‘অভিশপ্ত’ কাজান স্টেডিয়াম

রাশিয়া বিশ্বকাপটা অনেক কারণেই চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে ফুটবলপ্রেমীদের কাছে। ফেভারিটদের গড়পড়তা হোঁচট এবং বিশ্বকাপের আকাশ থেকে তারকাদের খসে পড়ার দৃশ্যগুলো আসরটাকে দিয়েছে অন্য এক মাত্রা। রাশিয়ার ফুটবল মহাযজ্ঞকে মনে রাখার আরো অনেক কারণ আছে।

একুশতম বিশ্বকাপের পুরো আসরটা তো বটেই, বিশেষ করে কাজান স্টেডিয়ামের কথা অনেকদিন মনে থাকবে ফুটবলপ্রেমীদের। এ যে ‘অপয়া’ ভেন্যু! বড় দলগুলোর জন্য মাঠটা হয়ে উঠেছে মৃত্যুকূপ। যেখানে পড়ে একে একে হারিয়ে গেল তিনটি চ্যাম্পিয়ন দল।

যার শুরুটা হয়েছিল জার্মানিকে দিয়ে। এই কাজান স্টেডিয়ামে হেরেই ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের বিদায়ণ্টা বেজেছে। এখানেই স্বপ্নের সমাধি হয়েছে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনার। বাকি ছিল শিরোপা প্রত্যাশী ব্রাজিল। শুক্রবার রাতে একই মঞ্চ দুঃস্বপ্ন উপহার দিল পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদেরও।

সবমিলিয়ে ঘটন-অঘটনের রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে হারিয়ে গেল প্রায়সব বড় তারকা। মোহাম্মদ সালাহ, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, লিওনেল মেসি, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তাদের মতো শূন্যহাতে ফিরতে হলো নেইমারকেও। ব্রাজিলিয়ানদের আফসোস, দুর্দান্ত ফুটবল খেলেও ‘হেক্সা’ (ষষ্ঠ শিরোপা) স্বপ্নটা অপূর্ণ রেখে দেশে ফিরতে হচ্ছে।

ব্রাজিলকে ২-১ গোলে হারিয়ে ৩২ বছর পর বিশ্বমঞ্চের সেমিফাইনালে জায়গা করে নিল বেলজিয়াম। কাজানকে অঘটনের ভেন্যু প্রমাণ করে কী দুর্দান্ত ফুটবলটাই না খেলল বেলজিয়ানরা। কাজান অঘটন ঘটাবে বলেই কিনা ম্যাচের শুরুতেই থিয়াগো সিলভার হেডটা পোস্টে লেগে ফিরে আসল!

রূপকথার যাত্রায় আরো দীর্ঘায়িত করতে এদিন গোল পোস্টের নিচে অতিমানব হয়ে উঠেছিলেন থিবাউট কোর্তোয়াও। নেইমার-কুতিনহোদের একের পর এক আক্রমণ রুখে দিয়ে বেলজিয়ানদের মুখে তিনি ফুটিয়েছেন শেষ হাসি। ম্যাচ শেষে গ্যালারি, স্টেডিয়াম তথা সবখানেই রোল পড়েছিল হলুদ কান্নার।

প্রতিপক্ষ ভক্তদের স্বপ্নভঙ্গের বেদনাটা ছুঁয়ে গেল বেলজিয়াম ফুটবলারদেরও। ম্যাচ শেষে ব্রাজিলিয়ান সমর্থকদের স্যালুট জানিয়েছেন ডি ব্রুইন-হ্যাজার্ডরা। ব্রাজিলিয়ান সমর্থকরা বেলজিয়ানদের অভিবাদনের জবাব দিয়েছেন করতালিতে। প্রায় ৪০ হাজার হলুদ সমর্থকদের কান্না থামানো গেল না তাতেও।

কাজানের অঘটনের শুরুটা হয়েছিল জার্মানিকে দিয়ে। দারুণ একটা দল নিয়েও ইনজুরি টাইমে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে ২-০ গোলে হারতে হয়েছে তাদের। যা বিশ্বকাপের ইতিহাসে অন্যতম সেরা অঘটন হিসেবে ঠাঁই পাবে। গেল ২৭ জুন তারকাঠাসা দল নিয়েও বিদায় নিতে হলো চ্যাম্পিয়নদের।

তার ঠিক দুইদিন পর এখান থেকেই অশ্রুসিক্ত হয়ে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেছে আর্জেন্টিনা। অবশ্য ওই ম্যাচে ফ্রান্সের জয়টাকে কোনোভাবেই অঘটন বলা চলে না। কিন্তু ৪-৩ গোলের ব্যবধানের ফলটা মেসির মতো কিংবদন্তিকে ছিটকে দিয়েছে বিশ্বকাপ থেকে।

আর্জেন্টিনার দলটায় না হয় ভারসাম্য ছিল না, কিন্তু ব্রাজিল। তিতের গড়া দলটা যে শিরোপার অন্যতম দাবিদার ছিল। বলা হচ্ছিল সেলেকাওদের রিজার্ভ বেঞ্চ দিয়েও দারুণ একটা একাদশ বানানো যায়। অথচ নেইমার, কুতিনহো, মার্সেলো, সিলভার মতো তারকাঠাসা দল নিয়েও বেলজিয়ামের কাছে অঘটনের শিকার হলো ব্রাজিলকে।

কাজানের ভূত পেয়ে বসল তাদেরও। কাজান স্টেডিয়াম সাক্ষী হলো বিশ্বকাপের ইতিহাসে আরেকটা বড় অঘটনেরও। ফুটবল সমর্থকদের জন্য স্বস্তির খবর- ‘অপয়া’ ভেন্যুতে আর কোনো ম্যাচ নেই। তবে কাজান যা সর্বনাশ করার তাতো করেই দিয়েছে। আর কোনো ম্যাচের দরকারও পড়ছে না!