থাইল্যান্ডে গুহায় অভিযান, আটকে পড়া সবাইকে উদ্ধার

থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলের একটি গুহায় আটকে পড়া ১২ জন কিশোর ফুটবলার ও তাদের ২৫ বছর বয়সী কোচকে উদ্ধার করা হয়েছে। বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে সবাইকে উদ্ধারের খবর নিশ্চিত করা হয়।

গুহা মুখ থেকে চার কিলোমিটার ভেতরে ভয়ঙ্করভাবে আটকে পড়া কিশোর দল ও তাদের কোচকে উদ্ধারে রোববার থেকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। প্রথম দিন সবচেয়ে বেশি দুর্বল হয়ে পড়া চারজন কিশোরকে দক্ষ ডুবুরিরা উদ্ধার করেন।

পরের দিন আরো চারজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়। শেষ দিনে, মঙ্গলবার গুহায় আটকা অবস্থায় ছিলেন আরো পাঁচজন। যেখানে চারজন ছিলো কিশোর ফুটবলার ও একজন তাদের কোচ। এ দিন দুপুর থেকে তাদের উদ্ধার করার প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং একে একে সবাইকে গুহার বাইরে নিয়ে আসা হয়। এদের প্রত্যেককে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

থাইল্যান্ডের নৌবাহিনী থেকে জানানো হয়েছে, ১২ ফুটবলার ও তাদের কোচের প্রত্যেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ আছেন। তারপরও সতর্কতা হিসেবে তাদেরকে অন্তত এক সপ্তাহ হাসপাতালে থাকতে হবে।

এ দিকে, আগের উদ্ধার হওয়া আট কিশোরের কাউকে তাদের পরিবারের সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করতে দেয়া হয়নি। পরিবারের সদস্য হাসপাতালের কাচ ঘেরা ঘর থেকে কেবল এক পলক তাদের দেখার সুযোগ পেয়েছেন।

হাসপাতালে কিশোরদের ডাক্তার ও নার্সদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে। এ সময় তারা তাদের পছন্দের খাবার খেতে চায়। কিন্তু সহজে হজমযোগ্য খাবারের বাইরে তাদের অন্য কোনো খাবার দেয়া হচ্ছে না। এ ছাড়া তাদেরকে এখনো উচ্চ আলোর সামনে আনা থেকে বিরত রাখা হচ্ছে বলেও জানা গেছে।

কিশোর দল ও তাদের কোচকে উদ্ধার করতে মোট ৯০ উচ্চ প্রশিক্ষিত ডুবুরি আক্ষরিক অর্থে জানবাজি রেখে কাজ করেছেন। এদের মধ্যে ৪০ জন থাইল্যান্ডের। বাকিরা বিদেশি।

গত ২৩ জুন কিশোর ফুটবলারদের এই দল নিখোঁজ হয়ে যায়। এর নয়দিন পর তাদের সন্ধান পান একজন ব্রিটিশ ডুবুরি। দুই জুলাই সন্ধান পাওয়ার পর তাদের উদ্ধারে নানা রকম তৎপরতা শুরু হয়। যে তৎপরতায় যোগ দেয় অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, আমেরিকার বিশেষজ্ঞরা। স্পেসেক্স-এর প্রধান ইলন মাস্কও এই উদ্ধার তৎপরতায় সব ধরনের সহায়তা নিয়ে হাজির হন।

কিশোর ফুটবলারদের দলটিকে উদ্ধারের কাজটা সহজ ছিলো না। কারণ যে গুহার দীর্ঘ পথটি ছিলো পানিতে ডোবা, কাদায় পূর্ণ ও অন্ধকারে নিমজ্জিত। পুরো পথের অনেকটা ছিলো সমতল, কিছুটা গভীর গর্তের মতো, আবার কোথাও কোথাও পানি। এর মধ্যে হেঁটে, গড়িয়ে ও সাঁতার কেটে পথ পারি দিতে হয়েছে।

সব বিপদের ব্যাপার ছিলো, কিশোরদের কেউই সাঁতার জানে না। ফলে ডুবসাঁতার দিয়ে তারা নিজেরা বের হওয়ার চেষ্টা করতে পারেনি। প্রতিটি কিশোরকে উদ্ধার করতে দুজন করে ডুবুরি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে কাজ করেছেন।

কিশোরদের বের করে আনার কাজ শুরুর আগে, একজন থাইল্যান্ডের ডুবুরি তাদের কাছে অক্সিজেন ট্যাংক পৌঁছে দিয়ে ফেরার সময় প্রাণ হারান। তার মৃত্যুর পর যেনো উদ্ধারকারীরা আরো বিপুল দৃঢ়তা নিয়ে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং স্মরণকালের সবচেয়ে দুঃসাহসী এক অভিযান শুরু করেন।

এই কিশোর দল ও তাদের কোচের গুহাটির ভেতরে আটকা পড়ার মূল কারণ ছিলো প্রবল বৃষ্টি। বৃষ্টির কারণে তাদের ফিরে আসার পথ ডুবে যায় এবং তারা ভেতরে আটকা পড়ে। কিন্তু তারা অত্যন্ত বিপজ্জনক এই গুহার এতোটা ভেতরে কেনো গিয়েছিলেন, সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা যায়নি।

ধারণা করা হচ্ছে, আগামী সাতদিন পর উদ্ধার হওয়া কিশোর ও তাদের কোচকে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি করা হবে। তারপর আশা করা যায়, ঠিক কী কারণে তারা গুহার এতো গভীরে চলে গিয়েছিলেন, সে বিষয়ে তথ্য জানা যাবে।

আপাতত, তাদের উদ্ধারের খবর পুরো থাইল্যান্ডের সাথে সারা বিশ্বের বহু মানুষের কাছে স্বস্তির খবর হয়ে এলো। তাদের উদ্ধার কাজ যাতে সফল হয়, এ জন্য সারা পৃথিবীর বহু মানুষ প্রার্থনার হাত তুলে বসে ছিলেন। সেই সব মানুষের জন্য থাইল্যান্ড থেকে এলো দারুণ স্বস্তির খবর।