যে ৫ কারণে বর্ষসেরা হচ্ছেন না মেসি

পাঁচবারের বর্ষসেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি। তন্মধ্যে টানা চারবার আর্জেন্টিনা সুপারস্টার জিতেছেন ব্যালন ডি’অর। কিন্তু শ্রেষ্ঠত্বের সংখ্যাটা ছয়ে নিতে পারছেন না মেসি। গত দুই বছর ধরেই ব্যালন ডি’অর জিতে আসছেন তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো।

হারানো রাজত্ব উদ্ধার করতে মেসিকে এবার শুধু রোনালদোই নয়, লড়তে হবে আরো কয়েকজনের সঙ্গেই। ফুটবলবোদ্ধা প্রায় সবার মতে এবারো মেসির ব্যালন ডি’অর জেতার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। মেসি বর্ষসেরা ফুটবলার না হলে সেটাও বিস্ময়কর কিছু হবে না। কেন এ বছর বর্ষসেরা হতে পারবেন না মেসি এর পাঁচটি কারণ পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো-

এমবাপ্পে এবং মডরিচ হুমকি: এ বছর ব্যালন ডি’অর জয়ের দৌড়ে রোনালদো, মেসিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে এবং লুকা মডরিচ। ক্লাব পর্যায়ে দুজনই দুর্দান্ত একটা মৌসুম শেষ করেছেন। এমবাপ্পে পিএসজির হয়ে জিতেছেন ফ্রেঞ্চ ফুটবলের ট্রেবল শিরোপা। অন্যদিকে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ট্রফি জিতেছেন মডরিচ।

শুধু ক্লাব নয়, জাতীয় দলের হয়েও এ বছর দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন এ যুগল। কদিন আগে শেষ হওয়া রাশিয়া বিশ্বকাপে তো আলাদাভাবেই সবার নজড় কেড়েছেন তারা। ফাইনালে হেরে গেলেও মডরিচ জিতে নিয়েছেন বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার তথা গোল্ডেন বল। এমবাপ্পের হাতে উঠেছে আবার সেরা তারুণ্যের স্বীকৃতি।

ফ্রান্সের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়ে সামনে থেকে পারফর্ম করেছেন এমবাপ্পে। নকআউট পর্ব ও ফাইনালের মতো মহা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে গোল করেছেন ফ্রেঞ্চ তরুণ তুর্কি। মডরিচ অবশ্য ফাইনালে গোল করতে পারেননি। তবে ক্রোয়েশিয়ার মতো একটা দলকে স্বপ্নের ফাইনালে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদানটা এই মডরিচের যা তাকে ব্যালন ডি’অরের লড়াইয়ে ভালোভাবেই রাখছে।

পক্ষান্তরে, এ বছর বার্সেলোনার হয়ে দুটি শিরোপা জিতেছেন মেসি। দুটোই স্প্যানিশ ফুটবলে। আর জাতীয় দল আর্জেন্টিনার হয়ে শেষ ষোলোতে থেমে গেছে মেসির পথচলা। তা ছাড়া রাশিয়ার মঞ্চে মডরিচ, এমবাপ্পের মতো দারুণকিছু করতে পারেননি তিনি। অথচ ব্যালন ডি’অর নির্ধারণে এবার বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠছে রাশিয়া বিশ্বকাপ। তাই বলা বাহুল্য এখানে তাদের সঙ্গে পেরে উঠছেন না মেসি।

পুরনো হুমকি রোনালদো: এমবাপ্পে ও মডরিচ তো বটেই, ব্যালন ডি’অর জয়ের দৌড়ে মেসির আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী রোনালদো। গত মৌসুমে আগুন ঝরিয়েছেন পর্তুগিজ উইঙ্গার। রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে তো অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিলেন ‘সিআর সেভেন’। এ বছর ২৯ ম্যাচে ৩৪ গোল করেছেন রোনালদো। সঙ্গে ছয়টি অ্যাসিস্টও আছে তার। সবচেয়ে বড় অর্জন দলীয় প্রাপ্তি হিসেবে রোনালদোর পুঁজি আছে চ্যাম্পিয়নস লিগের ট্রফি। এসবকিছুই মেসির চেয়ে এগিয়ে রাখছে রোনালদোরকে।

চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি নেই: গত পাঁচ আসরের চারটিতেই উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ী ফুটবলারের হাতে উঠেছে ব্যালন ডি’অরের স্বীকৃতি। কিন্তু এ বছর মেসির নামের পাশে যুক্ত হয়নি রূপালি ট্রফিটা যা সেরার দৌড়ে আর্জেন্টাইন সুপারস্টারকে অনেকটাই পিছিয়ে রাখছে।

এ বছর চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে এএস রোমার অলৌকিক প্রত্যাবর্তনে থেমে গেছে মেসির বার্সেলোনার পথচলা। একে তো শিরোপা জিততে পারেনি বার্সা, তারউপর ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে খুব একটা উজ্জ্বল ছিলেন না মেসি। এই টুর্নামেন্টে বিদায় মৌসুমে মাত্র ছয়টি গোল করেছেন মেসি। কিন্তু তার চেয়েও বেশি গোল করেছেন রোনালদো এবং লিভারপুলের দুই তারকা মোহাম্মদ সালাহ ও রবার্তো ফিরমিনো।

মেসির বিশ্বকাপ ব্যর্থতা: ব্যালন ডি’অরের লড়াইয়ে মেসির শক্ত যে কজন প্রতিদ্বন্দ্বী আছেন তাদের প্রত্যেকেই হয় বিশ্বকাপ নতুবা চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছেন। এই দুটোর একটিও অর্জন করতে পারেননি মেসি। তবে বার্সার হয়ে ইউরোপিয়ান সর্বোচ্চ টুর্নামেন্ট জিততে না পারলেও রাশিয়া বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার হয়ে সেই শূন্যতাটা পুষিয়ে নেয়ার সুযোগ ছিল মেসির।

কিন্তু সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি পাঁচবারের বর্ষসেরা ফুটবলার। শেষ ষোলোতে ফ্রান্সের কাছে ৪-৩ গোলে হেরে বিদায় নিয়েছেন মেসি অ্যান্ড কোং। মেসিদের নকআউট পর্বে ওঠা নিয়েও তো দেখা দিয়েছিল সংশয়। অনেক সমীকরণ মেলানোর পর গ্রুপের শেষ ম্যাচে বাজিমাত করেছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। পরের ম্যাচেই চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের কাছে ধরাশায়ী হতে হয় মেসিদের।

পালা বদলের উপযুক্ত সময়: লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর আগে সবশেষ ২০০৭ সালে ব্যালন ডি’অর জিতেছিলেন ব্রাজিলের কিংবদন্তি মিডফিল্ডার কাকা। এরপর থেকেই শুরু হয় দুই ঘোড়ার প্রতিযোগিতা। গত দশ বছর ধরে ঘুরে ফিরে এ দুজনের একজনের হাতেই উঠছে সেরার স্বীকৃতি। দুজনই সমান পাঁচবার করে জিতে নিয়েছেন ব্যালন ডি’অর।

এবারের লড়াইটা মেসি-রোনালদোর জন্য একে অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার। কিন্তু মেসি তো বটেই, এবার সংশয় দেখা দিয়েছে খোদ রোনালদোকে নিয়েও! কারণ এ বছর তাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়ার মতো কয়েকজন ফুটবলারই আছেন। ধারণা করা হচ্ছে এবার নতুন কারো হাতে উঠতে পারে বর্ষসেরা স্বীকৃতি। দুই সপ্তাহ আগে শেষ হওয়া রাশিয়া বিশ্বকাপ পালা বদলের সেই আভাস দিয়েছে।