দক্ষিণ আফ্রিকাও এভাবে হারে!

গত ১২ মাসে খেলা ১৩ টেস্টের নয়টিতেই জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়াকে ঘরের মাঠে দুমড়ে মুচড়ে দেয়ার দারুণ স্মৃতিও আছে তাদের। সেই দক্ষিণ আফ্রিকা শ্রীলঙ্কায় এসে কি ধাক্কাটাই না খেলো! লঙ্কানদের কাছে তারা এমনভাবে হারলো, যেভাবে কেবল হারতে পারে নিচু সারির দলগুলো।

দক্ষিণ আফ্রিকার শ্রীলঙ্কা সফরের প্রথম ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয় গলে। সেখানে প্রোটিয়ারা প্রথম ম্যাচ হেরে গেছে আড়াই দিনেই। তাও ২৭৮ রানের বিশাল ব্যবধানে।

লঙ্কানদের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকা গুটিয়ে যায় মাত্র ১২৬ রানে। ভিন দেশে খেলতে এসে হঠাৎ একটা ইনিংসে এমন হতেই পারে ভেবে নিয়ে তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর অপেক্ষায় ছিলেন অনেকে। না হলে যে, টেস্ট ক্রিকেটের মজাটাই নষ্ট হয়ে যায়।

কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে ঘুরে দাঁড়ানো দূরে থাক, দক্ষিণ আফ্রিকা যেনো হয়ে গেলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের ‘বাংলাদেশ’। পরের ইনিংসে তারা করতে পারল মোটে ৭৩ রান! যা ১৯৯২ সালে ক্রিকেট থেকে স্বেচ্ছা নির্বাচন থেকে ফেরার পর প্রোটিয়াদের সর্বনিম্ন স্কোরের লজ্জা।

দুই ইনিংসের ব্যাটিং ব্যর্থতার চাপ সামলাতে গিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা গল টেস্ট হারে ২৭৮ রানে। এই হার প্রোটিয়াদের জন্য যতোটা বেদনার, ঠিক ততোটা আনন্দের স্বাগতিকদের জন্য। হয়তো তাদের আনন্দটা আরো বেশিই। কারণ এই টেস্টটা যে কোচ ও অধিনায়ককে ছাড়াই খেলতে হচ্ছে তাদের।

শ্রীলঙ্কার নিয়মিত অধিনায়ক দিনেশ চান্দিমাল ও কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহে আপাতত তাদের গত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের ভুলের মাশুল দিচ্ছেন। সেই সফরে বল টেম্পারিং করে অস্বীকার করা, পরে ধরা পড়ে যাওয়া এবং তার জেরে নেমে আসা শাস্তি ভোগ করছেন তারা। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) আপাতত দুই ম্যাচের জন্য চান্দিমালকে নিষিদ্ধ করেছে। দুই ম্যাচের নিষিদ্ধ করা হয়েছে চান্দিকা ও দলের ম্যানেজারকেও। চান্দিমাল তবু ড্রেসিংরুমে থাকতে পারবেন, কিন্তু ঘরের মাঠে খেলা হলেও, চান্দিকা আসতে পারবেন না মাঠেও!

এমন আশ্চর্য সময়ে পাওয়া এ রকম বড় জয় তো লঙ্কানদের আনন্দে ভাসাবেই। যে আনন্দটা হয়তো দিলরুয়ান পেরেরা। কারণ দুই ইনিংসে প্রোটিয়াদের ইনিংস ধসিয়ে দেয়ার মূল কাজটা তো করেছেন তিনিই।

ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে শ্রীলঙ্কা করে ২৮৭ রান। দিমুথ করুনারত্নের ১৫৮ রানের ইনিংসটিই এর মূল ভিত্তি। জবাব দিতে নেমে প্রোটিয়ারা গুটিয়ে যায় ১২৬ রানে। এই ইনিংসে চার উইকেট নেন দিলরুয়ান। ম্যাচের পরের ইনিংসে শ্রীলঙ্কা করে ১৯০ রান। এবার করুনারত্নে করেন ৬০।

প্রোটিয়াদের সামনে শেষ ইনিংসে দাঁড়ায় ৩৫১ রানের পাহাড়। যে পাহাড় টপকাতে গিয়ে আবার দিলুরুয়ানের স্পিনজালে আটকে পড়ে তারা। এবার ছয় উইকেট তুলে নেন তিনি। তিন উইকেট নেন রঙ্গনা হেরাথ ও একটি শিকার করেন লক্ষন সান্দাকান।

তুলনামূলক অনভিজ্ঞ শ্রীলঙ্কার কাছে দক্ষিণ আফ্রিকার এ রকম হার দেখে বিস্মিত না হয়ে উপায় কী! টেস্ট ক্রিকেট কি তাহলে ক্রমেই স্বাগতিকদের খেলায় পরিণত হচ্ছে?