চার কারণে ব্রাজিলের হার

এবারের রাশিয়া বিশ্বকাপে শিরোপার অন্যতম দাবিদার ছিল ব্রাজিল। কিন্তু ভুতুড়ে বিশ্বকাপের মহা অঘটনের শিকার হয়ে বিদায় নিতে হলো তাদেরও। শনিবার বেলজিয়ামের কাছে ২-১ গোলে হেরে রাশিয়ার মঞ্চ থেকে ছিটকে গেছে সেলেকাওরা। বেলজিয়ানদের সঙ্গে দুর্দান্ত ফুটবল খেলেও ‘হেক্সা’ স্বপ্নটা বাঁচিয়ে রাখতে পারলেন না নেইমার-সিলভারা। জার্মানি, আর্জেন্টিনার পর ফেভারিট ব্রাজিলেরও পথচলা থেমে গেল কাজান স্টেডিয়ামে।

অবশ্য ব্রাজিলের এই ব্যর্থতায় দায় অবশ্যই ‘অপয়া’ ভেন্যু নয়। তবে সেলেকাওদের এভাবে ছিটকে যাওয়াটা বিস্মিত করেছে গোটা বিশ্বকে। কিন্তু দুর্দান্ত একটা দল নিয়ে, দারুণ ফুটবল খেলেও কেন বিদায় নিতে হলো তিতের ব্রাজিলকে? বেলজিয়ামের বিপক্ষের ম্যাচটা কাঁটাছেড়া করার পর কয়েকটা উত্তরই সামনে চলে এসেছে। ব্রাজিলের হারের চারটি কারণ পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো:

ক্যাসেমিরোর শূন্যতা: শক্তিশালী রক্ষণদুর্গ গড়ে তুলে এই বিশ্বকাপে আলোচনায় এসেছিল ব্রাজিল। থিয়াগো সিলভা ও মিরান্ডার সঙ্গে ক্যাসেমিরোর রসায়নটা দারুণ জমে উঠেছিল। কিন্তু দুই ম্যাচের দুই হলুদ কার্ড দেখে কোয়ার্টার ফাইনালের মতো মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে নিষিদ্ধ হন ক্যাসেমিরো। বেলজিয়ামের বিপক্ষে তার শূন্যতা হাড়ে হাড়েই টের পেয়েছে ব্রাজিল।

তার পরিবর্তিত হিসেবে যিনি মিাঠে নেমেছিলেন সেই ফার্নান্দিনহোর আত্মঘাতী গোলই ডুবিয়েছে ব্রাজিলকে। ভিনসেন্ট কোম্পানির নেয়া কর্নার কিক থেকে উড়ে আসা বলটা বিপদমুক্ত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার বাহুতে লেগে বল জড়িয়ে যায় ব্রাজিলের জালে। শুরুতে গোল হজম করেই মানসিকভাবে পিছিয়ে পড়ে সেলেকাওরা। পুরো ম্যাচেও নিষ্প্রভ ছিলেন ফার্নান্দিনহো যা ব্রাজিলের হারের অন্যতম একটা কারণ হয়ে উঠেছে।

সেট পিসে গোল হজম: বেলজিয়ামের বিপক্ষে ম্যাচের শুরু থেকেই গোলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে ব্রাজিল। কিন্তু গোলের নেশায় পেয়ে বসা সেলেকাওরা ঠিকঠাক সামলাতে পারেনি নিজেদের দুর্গ। ম্যাচের অধিকাংশ সময় বেলজিয়ান ফুটবলাররা সুযোগ বুঝে আক্রমণ চালিয়েছে। লুকাকু, ডি ব্রুয়েন এবং হ্যাজার্ডকে তো প্রায়সময়ই আনমার্ক দেখা গেছে। যেটার মাশুল গুনতে হলো ৩১ মিনিটে দ্বিতীয় গোল হজম করে।

মধ্যমাঠ থেকে লুকাকুর ক্রসটা প্রায় ফাঁকায় পেয়ে যান ডি ব্রুয়েন। বল পেয়ে দ্রুতই বুলেট গতির শটে ব্রাজিলের জাল কাঁপান এই মিডফিল্ডার। শুধু এটাই নয়, সেলেকাওরা প্রথম গোলটাও হজম করেছে সেট পিস থেকে। তবে এই গোলটা করেছেন খোদ ব্রাজিলেরই ফুটবলার ফার্নান্দিনহো। ফাঁকায় দাঁড়িয়ে বলে মাথা ছোঁয়াতে চেয়েছিলেন এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। কিন্তু তার বাহুতে লেগে বল জড়িয়ে যায় জালে।

অবিশ্বাস্য কোর্তোয়া: গেল মৌসুমটা খুব একটা ভালো কাটেনি থিবাউট কোর্তোয়ার। চেলসির গোলবারের নিচে মৌসুমের প্রায় পুরোটা সময় নিজেকে হারিয়ে খুঁজেছেন তিনি। তবু তার ওপর আস্থা হারাননি বেলজিয়ামের কোচ রবার্তো মার্টিনেজ। এমনকি জাপানের বিপক্ষে তার নিষ্প্রভতাও না। সবমিলিয়ে দুঃসময় ভালোভাবেই ঘিরে ধরেছিল কোর্তোয়াকে। সমালোচকরাও একের পর এক তিরবিদ্ধ করছিলেন তাকে।

নিন্দুকদের দাঁতভাঙা জবাব দিতে ব্রাজিলকেই বেছে নিলেন তিনি। নেইমার, কুতিনহো, সিলভাদের একের পর এক আক্রমণ রুখে দিয়ে অবধারিতভাবে কোয়ার্টার ফাইনালের নায়ক বনে গেলেন কোর্তোয়া। ফুটবল পণ্ডিতদের মত, সেলেকাওদের বিপক্ষে ক্যারিয়ার সেরা ম্যাচটাই খেলেছেন তিনি। শুক্রবার কাজানে গোল পোস্টের নিচে কোর্তোয়া অবিশ্বাস্য পারফর্ম না করলে ম্যাচের ফলটা অন্যরকম হতে পারতো। সাদা চোখে ব্রাজিল তো তার কাছেই হেরে গেছে।

সুযোগ মিসের মহড়া: ম্যাচের শুরুতে গোলপোস্টের মুখ ফিরিয়ে নেয়া, কোর্তোয়ার অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স, প্রাপ্য পেনাল্টি বঞ্চিত হওয়া- সবমিলিয়ে ভাগ্যকে দুষতে পারে ব্রাজিল। তাই বলে নিজেদের দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারে না পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা। কারণ এদিন যে বেলজিয়ামের রক্ষণদুর্গের সামনে গোল মিসের মহড়া বসিয়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান ফুটবলাররা। নেইমার, কুতিনহো, কস্তা, ফিরমিনোরা বারবার খেই হারিয়ে ফেলেছেন বেলজিয়ানদের রক্ষণের সামনে গিয়ে। আর তা না হলে ২৭টি আক্রমণ করার পরও কেনই বা হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হবে সেলেকাওদের!