বিচার না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে জাবালে নূর

শহীদ রমিজউদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনার বিচার বা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত জাবালে নূর পরিবহনের কোন বাস চলাচল করবে না। আজ ৩০ জুলাই, সোমবার পরিবহনটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এএইচএম নোমান এ খবর জানিয়েছেন। ফলে রাজধানীতে চলাচল করা পরিবহনটির ৬০টি গাড়ি পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।

প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা হওয়ার পর এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলছি। যেহেতু একজন বাবা মামলা করেছে, তাই প্রশাসনের মাধ্যমে আমরা নিহতদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। ঘটনার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কোনো গাড়ি চলবে না।’

আব্দুল্লাহপুর-মিরপুর ও মিরপুর-নতুন বাজার রুটে চলাচল করা জাবালে নূর পরিবহনের যাত্রীদের অভিযোগ, সিটিং ভাড়ার নাম করে স্বল্প দূরত্বের পথেও সর্বনিম্ন ২৫ টাকা ভাড়া নেয় পরিবহনটি। ভাড়া আদায়ের সময় সিটিং বলা হলেও লোকাল বাসের মতো সেবা দেয় তারা। এ ছাড়া পরিবহনটির চালক-হেল্পাররা বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো থেকে শুরু করে যেখানে-সেখানে পার্কিং এবং ওভারটেকিং করে বলেও অভিযোগ আছে। 

প্রসঙ্গত, গতকাল ২৯ জুলাই কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনের বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাসের চাপায় শহীদ রমিজউদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হয় এবং আরও ১২ শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। নিহত দুই শিক্ষার্থী হলেন শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম এবং একই কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী খানম ওরফে মীম। এ ঘটনায় নিহত মিমের বাবা জাহাঙ্গীর ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

সহপাঠীর মৃত্যুতে সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের নয় দফা দাবি পেশ: দুই সহপাঠীর মৃত্যুতে শহীদ রমিজউদ্দিন কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে ঘটনার বিচার দাবি করে নয় দফা দাবি পেশ করেছেন।

আজ দিনভর বিমানবন্দর সড়কে বিক্ষোভ শুরু হলে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এসে তাতে সংহতি জানান এবং নয় দফা দাবি পেশ করেন। বিমানবন্দর সড়কের উভয় পাশে বিএএফ শাহীন কলেজ, ভাষানটেক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট, তেজগাঁও কলেজ, বাংলা কলেজ, সরকারি বিজ্ঞান কলেজসহ আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়।

দুই শিক্ষার্থী মৃত্যুর বিষয়ে নৌ-পরিহন মন্ত্রীর হাসতে হাসতে প্রতিক্রিয়া জানানোকে ‘বিদ্রুপ’ বলে দাবি করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী সাইদুল ইসলাম আপন বলেন, ‌‌‘যার সন্তান মারা গেছে, সে বোঝে সন্তান হারানোর কষ্ট কতটা। একজন মন্ত্রী হয়ে কী করে এই মৃত্যু নিয়ে বিদ্রুপ করতে পারে? এই মন্ত্রীর প্রশ্রয়ের কারণেই বাস চালকরা বেপরোয়া। আমরা এই মন্ত্রীর পদত্যাগ ও ঘাতক বাস চালকের ফাঁসি চাই।’

শিক্ষার্থীরা তাদের বিক্ষোভ থেকে নয় দফা দাবি পেশ করে জানিয়েছে, তাদের দাবি আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেনে নিতে হবে এবং তা পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে। দাবি মানা না হলে আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে তারা আবারও আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি হল-

এক. বেপোরোয়া ড্রাইভারকে ফাঁসি দিতে হবে এবং এই শাস্তি সংবিধানে সংযোজন করতে হবে। দুই. নৌ-পরিবহন মন্ত্রীর গতকালের বক্তব্য প্রত্যাহার করে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। তিন. শিক্ষার্থীদের চলাচলে এমইএস ফুটওভার ব্রিজ বা বিকল্প নিরাপদ ব্যবস্থা নিতে হবে। চার. প্রত্যেক সড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাতে স্পিড ব্রেকার দিতে হবে। পাঁচ. সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্র-ছাত্রীদের দায়ভার সরকারকে নিতে হবে। ছয়. শিক্ষার্থীরা বাস থামানোর সিগন্যাল দিলে, থামিয়ে তাদের বাসে তুলতে হবে। সাত. শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আট. ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচল বন্ধ ও লাইসেন্স ছাড়া চালকরা গাড়ি চালাতে পারবে না এবং ৯. বাসে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া যাবে না।