যেনো কোচ নন, তিনি কেবলই বন্ধুজন!

লম্বা সময় ধরে ক্যাচ ফিল্ডিং অনুশীলন করে মুশফিকুর রহিম ও তাইজুল ইসলামরা তখন ক্লান্ত। মুশফিক কোমড়ে হাত দিয়ে সোজা দাঁড়িয়ে আছে। তাইজুল হাঁটুতে ভর দিয়ে আছেন উবু হয়ে। শক্তিক্ষয়ে তাদের মতো না হলেও কম যাননি স্টিভ রোডসও। এই ইংলিশ কোচকে অনুশীলনে সক্রিয় দেখা যায় খেলোয়াড়দের মতোই। মুশফিক-তাইজুল যখন ক্লান্ত, রোডসকে তখন দেখা গেলো ক্লান্ত শিষ্যদের মধ্যে ঠাণ্ডা পানির বোতল বিতরণ করতে!

রোডসের আগে বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করে গেছেন চান্দিকা হাথুরুসিংহে। লঙ্কান এই কোচ যতোটা না কোচ ছিলেন, তার চেয়ে বেশি ছিলেন কড়া হেড মাস্টার। তার সাথে তুলনা করতে গেলে স্টিভ রোডসকে মনে হচ্ছে মুশফিকদের বন্ধুজন।

চান্দিকার বিদায়ের পর নতুন খুঁজে পেতে বিসিবির লেগে গেছে প্রায় এক বছর। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাথে সংশ্লিষ্টরা মাশরাফি-সাকিবদের জন্য চাচ্ছিলেন চান্দিকার মতো কড়া হেড মাস্টারই। স্টিভ রোডস যখন নতুন আসেন, তখন তার মধ্যে সেই চরিত্রের প্রকাশই ছিলো প্রত্যাশিত। কিন্তু রোডস প্রকাশ্যে এলেন তার বন্ধুতার হাত বাড়িয়ে। চান্দিকাকে যেখানে সংবাদ মাধ্যমের সামনেও পরে থাকতে দেখা গেছে পেশাদারিত্বের অদৃশ্য মুখোশ, রোডস সেখানে মিটিয়েছেন সাধারণ ভক্তদের সাথে সেলফি তোলার আবদার!

যতো দিন যাচ্ছে, দুজনের চরিত্রের বৈসাদৃশ্য ততো স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এতে অবশ্য ক্ষতির কিছু দেখছেন না ক্রিকেটাররা। এক দিন আগে কোচের সাথে সম্পর্কের রসায়নটা দারুণ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় দলের তরুণ পেসার আবু জায়েদ রাহি। একদিন পর কোচকে প্রশংসায় ভাসালেন মেহেদি হাসান মিরাজ।

২৭ আগস্ট থেকে এশিয়া কাপ সামনে রেখে চলছে বাংলাদেশ দলের অনুশীলন। মঙ্গলবার, অনুশীলনের দ্বিতীয় দিন সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হন মিরাজ। এ সময় তাকে নতুন কোচ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'ওয়েস্ট ইন্ডিজে কোচের সাথে আমাদের তেমন কাজ করা হয়নি। এখন সে আমাদের নিয়ে অনেক ব্যস্ত, যার যার যেই সমস্যা সেই সমস্যা অনুযায়ী কাজ করছে। আমরা তার সাথে অনুশীলন খুবই উপভোগ করছি। সবাইকে অনেক সাহায্য করছে। খুব ভালো লাগছে।'

স্টিভ রোডসের সাথে বিসিবির চুক্তি ২০২০ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত। লম্বা এই সময়টা শুধু জাতীয় দলের সাথে নয়, বরং 'এ' দল ও বয়সভিত্তিক পর্যায়ের দল নিয়েও নানা কাজ করবেন রোডস। একই সাথে ঘরোয়া ক্রিকেটের কাঠামোগত উন্নয়নেও তার অংশগ্রহণের কথা রয়েছে।

রোডস বাংলাদেশের দায়িত্ব নেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের ঠিক আগে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে পরপর দুই টেস্টে ক্যারিবীয়দের কাছে নাস্তানাবুদ হওয়ার মাধ্যমে তার কোনো আন্তর্জাতিক দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব শুরু হয়। পরে অবশ্য একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে টেস্টের ক্ষতে কিছুটা হলেও প্রলেপ দেয়ার সুযোগ পান তিনি।

রোডসের কোচিংয়ের দর্শন সম্ভবত খেলোয়াড়ের সঙ্গে বন্ধুতাপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে তাদের সেরাটা বের করে নেয়া। এই দর্শনে বাংলাদেশে রোডস কতোটা সফল হবেন, তা বলে দিবে সময়। তবে আপাতত বন্ধুজনের ভূমিকা নিয়ে জায়েদ-মিরাজদের কাছে রোডসের প্রিয় হয়ে উঠাও দারুণ তাৎপর্যপূর্ণ।