‘অঘোষিত’ পরিবহন ধর্মঘট দ্বিতীয় দিনে, বেড়েছে দুর্ভোগ

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষর্থীদের চলমান আন্দোলনের মধ্যেই পাল্টা জবাব হিসেবে সারাদেশে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘটের টানা দ্বিতীয় দিনে শনিবার সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন বাস টার্মিনালসহ দেশের বিভন্ন জেলা থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ ছিল।

রাজধানীর মহাকালী, গাবতলী এবং সায়েদাবাদ থেকে বাস চলাচল বন্ধ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দারুস সালাম থানার ওসি সেলিম-উজ-জামান এবং যাত্রাবাড়ী থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ। বাস না ছাড়ার কারণ প্রসঙ্গে গাবতলী বাস টার্মিনালে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাস চালক জানান, মালিকরা তাদের বাস চালাতে নিষেধ করেছেন।

প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন অনুযায়ী ময়ময়সিংহ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকামুখী কোনো বাস ছাড়েনি।

এদিকে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ঢাকাগামী যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, পিকআপ এবং বিভিন্ন পরিবহন ব্যবহারে যাত্রীরা গন্তব্যে ছুটছেন। এর জন্য তাদের গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।

গণপরিবহন বন্ধ থাকায় রাজধানীবাসীও দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বিশেষ করে অফিসগামী যাত্রীদের বেশি ভাড়ায়, পায়ে হেঁটে এবং বিভিন্ন বিকল্প উপায়ে জীবনের রিস্ক নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জানান, যানবাহন ভাংচুরের প্রতিবাদে এবং জীবনের নিরাপত্তার অজুহাতে শনিবারও ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাসহ আঞ্চলিক রুটের সব ধরণের বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন মালিক সমিতি ও পরিবহণ শ্রমিক নেতারা। তবে দিনের বেলায় শিক্ষার্থীরা রাস্তায় থাকার কারণে বাস চালানো বন্ধ রাখলেও সন্ধ্যার পর বাস চলবে জানান মাসকান্দা বাস টার্মিনাল সুপারভাইাজার মিলন মিয়া।

তিনি জানান, ঢাকায় শিক্ষার্থীদের হাতে একের পর এক যানবাহন ভাংচুরের প্রতিবাদে এবং চালক ও যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

নাটোর প্রতিনিধি জানান, সকাল থেকে যাত্রীরা শহরের হরিশপুর বাস টার্মিনাল, মাদ্রাসা মোড় বাসস্ট্যান্ড, বাইপাস বাসস্ট্যান্ড, পিটিআই বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও বাসের সন্ধান না পেয়ে ছোট ছোট যানবাহনে চেপে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছেন। পরিবহন চালকদের নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে শুক্রবার সকাল থেকে নাটোর থেকে সকল রুটের যান চলাচল বন্ধ করে দেয় মালিক-শ্রমিকরা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় দুরপাল্লার নৈশ কোচগুলো গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেলেও শনিবার সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে দুরপাল্লার রুটে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। জেলার অভ্যন্তরীণ রুটেও বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক আনার জানান, নিরাপদ সড়কের ব্যাপারে আমরাও সোচ্চার। কিন্তু দেশের বিভিন্ন স্থানে গাড়ি ভাংচুর হওয়ায় নিরাপত্তাজনিত কারণে দিনে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন মালিক ও শ্রমিকরা। তবে রাতে গাড়ি চলবে।

গত ২৯ জুলাই রাজধানীতে চলাচলরত জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস শহীদ রমিজউদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া খানম মীম এবং আব্দুল করিম রাজীবকে চাপা দেয়া। দুই চালকের রেষারেষির কারণে ঘটা এ দুর্ঘটনায় রাজধানীর ওই এলকায় বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা বেশকিছু বাস ভাঙচুর করে।

পরবর্তীতে এই দুর্ঘটনা নিয়ে পরিবহন ও শ্রমিক নেতা নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের মন্তব্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোসের জন্ম নেয়। এর পর থেকেই নৌমন্ত্রীর পদত্যাগ ও নিরাপদ সড়কমহ কযেকদফা দাবিতে রাজধানীসহ সারাদেশে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করে আসছে।

টানা কয়েকদিনের আন্দোলনের মুখে সরকারের তরফ থেকে শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দেয়া হয় এবং তাদের শ্রেণিকক্ষে ফেরার অনুরোধ জানানো হয়।

এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নিয়ে তাদের ঘরে ফেরার প্রত্যাশা প্রকাশের পরদিন বন্ধ হয়ে যায় বিভিন্ন রুটে দূরপাল্লার বাস চলাচল। ইউএনবি।