মহানাটকীয় জয়ে নেপালের ইতিহাস

ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে নিজেদের প্রথম জয়। ঐতিহাসিক জয়ের জন্য একটু কষ্ট তো করতেই হবে। তাই বলে এভাবে; স্নায়ুচাপের চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়ে! হ্যাঁ, এমনই অভিজ্ঞতা হলো নেপালের। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলো তাদের। যার শেষটা হলো উৎসবে।

মহানাটকীয় লড়াইয়ের নিষ্পত্তি হলো ম্যাচের শেষ বলে; এক রানের ব্যবধানে! ডাচদের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় তুলে নিল নেপালীরা। শুক্রবার থ্রিলার ম্যাচের স্নায়ুক্ষয়ী এই জয়ে ইতিহাস গড়ে ফেলল নেপাল; দুই ম্যাচ সিরিজ তারা শেষ করল ১-১ ব্যবধানে।

শুক্রবার আমস্টেলভিনে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের সাত বল বাকি থাকতে ২১৬ রানে গুটিয়ে যায় নেপাল। জবাব দিতে নেমে ইনিংসের শেষ বলে ২১৫ রানে অলআউট হয়ে যায় স্বাগতিক নেদারল্যান্ডস।

নেপালের শুরুটা মন্দ ছিল না। উদ্বোধনী জুটিতে স্কোর বোর্ডে ২৯ রান জমা করে সফরকারীরা। জুটিটা আলাদা হতেই ছন্দ হারায় নেপালীরা। ৮৮ রানের মধ্যে পাঁচ উইকেট নেই তাদের। দলীয় ১৩৫ রানে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফিরে যান পরশ খাদকা।

সাজঘরে ফেরার আগে নেপালের অধিনায়ক ছয়টি চার ও দুই ছক্কায় ৫১ রানের ইনিংস উপহার দিয়ে গেছেন দলকে। পরে অধিনায়কের দেখানো পথেই হাঁটলেন আট নাম্বারে ব্যাট করতে আসা সোমপাল কামি।

একপ্রান্তে যখন উইকেট পতনের মিছিল শুরু হয়ে যায় তখনই উত্তাল হয়ে ওঠে কামির ব্যাট। পাঁচটি চার ও তিন ছক্কায় ৪৬ বলে ৬১ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন তিনি। রাজসিক এই ইনিংসটাই কামির হাতে তুলে দিয়েছে ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

নেপালের ছুড়ে দেওয়া ২১৬ রানের জবাব দিতে নেমে শুরুতেই বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয় নেদারল্যান্ডস। ৩০ রানের মধ্যেই হারাতে হয় দুই উইকেট। সেখান থেকে দলকে ম্যাচে ফেরান ডিজে টার ব্রাক এবং ওয়েসলি বারেসি।

তৃতীয় উইকেটে এ যুগলের ৮৪ রানের জুটির ওপর দাঁড়িয়ে জয়ের সুবাসই পাচ্ছিল ডাচ শিবির। কিন্তু দারুণ খেলতে থাকা নেদারল্যান্ডস হঠাৎই পথ হারায়। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট খোয়াতে থাকে কমলা শিবির। ব্রাক আউট হয়েছেন ৩৯ রানে। ৭১ রানে ফিরে গেছেন বারেসি।

দুই উইকেটে ১১৪ রান থাকা নেদারল্যান্ডস ব্যাটিং অর্ডারে আচমকা ধস নামে। ১৮৫ রানে নয় উইকেট খুইয়ে পরাজয়ের ক্ষণ গুণছিল ডাচটা। কিন্তু শেষ উইকেটই উপহার দিল মহানাটক। নিশ্চিত হেরে যাওয়া ম্যাচে জয়ের সম্ভবনা জাগিয়ে তোলেন ক্লাসেন এবং মিকেরিন। দশম উইকেট দুজন মিলে করলেন ৩০ রান!

অথচ অনেক চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে এলেও মধুর সমাপ্তি টানতে পারেননি। দুজনই বাইশ গজ ছেড়েছেন আক্ষেপ নিয়ে। এই আক্ষেপ শেষ ছয় রানের সমীকরণটা মেলাতে না পারার। তবে প্রথম চার বলে চার রান নিয়ে ফেলেছিল ডাচরা। শেষ দুই বলে ডাচদের রুখে দিয়ে ইতিহাস গড়ে ফেলে নেপালীরা।

ম্যাচের শেষ বলে রান আউট ভাগ্য বরণ করতে হলো ক্লাসেনকে। ১৩ রানে ফিরেছেন তিনি। তার সঙ্গী মিকেরিন অপরাজিত ছিলেন ১২ রানে। নয় নাম্বারে ব্যাট করতে আসা স্নেটার ১২ বলে ১২ রানে ফিরেছেন।

নেদারল্যান্ডসের ব্যাটিংয়ে ধস নামাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন বহুল আলোচিত স্পিনার সন্দিপ লামিচানে। তিন উইকেট তুলে নিয়েছেন তিনি। দুটি শিকার ললিত ভান্ডারির। এ ছাড়া নেপালের চারজন একটি করে উইকেট পেয়েছেন।