সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার পরও নিরাপদ সড়ক এবং নৌমন্ত্রীর পদত্যাগসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে বৃহস্পতিবার সড়ক দখল করে বিক্ষোভ, মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা। তাদের বিক্ষোভ-সমাবেশে উত্তাল হয়ে উঠেছে সারাদেশের সড়ক মহাসড়ক।

student protests at motijheel

গত রোববার ঢাকার শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে টানা পাঁচদিনের মতো বিক্ষোভ করছেন তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা দেয়ার পরও ছাত্রছাত্রীরা ইউনিফর্ম পরে রাস্তায় বেরিয়ে এসে বিক্ষোভে অংশ নেয়।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। তারা বিভিন্ন যানবাহনের কাগজপত্র পরীক্ষা করে সেগুলোকে সড়কে চলাচলের সুযোগ দেন। যেসব যানবাহনের প্রয়োজনীয় কাগজ নেই সেগুলোকে আটকে পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সপোর্দ করেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্যের গাড়িও আটক করেন। বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের এমন কার্যক্রম অব্যাহত ছিল।

এছাড়া নিরাপদ সড়ক ও দুই শিক্ষার্থীকে বাস চাপা দেয়া ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে নওগাঁর শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। শহরের মুক্তির মোড় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে প্রধান সড়কে এই মানববন্ধন কর্মসূচি হয়।

সকাল সাড়ে ১০টায় শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, জিলা স্কুল, পিএম বালিকা উচ্চ নবিদ্যালয়, সেন্ট্রাল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নওগাঁ সরকারী কলেজ, সরকারী মহিলা কলেজ, পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউটসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এই মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করে।

বরগুনায় নিরাপদ সড়কসহ ৯ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেছেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী। সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত টানা অবরোধের পর বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাকের হস্তক্ষেপে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করে শিক্ষার্থীরা।

সকালে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বরগুনা প্রেসক্লাব চত্বরে বরগুনা সরকারি কলেজ, বরগুনা সরকারি মহিলা কলেজ, বরগুনা জিলা স্কুলসহ বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা সমবেত হতে থাকে। এরপর সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বরগুনা টাউনহল বাসস্টান্ডে গিয়ে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন।

এসময় বরগুনার অভ্যন্তরীন সকল রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় তারা। সড়ক অবরোধ চলাকালীন সময় মটোর সাইকেল, প্রাইভেটকার, বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনের বৈধ কাগজ ও চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করেন।

পুলিশ সুপার বিজয় বসাক জানান, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনের সাথে পুলিশ প্রশাসন আছে। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছি এবং তারা আমাদের কথায় গুরুত্ব দিয়ে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করেছে। এজন্য আমি তাদেরকে সাধুবাদ জানাচ্ছি।

এদিকে বৃহস্পতিবার সাড়ে ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত ঠাকুরগাঁও শহরের চৌরাস্তা মোড়ে অবস্থায়ন নেয় শিক্ষার্থীরা। শহরের বেশ কয়েকটি স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে।

এসময় শিক্ষার্থীরা বেশ কয়েকটি ট্রাকের চালকের লাইসেন্স পরীক্ষা করেন। কাগজপত্র না থাকায় একটি ট্রাক ও চালককে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী উৎস বলেন, নিরাপদ সড়ক ও নৌমন্ত্রীর পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবি করেছে শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, নৌমন্ত্রীকে শুধু ক্ষমা চাইলেই হবে না। তাঁকে নৌমন্ত্রণালয়সহ সড়ক পরিবহনের নেতৃত্ব ছাড়তে হবে।

ঠাকুরগাঁও সদর থানার আব্দুল লতিফ মিঞা জানান, লাইসেন্স বিহিন একটি ট্রাক হস্তান্তর করেছে শিক্ষার্থীরা। হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, নিরাপদ সড়ক ও বাসচাপায় শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় দায়ীদের বিচার দাবিতে হবিগঞ্জে বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় শহরে মিছিল করে তারা। পরে বৃন্দাবন সরকারী কলেজের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা বিভিন্ন যানবানের চালকদের লাইসেন্স যাচাই করে।

সমাবেশের এক পর্যায়ে যানবহনের চালকদের লাইসেন্সসহ ফিটনেস না থাকায় উত্তেজিত হয়ে রাস্তা অবরোধ করে তারা। একই সময় ভাদৈ ও ধুলিয়াখাল এলাকায় হবিগঞ্জ-শায়েস্তাগঞ্জ আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। এদিকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও (শাবিপ্রবি) মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।

বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয় গেটে মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে নগরীর পাঠানটুলা এলাকা ঘুরে আবার বিশ্ববিদ্যালয় গেইটে গিয়ে শেষ হয়। আর শাবি গেইটের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করে শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এসময় তারা ঢাকায় শিক্ষার্থী নিহত ও আন্দোলরতদের উপর হামলার প্রতিবাদ এবং নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার দাবি জানায়।

যশোর প্রতিনিধি জানায়, বাসচাপায় শিক্ষার্থী নিহতের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার মধ্যেই যশোরের শিক্ষার্থীরা সড়কে নেমে এসেছে। তারা নয় দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে নানা স্লোগান দেয়। হাতে ছিল দাবি-দাওয়া সম্বলিত প্ল্যাকার্ড। তারা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও সড়কে বিচ্ছিন্নভাবে অভিন্ন দাবিতে মিছিল করে।

যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন মহা বিদ্যালয়, সরকারি সিটি কলেজ, ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, বিসিএমসি, শাহীন কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা স্লোগানে স্লোগানে শহর প্রকম্পিত করে তোলে। এরপর সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা প্রেসক্লাব যশোরের সামনে অবস্থান নেয়।

 এদিকে পটুয়াখালীতে বিক্ষোভ মিছিল করে সড়ক অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে ১১টায় শহরের চৌরাস্তা এলাকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নিয়ে নৌমন্ত্রীর পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবির পক্ষে শ্লোগান দেয়।

এতে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটাগামী যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুই ঘণ্টা বন্ধ থাকার পরে পুলিশের মধ্যস্ততায় শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে নিয়ে শহরের গুরুত্ব পূর্ণ সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে। পরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে সমাবেশ করে শিক্ষার্থীরা।

পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান জানন, শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ মিছিল সমাবেশ করেছে। মহাসড়ক থেকে তারা পুলিশের অনুরোধে অবরোধ তুলে নিয়েছে। এখন মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, বৃহস্পতিবার টাঙ্গাইলে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু মহাসড়ক অবরোধ করে। পরে পুলিশ প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে তারা অবরোধ তুলে নেয়। টাঙ্গাইল শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সকাল ১১টার দিকে শহরের শহীদ মিনার চত্বরে অবস্থান নেয়। সেখান থেকে বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে তারা ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু মহাসড়কের আশেকপুরে গিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় মহাসড়কের উভয় পাশে অসংখ্য যানবাহন আটকা পড়ে।

এসময় শিক্ষার্থী বিভিন্ন গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস সার্টিফিকেট ও ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের নিষেধ করে। পরে পুলিশ প্রশাসনের অনুরোধে তারা অবরোধ তুলে নেয়।

টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আহাদুজ্জামান মিয়া বলেন, শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে সড়ক অবরোধ করেছিল। আবার আন্দোলন শেষে তারা যার যার প্রতিষ্ঠানে চলে গিয়েছে। ইউএনবি।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.