আজ ফ্রান্স-বেলজিয়াম সেমিফাইনাল যুদ্ধ

নতুন একটা বিশ্বকাপই দেখল ফুটবল দুনিয়া। প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে থাকল না ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, ইতালি- চার দলের একটিও। সাদা চোখে ভুতুড়ে বিশ্বকাপটা আর বিশ্বকাপ নেই। হয়ে গেছে ‘ইউরো কাপ’! যেখানে নেই অন্য মহাদেশের কোনো দল। চার সেমিফাইনালিস্ট- ক্রোয়েশিয়া, ইংল্যান্ড, বেলজিয়াম ও ফ্রান্স। আজ একুশতম বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে শেষের দল দুটি।

সম্ভাব্য সেরা দল নিয়েই সেন্ট পিটার্সবার্গের ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে নামছে ইউরোপের জায়ান্ট দুই দল ফ্রান্স ও বেলজিয়াম। বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায় অনুষ্ঠিত হবে মহারণটি। ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে বিটিভি, মাছরাঙা, নাগরিক টিভি, সনি টেন ২ ও সনি সিক্স।

মহা গুরুত্বপূর্ণ এই লড়াইয়ের আগে সুখবর আছে দুই শিবিরেই। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আজ ফরাসী একাদশে ফিরছেন ব্লেইসি মাতুইদি। তাকে জায়গা দিতে গিয়ে বেঞ্চে বসে থাকতে হচ্ছে করেন্টিন টলিস্যোকে। এক ম্যাচের নির্বাসন কাটিয়ে মাঠে ফিরছেন বেলজিয়ান ডিফেন্ডার থমাস মিউনিয়ারও। বেলজিয়ামের শুরুর একাদশে পরিবর্তন বলতে এই একটাই।

ফাইনালে ওঠার এই লড়াইয়ে ফ্রান্স চাইলে প্রেরণা খুঁজে নিতে পারে অতীত থেকে। প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্টে তিনবারের দেখায় প্রতিবারই বেলজিয়ামকে হারিয়েছে তারা। বিশ্বকাপেও দুবার এই দলটাকে পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ দিয়েছে ফ্রান্স।

তবে প্রতিযোগিতার মঞ্চে পিছিয়ে থাকলেও ফরাসীদের সঙ্গে সামগ্রিক সাক্ষাৎকার এগিয়ে রাখছে বেলজিয়ামকে। আগের ৭৩ বারের দেখায় ৩০বারই ফ্রান্সকে হারিয়েছে তারা। যেখানে ফরাসিদের জয় ২৪টি। বাকি ১৯টি ম্যাচ রয়ে গেছে অমীমাসিংত।

সবশেষ তিনবারের লড়াইয়েও ফ্রান্সের বিপক্ষে অপরাজিত আছে বেলজিয়াম। তিন বছর আগে শেষবারের লড়াইয়ে জোড়া গোল করেছিলেন বেলজিয়ান মিডফিল্ডার মারোয়ানি ফেলাইনি। নাটকীয় ম্যাচটা শেষ অবধি কালো ঘোড়ারা জিতেছিল ৪-৩ গোলে।

তবে আজকের লড়াইয়ে ফেলাইনি নন, প্রাদ প্রদীপে আছেন কেভিন ডি ব্রুইন, রোমেলু লুকাকু এবং ইডেন হ্যাজার্ড। এই ত্রয়ীর সঙ্গে পল পগবা, অ্যান্তনিও গ্রিজম্যান এবং কিলিয়ান এমবাপ্পের ব্যক্তিগত নৈপুণ্য প্রদর্শনের লড়াইটি গড়ে দিতে পারে প্রথম সেমিফাইনালের ভাগ্য।

দুটি দলই ল্যাটিন আমেরিকার দুই পরাশক্তিকে বিদায় করে সেমিফাইনালে এসেছে। শেষ আটের ম্যাচে উরুগুয়েকে ২-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে ফ্রান্স। কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের সঙ্গে তুমুল লড়াইয়ের পর ২-১ গোলের স্নায়ুঠাসা জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে বেলজিয়াম।

আজও হাসিমুখে মাঠ ছাড়তে চাইবে দুই দল। শেষ অবধি কোন দলের আশা পূরণ হবে কার্যত বলা মুশকিল। তবে ম্যাচটা যে কঠিন হবে সেটা মানছেন ফ্রেঞ্চ ডিফেন্ডার রাফায়েল ভারানে। ম্যাচের আগে তিনি বলেছেন, ‘বেলজিয়াম তরুণ দল। কিন্তু দলটা বেশ পরিণত। আমরা জানি এটা আমাদের জন্য কঠিন একটা ম্যাচ হতে চলেছে।’

প্রতিপক্ষ দলের তিনজন লুকাকু, হ্যাজার্ড এবং ডি ব্রুইনকে নিয়েই যত ভয় ফ্রান্সের। ডিফেন্ডার হিসেবে ভারানে অবশ্য লুকাকুকে নিয়ে একটু বেশিই ভাবছেন, ‘রোমেলু লুকাকুর শারীরিক শক্তি আমাদের রক্ষণকে বিপদে ফেলতে পারে। আমরা কোনো সুযোগ দিতে চাই না। কারণ তিনি দুর্দান্ত ফুটবলার, সুযোগ পেলেই সে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।’

বিশ্বকাপে ফ্রান্সকে কখনো হারাতে না পারলেও এবার ডর-ভয়হীন ফুটবল খেলার ঘোষণা দিয়েছে বেলজিয়াম। ফাইনাল তো বটেই, এই দলটা এখন স্বপ্ন দেখছে শিরোপার। দলের প্রতিনিধি হিসেবে সংবাদ সম্মেলনে ডি ব্রুইন যেমনটি বলে গেছেন, ‘আপনি যখন বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠবেন তখন খালি হাতে ফিরতে চাইবেন না। জয়ের জন্য আমরা শারীরিক এবং মানসিক সবদিক থেকেই চেষ্টা করব।’

আজ আপ্রাণ চেষ্টায় সফল হলেই ইতিহাস হয়ে যাবে বেলজিয়ামের। কালো ঘোড়াদের হাতছানি দিচ্ছে বিশ্বকাপের ফাইনাল। স্বপ্নের এই মঞ্চে কখনোই ওঠা হয়নি তাদের। পক্ষান্তরে, ফ্রান্স জিতলে এনিয়ে তৃতীয়বার ফাইনালে উঠে যাবে তারা। ফরাসিরা খুব করেই চাইছেন বিশ বছর আগের অতীত ফেরাতে। তারুণ্যে ঠাসা দিদিয়ের দেশমের দলটার চোখ দ্বিতীয় শিরোপায়।