শূন্যতা দূর করতে বিএনপি গঠন করেছিলেন। আওয়ামী লীগ বাকশাল গঠন করে গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে, জিয়াউর রহমান গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছেন।’

আন্দোলন করে দলীয় নেত্রীকে মুক্ত করার নির্দেশ দিয়ে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এই সরকার খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেবে না। তাই আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া দেশের গণতন্ত্র মুক্ত হবে না। একাদশ সংসদ নির্বাচন হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। ভোটের আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে, নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে, সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সব দলের সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে। আর তফসিল ঘোষণার আগেই খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, না হলে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ: ‘আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়। তাই একমাত্র পথ হলো রাজপথ। এ জন্য নেতা-কর্মীদের তৈরি হতে হবে। আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। তাঁর (খালেদা জিয়া) নেতৃত্বে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে অবাধ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। আমরা গণতন্ত্রের জন্য ২৪ বছর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি। আজ আবার যুদ্ধ করছি গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য। এ লড়াই জনগণের ভোটাধিকার ও বাকস্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার লড়াই।’

BNP founder anniversary 2018

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী: ‘সরকার একটি নীলনকশার নির্বাচন করার জন্য মিথ্যা মামলা ও গুম-খুনের মাধ্যমে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এসবে যখন বিএনপিকে দমাতে পারেনি, তখন নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। সেটি হলো, ইভিএম। ইভিএমের মাধ্যমে ডিজিটাল জালিয়াতি করে ভোটাধিকার হরণ করা যাবে না। আজ এ দেশের মানুষ খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। তারা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে তাঁর নেতৃত্বে নির্বাচন হবে, তবে সেই নির্বাচন হবে ব্যালট পেপারে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ভয়-ভীতি করে ক্ষমতায় থাকার নীলনকশায় ওরা ভরসা করতে পারছে না বলে এখন ইভিএমের ওপর ভর করেছে। অবৈধভাবে জোর করে ক্ষমতায় থাকা যাবে না। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, দেশনেত্রীকে মুক্তি দিতে হবে। নইলে গণতন্ত্রের মা দেশনেত্রীর মুক্তির জন্য যে সুনামি আসবে তাতে ইভিএমসহ সব কিছু ভেসে যাবে। দেশের জনগণ আজকে স্বৈরাচার থেকে মুক্ত হতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।'

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস: সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘এখনো সময় আছে সাবধান হোন, দেশনেত্রীকে মুক্তি দিন। গতরাতে বাসা-বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়েও আপনারা জনসভার জনস্রোত রুখতে পারেননি। এই জনসভা আপনাদের পতন ঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছে।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘গণতন্ত্রের পথে আসুন, গণতন্ত্রের পথে যারা যাবে তাদের বাধা দেবেন না। সুষ্ঠু নির্বাচন শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ ও এরশাদ ছাড়া এদেশের সকল মানুষ চায়। এই এরশাদ গৃহপালিত বিরোধী দল নয়। তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের বিরুদ্ধে।’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল: সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, জনগণের আওয়াজ কী আপনি শুনতে পাচ্ছেন না? এই আওয়াজ আপনার পতনের আওয়াজ। এই সরকারের নির্যাতনের বিষদাঁত ভেঙে দিতে হবে।'

বিএনপির বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য জমিরউদ্দিন সরকার, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ আরো অনেকে বক্তব্য রাখেন। মূল বক্তৃতা পর্ব শুরুর আগে বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতারা বক্তব্য রাখেন। বেলা আড়াইটার দিকেই নয়া পল্টনে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী জড়ো হয়। সমাবেশের পূর্বে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ফকিরেরপুল মোড় থেকে নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত অবস্থান করার শর্ত জুড়ে দিলেও বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মীর উপস্থিতির কারণে জনসমাবেশ নির্ধারিত এলাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে।

নয়াপল্টনস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তা ছাড়াও ফকিরেরপুল মোড় থেকে মতিঝিল এলাকা, দৈনিক বাংলা মোড়, বিজয়নগর এলাকা, সেগুনবাগিচা এলাকা, রাজারবাগ এবং কাকরাইল মোড় থেকে শান্তিনগর এলাকায় বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতা কর্মীদের উপচে পড়া ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। এদিকে সড়কে অবস্থান নেওয়ায় বেলা ২টার পর থেকে এসব এলাকার যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সমাবেশকে ঘিরে জলকামান, প্রিজন ভ্যানসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি ছিল।

দলের ভাইস-চেয়ারম্যান রুহুল আলম চৌধুরী, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, তৈয়মুর আলম খন্দকার, ফরহাদ হালীম ডোনার, যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দীন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন, ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল খান,সহ-যু্ব বিষয়ক সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়াও তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সহ-সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দীন আলম, আবু নাসের মোহাম্মাদ রহমাতুল্লাহ, কামরুল ইসলাম সজল, মো. মতিন, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. দেওয়ান, মো. সালাউদ্দীন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, সহসভাপতি নবী উল্লাহ নবী, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরীন খান, যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি মোর্তাজুল করিম বাদরু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, সহসভাপতি গোলাম সরোয়ার,মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেনসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.