ব্রাজিলকে বিদায় করে সেমিফাইনালে বেলজিয়াম

বেলজিয়ামের গোল্ডেন জেনারেশনের কাছে হেরে শেষ হলো ব্রাজিলের হেক্সা মিশন। কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নিলেন নেইমাররা। অন্য দিকে, বিশ্বকাপের আগে থেকেই ফেবারিট হিসেবে আলোচিত থাকা বেলজিয়াম উঠে গেলো সেমিফাইনালে।

পুরো ম্যাচে আক্রমণের পর আক্রমণ করে গেছে ব্রাজিল। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা পেতেই সময় চলে গেছে তাদের। ব্রাজিলের আক্রমণের ফাঁক গলেই দুটি গোল পেয়ে যায় বেলজিয়াম। এর মধ্যে একটি আবার আত্মঘাতী গোল। ওই গোলই মূলত পিছিয়ে দেয় ব্রাজিলকে। পরে যেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি তারা। যদিও দারুণ চেষ্টা চালাতে একদমই ভুল করেনি ব্রাজিল।

বেলজিয়াম দুই গোলে এগিয়ে যায় ম্যাচের প্রথমার্ধেই। শুরুর দিকে ব্রাজিলের ভয়ঙ্কর সব আক্রমণ বেলজিয়াম সমর্থকদের পিলে চমকে দিলেও ম্যাচের মাত্র ১৩ মিনিটে পিছিয়ে পড়ে এই বিশ্বকাপের অন্যতম হট ফেবারিট ব্রাজিল।

ব্রাজিলের গোলবারের সামনে থেকে হেড করেন ভিনসেন্ট কোম্পানি। কিন্তু তা সরাসরি জালে যাওয়ার আগে লাগে ফার্নান্দিনহোর বাহুতে এবং তারপর এলিসন বেকারকে পরাজিত করে বল চলে যায় ব্রাজিলের জালে। আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে পড়ে ব্রাজিল।

প্রথম গোলের ধাক্কাটা সামলে আক্রমণের পর আক্রমণ করে যান নেইমাররা। ব্রাজিলের একের পর আক্রমণ ঠেকাতেই ব্যতিব্যস্ত থাকতে হয় বেলজিয়ামকে।

এর মধ্যেই ৩১ মিনিটে অসাধারণ এক প্রতিআক্রমণ থেকে গোল পেয়ে যায় বেলজিয়াম। লোমেরু লুকাকুর দারুণ অ্যাসিস্টে ব্রাজিলের জাল কাঁপান কেভিন ডি ব্রুইন। তার আগে মাঝমাঠ থেকে দারুণ দক্ষতায় ব্রাজিলের ডি বক্সের কাছে চলে যান লুকাকু। সেখান থেকে পাস দেন ব্রুইনকে। দারুণ এই সুযোগ মিস করেননি তিনি।

দুই গোল হজম করলেও ব্রাজিলের আক্রমণ থামেনি। একের পর এক আক্রমণে বেলজিয়ামকে কাঁপিয়ে দিতে থাকে তারা। কিন্তু ভাগ্য সহায় ছিলো না ব্রাজিলের। প্রথম গোলের দেখা পেতে তাদের অপেক্ষা করতে হয় ৭৬ মিনিট পর্যন্ত।

গোল করতে মরিয়া ব্রাজিল ৭৬ মিনিটে কোতিনহোর দারুণ এক ক্রস থেকে গোলে দেখা পেয়ে যায়। গোলটি করেন রেনাটো অগাস্টো। এই গোলের পর আক্রমণের ধার আরো বাড়িয়ে দেয় ব্রাজিল। বেলজিয়াম ডিফেন্ডারদের রীতিমত পাগল বানিয়ে ছাড়েন নেইমাররা।

কিন্তু গোলের দেখা পাচ্ছিলো না ব্রাজিল। ম্যাচের ৯৪তম মিনিটে গিয়ে দারুণ এক আক্রমণ থেকে গোলের খুব কাছে চলে যায় তারা। নেইমার নেন দারুণ এক শট। কিন্তু বেলজিয়াম গোলরক্ষক অসাধারণ দক্ষতা তা রুখে দেন। এরপর আর সুযোগ তৈরি করতে পারেনি ব্রাজিল। বেলজিয়ামের স্বর্ণালি প্রজন্মের কাছে হেরে শেষ হয় তাদের বিশ্বকাপ।

কোয়ার্টার ফাইনালে উঠার পথে রাউন্ড অব সিক্সটিনে কঠিন বাধার মুখে পড়ে বেলজিয়াম। জাপানের বিপক্ষে দুই গোলে পিছিয়ে পড়ে তারা। সেখান থেকে ম্যাচ জিতে যায় বেলজিয়াম। এবারের বিশ্বকাপে কেনো তাদেরকে ফেবারিট মনে করা হচ্ছিলো, তাই যেনো বুঝিয়ে দেয় রবার্টো মার্টিনেজের দল। এর আগে গ্রুপ পর্বেও চ্যাম্পিয়ন হয় তারা।

অন্য দিকে ব্রাজিল গ্রুপ পর্বে কিছুটা নড়বড়ে ছিলো। সুইজারল্যান্ডের সাথে ড্র করে বিশ্বকাপ শুরু করে তারা। কোস্টা রিকা ও সার্বিয়াও ছিলো কঠিন প্রতিপক্ষ। কিন্তু পরে বিশ্বকাপের বয়স যতো বেড়েছে, ব্রাজিলের ফুটবলের ধারও ততো বেড়েছে। কোয়ার্টার ফাইনালে তারা হারায় মেক্সিকোকে।

কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিল ও বেলজিয়ামের লড়াইটি হয়ে উঠে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বনাম বেলজিয়ামের স্বর্ণালী প্রজন্মের ফুটবল-যুদ্ধ। ব্রাজিলের ভরসা যেখানে দুর্দান্ত ডিফেন্স ও আক্রমণভাগ। বেলজিয়ামের সেখানে দুর্বার মধ্যমাঠ ও আক্রমণের অবিশ্বাস্য সব প্রতিভা।

শেষ পর্যন্ত ব্রাজিলের হেক্সা মিশন শেষ হয় বেলজিয়ামের স্বর্ণালী প্রজন্মের কাছে হেরে। ২-১ গোলের হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাদের। অন্য দিকে বেলজিয়াম উঠে যায় সেমিফাইনাল। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ ফ্রান্স।