‘এই সৌন্দর্যের কারণেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি’

বৌদ্ধ পরিবারে জন্ম নেয়ায় জীবনের শুরুতে ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। এরপর যৌবনে এসে সত্যের সন্ধানে খৃস্টান ধর্ম গ্রহণ করেন। কিন্তু শান্তির দেখা পাননি। অবশেষে পবিত্র কুরআন ও ইসলামী সমাজের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। এভাবেই চিরসত্য ও শান্তির দেখা পান মালয়েশিয়ার নওমুসলিম ইব্রাহিম কাভান।

কাভান ছয় বছর বয়সে স্থানীয় একটি চীনা স্কুলে ভর্তি হন। নয় বছর বয়সে কুয়ালালামপুরের ভিক্টোরিয়া স্কুলে ভর্তি হন। এ সময়ে তিনি দার্শনিক কনফুসিয়াসের চিন্তাধারা এবং বাইবেলের সঙ্গের পরিচিত হন। এরপর খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং ধর্মান্তরিত হন। একপর্যায়ে পাদ্রি হিসেবে গির্জায় উপদেশ দিতেন।

এভাবেই চলছিল কাভানের দিন। হঠাৎ একদিন গির্জায় যাওয়ার পথে এক ভারতীয় মুসলিম কাকা মুহাম্মাদের সঙ্গে পরিচয় ঘটে তার। তার মাধ্যমেই জীবনের মোড় ঘুরে যায় কাভানের।

সেই ঘটনার স্মৃতিচারণ করে কাভান বলেন, ‘কাকা মুহাম্মাদ আমাকে ইংরেজিতে অনূদিত পবিত্র কুরআনের একটি কপি উপহার দেন। তিনি সবার মাঝে ইসলামের শিক্ষা প্রচার করে থাকেন। কুরআনের বিষয়বস্তুগুলো আমাকে বেশ আকৃষ্ট করে এবং এর মাধ্যমে আমি প্রভাবিত হই।’

তিনি আরো বলেন, ‘এর কিছু দিন পর খ্রিস্টানদের বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে গির্জায় মতভেদ ও উত্তেজনা তৈরি হয়। তা আমাকে খুবই ব্যথিত করে। এসব কারণে আমি ইসলাম সম্পর্কে গভীরভাবে জানতে শুরু করি। এসময় পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন বিষয় গভীরভাবে উপলব্ধি করি এবং বেশ প্রভাবিত হই।’

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহর একত্ববাদের ওপর বেশ জোর দেয়া হয়েছে। বিষয়টি কাভানকে গভীরভাবে আকৃষ্ট করে। তিনি মনে করেন, ইসলাম ও খ্রিস্ট ধর্মের সকল মতপার্থক্যের মূলে রয়েছে সৃষ্টিকর্তার একত্ববাদ।

এছাড়া মানব জীবনের সব ক্ষেত্রে পবিত্র কুরআন ও ইসলামের ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি এবং শৈথিল্য বা বাড়াবাড়িহীনতার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এটিও কাভানকে আকৃষ্ট করে।

এ বিষেয় তিনি বলেন, ‘সারা দুনিয়ার মানুষ বিভিন্ন ধরনের বাড়াবাড়িতে লিপ্ত রয়েছে। বিশ্বে যত যুদ্ধ, সংঘাত ও মতভেদ সব এই চরমপন্থার জন্য। এটি মানুষের মধ্যে ক্ষমতা-লিপ্সা ও লোভ-লালসার জন্ম দিচ্ছে। এ কারণেই মানুষ প্রশান্তি পাচ্ছে না।’

কাভানের মতে, ভারসাম্যহীন সংস্কৃতির কারণে পাশ্চাত্যের চাকচিক্যতার ভেতরে শূন্যতা ও দুর্বলতা বিদ্যমান। তারা বিজ্ঞানকে ভোগ-বিলাস বা আরামের কাজে ব্যবহার করছে। এর মাধ্যমে তারা আত্মাকে দরিদ্র ও উদ্বেগের মধ্যে ছেড়ে দিয়েছে। এ কারণেই তাদের বস্তুবাদী সভ্যতায় উত্তেজনা আর অবিচার। কিন্তু এ থেকে ইসলাম সম্পূর্ণ মুক্ত এবং মুসলিমদের এই বিপদ থেকেও মুক্ত রাখতে সক্ষম।

ইসলামের বৈষম্যহীন বিধানও মুগ্ধ করেছে কাভানকে। তিনি বলেন, ‘এখানে সৎ কাজের পুরস্কার ও মন্দ কাজের শাস্তির কথা বলা হয়েছে। এ জন্য ইসলামে যৌক্তিক ও বিবেকসম্মত চমৎকার সব কর্মসূচি রয়েছে। এ সব সৌন্দর্যের কারণেই আমি ৪২ বছর বয়সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি এবং ইব্রাহিম কাভান নাম ধারণ করি।’

সত্য দ্বীনের সন্ধান পেয়ে মুসলমান হতে পারায় মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে কাভান বলেন, ‘সৌভাগ্যবানদের কাতারে শামল হতে পেরে আমি গর্বিত এবং ইসলামের সৌন্দর্য পুরোপুরি অনুভূব করতে পারছি।’