বাংলাদেশ কোনো যুদ্ধ বা বিবাদ ছাড়াই মিয়ানমারের মানুষের তৈরি নিকৃষ্টতম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। রোহিঙ্গা শিবির করার জন্য ইতিমধ্যে ছয় হাজার একর জমির গাছ-পালা কেটে ফেলা হয়েছে, যে জমির মূল্য ৭৪১ কোটি ৩১ লাখ টাকা বা আট কোটি ৬৬ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। রবিবার ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স-বাংলাদেশের (আইসিসিবি) ত্রৈমাসিক বুলেটিনের সম্পাদকীয়তে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।

iccb international chamber of commerce

তারা জানায়, রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুরা বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং সার্বিক নিরাপত্তার ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। সেই সাথে এ সংকটের ফলে বাংলাদেশের পরিবেশ এবং জলবায়ুর ওপর প্রতিকূল প্রভাব পড়েছে।

মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশের সাথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যে চুক্তির আওতায় ক্রমাগতভাবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করা হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ আনুষ্ঠানিক চুক্তির অধীনে একজন রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুও স্বদেশে ফিরে যায়নি, জানায় আইসিসিবি।

সংগঠটির মতে, যারা স্বদেশে ফিরেছে তাদের অনেককেই আটকে রাখা হয়েছে। এ বছর জানুয়ারি এবং এপ্রিলের মধ্যে যে ৫৮ জন রোহিঙ্গা স্বদেশে ফিরেছিলেন তাদের সবাইকে আটক করা হয়েছিল এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।

তাদের পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার আওতায় আনা হয়। কিন্তু এ ক্ষমার আওতায় তাদের বুথিডং কারাগার থেকে তথাকথিত ’রিসেপশন সেন্টারে’ স্থানান্তর করা হয়। সুতরাং, বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় খোঁজা অব্যাহত থাকে।

জাতিসংঘের মহাসচিব গত ২ জুলাই বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন। শিবির ঘুরে আসার পর মহাসচিব বলেন, গত বছরের আগস্ট মাস থেকে মিয়ানমারে যা ঘটেছে তা সম্ভবত বিশ্বে সুসংঘবদ্ধ মানবাধিকার লঙ্ঘনের যত নজির আছে তার মধ্যে সবচেয়ে মর্মান্তিক।

জাতিসংঘের মহাসচিবের সাথে বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম ছিলেন। তিনি রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের সাহায্যার্থে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার অনুদান সহায়তার ঘোষণা দেন। বিশ্বব্যাংক প্রধান সবাইকে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান, যাতে তারা মর্যাদাপূর্ণ জীবন পেতে পারে।

মিয়ানমার সেনাবাহিনী দিয়ে রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূলের জন্য ব্যাপকভাবে আন্তর্জাতিক নিন্দার সম্মুখীন হয়েছে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কার্যকর পদক্ষেপ কিছুই নেয়া হয়নি। আট বছরের মধ্যে গত বছর সেপ্টেম্বরে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদের একটি খসড়া প্রস্তাবনা চীনের ভেটোর কারণে বাধাগ্রস্ত হয়, উল্লেখ করে আইসিসিবি।

সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্য মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সাথে সব ধরনের কর্মসূচি সাময়িকভাবে স্থগিত ঘোষণা করে। অক্টোবরে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাদের আমন্ত্রণ জানানো স্থগিত করে এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় সহযোগিতা পুনর্বিবেচনার প্রস্তুতি নেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় অনুষ্ঠিত সব কার্যক্রমে মিয়ানমারের বর্তমান এবং প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তাদের আমন্ত্রণ জানানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

ইউএনএইচসিআর ডিসেম্বরে বিশেষ অধিবেশনের আয়োজন করে। তারা রোহিঙ্গাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন এবং তদন্ত মিশনের মিয়ানমার ভ্রমণের অনুমতি না পাওয়ায় নিন্দা জানায় এবং মিয়ানমার সরকারকে ঘটনার মূল কারণ উদঘাটন করার আহ্বান জানায়।

এছাড়া ডিসেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ওআইসি ও অন্যান্য সংস্থার একটি খসড়া প্রস্তাব গ্রহণ করে। যেখানে রোহিঙ্গাদের ওপর সামরিক অভিযান বন্ধ, অবাধে মানবিক সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা, রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের নিজ বাসভূমিকে স্বেচ্ছায় ও স্থায়ীভাবে ফেরত নিয়ে আসা এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পূর্ণ নাগরিকত্বসহ মানবাধিকার এবং মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

আইসিসিবি আরো জানায়, রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশে বহুমাত্রিক সমস্যার সৃষ্টি করেছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে এবং তাদের নিত্য প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সংকট মোকাবেলার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বাংলাদেশকে সহায়তা করা আবশ্যক।

বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সহানুভূতি পাচ্ছে কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে রোহিঙ্গারে নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান হচ্ছে না। সুতরাং, কোনো সময় ক্ষেপণ না করে যাতে রোহিঙ্গারে পূর্ণ নাগরিকত্ব এবং নাগরিক স্বাধীনতা দিয়ে সসম্মানে মিয়ানমার ফিরিয়ে নেয় এ বিষয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।

জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু বাংলাদেশে এসেছে। তাদের একটা বড় অংশ হচ্ছে নারী ও শিশু। সেই সাথে নবজাতক এবং বৃদ্ধ জনগণও রয়েছে, যাদের বাড়তি সুবিধা এবং নিরাপত্তার প্রয়োজন।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.