নিজেকে ফিরে পাচ্ছেন মার্শাল আইয়ুব

তুমুল সম্ভাবনা জাগিয়ে জাতীয় দলে ঢুকেছিলেন মার্শাল আইয়ুব। তার মতো অভিজ্ঞতা নিয়ে জাতীয় দলে ঢোকার ইতিহাস খুব বেশি নেই। অন্তত বাংলাদেশের বেলায় তো নয়ই। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বয়ে আনতে পারেননি তিনি। ফলে যা হবার তাই হয়েছে। ছিটকে পড়তে হয়েছে তাকে। হয়তো হারিয়েই যেতেন তিনি। কিন্তু তা হয়নি। স্বভাবজাত ব্যাটিং প্রতিভা, দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং পরিশ্রমের ফলে আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন তিনি। জাতীয় লিগের ১৭তম আসরের দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে পরপর দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছেন মার্শাল। তার ব্যাটে চড়েই সম্মানজনক ড্র পেয়েছে ফলোঅনে পড়া ঢাকা মহানগর। মার্শাল পেয়েছেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। শুধু পুরস্কারই না, মার্শাল পেয়ে গেছেন আরো একটা জিনিস- আÍবিশ্বাস। গতকাল মিরপুরে টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরির পর সংবাদ মাধ্যমের সামনে এসে তিনি বলেন, 'দুই বছর আগে আমার আÍবিশ্বাস যেমন ছিলো, এখন আবার নিজের ভেতর সেই আÍবিশ্বাসের অস্তিত্ব টের পাচ্ছি। টানা দুটি সেঞ্চুরি করতে পারলে যে কোনো ব্যাটসম্যানের আÍবিশ্বাস বেড়ে যাবে। আমারও তা হয়েছে। আশা করি সামনে ভালো কিছুই হবে।'

মার্শাল যে 'ভালো কিছু'র কথা বলছেন তা নিঃসন্দেহে জাতীয় দলের সিংহদরজা দিয়ে ঢুকে পড়া। কিন্তু কাজটা যে সহজ নয় তাও মানেন মার্শাল। তার মতে, বর্তমানের বাংলাদেশ দল যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। হয়তো নিজেদের ইতিহাসের সেরা দল এটিই। এই দলে সুযোগ পাওয়া তাই বড্ড কঠিন ব্যাপার। মার্শাল বলেন, 'আমি জানি দলে ঢোকা এখন কতোটা কঠিন। আমি তাই জাতীয় দলে ঢোকা নিয়ে ভাবছি না। আপাতত জাতীয় লিগের শুরুটা ভালো করতে চেয়েছিলাম। সেটা হয়েছে। সামনে আরো অনেকগুলো ম্যাচ আছে। সেখানেও এই পারফর্ম ধরে রাখতে চাই।' নিজের চিন্তা বিক্ষিপ্ত না করে কেবল রান করে যেতে চান মার্শাল।

জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার হতাশায় বহু প্রতিভা হারিয়ে গেছে মহাকালের অন্তহীন স্রোতে। কিন্তু মার্শাল তাদের মতো ভেসে যাননি। উল্টো স্রোতের বিপরীতে সাঁতরে খুঁজে ফিরেছেন নিজের চূড়ান্ত সীমানা, হাতড়ে বেরিয়েছেন সাফল্যের অনন্ত প্রান্তর। কিন্তু পুরোপুরি তিনি তা পারেননি। তাই বলে আটকেও থাকেননি ব্যর্থতার চোরাবালিতে। যখনই যেখানে সুযোগ পেয়েছেন, চেষ্টা করেছেন ব্যাটে রানের ফুলঝুড়ি ফোটাতে। রান করার এই ক্ষমতা কোথায় পান তিনি? জানা যাক তার কথা থেকেই, 'নিজের জন্য খেলতে চাই আমি। সেখানে সাফল্য পেলে আশপাশে সুযোগ এসে পড়ে। আমার কাছে নিজের জন্য খেলাটাই বড় ব্যাপার। নিজের সাফল্যই নিশ্চিত করতে পারে দলের সফলতা।'

মার্শাল আইয়ুবের এই নতুন দর্শনটাই যেনো ঘুরে বেড়াচ্ছে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলা ব্যাটসম্যানদের মনে। আগে দেখা যেতো পুরো আসরে দুই-তিনটা সেঞ্চুরি হতো। কিন্তু সেই ধারা বদলে গেছে। চলমান জাতীয় লিগের সদ্য সমাপ্ত দ্বিতীয় রাউন্ডেই সেঞ্চুরি হয়েছে দশটি! ব্যাটসম্যানদের এমন রান-প্রেম বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্যই ইঙ্গিত দিচ্ছে দারুণ কিছুর- মনে করেন মার্শাল। একটা সময় দারুণ কিছুর ইঙ্গিত ছিলো মার্শালের ব্যাটেও। এখন পর্যন্ত প্রথম শ্রেণির ৮৮ ম্যাচে ১২টি সেঞ্চুরি এবং ২৪টি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। এই পরিসংখ্যানই বলে দেয় মার্শালের হাতে ব্যাটটা কতোটা চওড়া। নিজেকে হারিয়ে খুঁজে ফেরা মার্শাল কি পারবেন আবার জাতীয় দলের ড্রেসিংরুমে নিজের জায়গা বানাতে?

আপনি আরো পড়তে পারেন

ষড়যন্ত্রের শঙ্কায় পাপন

একসাথে দুই লজ্জা পেলো ভারত

দ. আফ্রিকা-জিম্বাবুয়ে সফরের জন্য ‘এ’ দল ঘোষণা