ব্রাজিলের সামনে এবার ‘কালো ঘোড়া’

রাশিয়া বিশ্বকাপে টিকে আছে আর মাত্র আটটি দল। এই দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ফেভারিট ভাবা হচ্ছে ব্রাজিলকে। শিরোপা দৌড়ে আছে বেলজিয়ামও। তবে কোয়ার্টার ফাইনালে থেমে যাবে যে কোনো এক দলের স্বপ্নযাত্রা। আজ রাতেই যে কাজানে মুখোমুখি হচ্ছে ব্রাজিল-বেলজিয়াম!

এই বাঁচা-মরার লড়াইয়ের আগে সুসংবাদ দুঃসংবাদ দুটোই পেয়েছে ব্রাজিল। দুই হলুদ কার্ড দেখায় এই ম্যাচে সেলেকাওরা পাচ্ছে না ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ক্যাসেমিরোকে। আজ তার পরিবর্তিত হিসেবে ব্রাজিলের শুরুর একাদশে দেখা যাবে ফার্নান্দিনহোকে। ব্রাজিলিয়ান কোচ তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের জন্য সুখবর বয়ে এনেছেন মার্সেলো। চোট কাটিয়ে পুরোপুরি ফিট হয়ে উঠেছেন এই লেফট-ব্যাক। আজ মাঠে নামছেন মার্সেলো। পিঠের ইনজুরির কারণে ব্রাজিলের জার্সিতে শেষ ম্যাচটি খেলতে পারেননি তিনি। গ্রুপপপর্বের তৃতীয় ম্যাচে পিঠের ব্যথা নিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন মার্সেলো। ব্রাজিলের জন্য আরেকটি স্বস্তির খবর ইনজুরি কাটিয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন উইঙ্গার ডগলাস কস্তা।

ইনজুরি ভাবনা আছে বেলজিয়াম শিবিরেও। বেলজিয়ানদের আশা আক্রমণভাগের সারথি আদনান জানুজাজকে নিয়ে মাঠে নামতে পারবে তারা। ইনজুরির কারণে জাপানের বিপক্ষে দলের শেষ ম্যাচটি মিস করেছিলেন তিনি। একমাত্র আদনানকে নিয়েই ইনজুরি দুশ্চিন্তা বেলজিয়ামের।

ফেভারিট হিসেবেই জাপানের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিল ইউরোপের কালো ঘোড়ারা। কিন্তু এই বিশ্বকাপে যে ফেভারিট তকমার কোনো মূল্য নেই সেটাই বুঝিয়ে দিয়েছিল জাপান। দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমেই বেলজিয়ানদের জালে দুবার বল জড়িয়ে দিয়েছিল এশিয়ার দলটি।

লুকাকু-হ্যাজার্ডদের বিদায় দেখছিলেন ফুটবলপ্রেমীরা। কিন্তু মার্টিনেজের শিষ্যরা গা ঝাড়া দিয়ে ওঠল ম্যাচের শেষ দিকে, বিশ্বকাপের গত ৪৮ বছরের ইতিহাসে সেরা প্রত্যাবর্তন দেখল ফুটবল দুনিয়া। ২৪ মিনিটের ব্যবধানে তিন গোল করে জাপানকে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে দেয় ইউরোপের জায়ান্ট দলটি। বেলজিয়ানদের আক্রমণ কতটা ঝাঁঝাল সেটা বুঝিয়ে দিচ্ছে এই তথ্যটাই।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ব্রাজিলের চোয়ালবদ্ধ রক্ষণদুর্গে ফাটল ধরাতে পারবে তো বেলজিয়াম? কারণ এই বিশ্বকাপে সেলেকাওদের ডিফেন্স সবচেয়ে শক্তিশালী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। চার ম্যাচে মাত্র একটি গোল হজম করেছে ব্রাজিল। সেটাও অপ্রত্যাশিতভাবে। থিয়াগো সিলভা, মিরান্ডাদের নিয়ে গড়া রক্ষণভাগ বিশ্বের যে কোনো দলের জন্যই দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইতিহাস, ঐতিহ্য, মুখোমুখি লড়াইয়ের ফল কিংবা অভিজ্ঞতা। কোনোকিছুতেই বেলজিয়ামের সঙ্গে তুলনা চলে না ব্রাজিলের। তুলনাটা তুলে দিয়েছে বেলজিয়ানদের একঝাঁক সোনালি ফুটবলার। ডি ব্রুয়েন, হ্যাজার্ড, লুকাকু, ফেলাইনিদের নিয়ে গড়া এই সোনালি প্রজন্ম বিশ্বের যে কোনো দলকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার সামার্থ্য রাখে।

তবে বেলজিয়ামের মনে রাখা দরকার বিশ্বকাপের ইতিহাসে সেরা দলটির বিপক্ষে খেলতে যাচ্ছে তারা। তাই ব্রাজিলকে হারাতে হলে হয়তো শতভাগের চেয়েও বেশিকিছু নিংড়ে দেওয়া লাগতে পারে বেলজিয়ানদের। এর সঙ্গে স্নায়ুচাপের বড় একটা পরীক্ষা দিতে হবে ইউরোপের কালো ঘোড়াদের।

প্রথম ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের কাছে ১-১ গোলে হোঁচট। এরপর সময় যতই সামনে এগিয়েছে ব্রাজিল ততটাই হয়ে উঠেছে ভয়ঙ্কর। জয়ের সঙ্গে জোগো বোনিতোর ছন্দের ফুটবলও উপহার দিয়ে চলেছে তিতের দল। চোট বাধা পেরিয়ে সেরা ছন্দে ফিরেছেন নেইমার। কুতিনহো, উইলিয়ান, ফিরমিনোরাও ফর্মে আছেন। তাদের সমন্বিত পারফরম্যান্স প্রমাণ করেছে ব্রাজিল দলটা নেইমার নির্ভর নয়।

দুই দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স অবশ্য দুর্দান্ত লড়াইয়ের একটা ইঙ্গিত দিচ্ছে। ব্রাজিল কোচ তিতের ভাবনাও একই, ‘এটা দারুণ একটা ম্যাচ হবে। দুই দলই দারুণ ফুটবল খেলে আসছে। বেলজিয়ামের দুর্দান্ত কয়েকজন ফুটবলার এবং ভালো একজন কোচ আছে। আমি সবসময়ই তাদের সম্ভাব্য শিরোপাজয়ীদের তালিকায় রাখি।’

অবশ্য দুর্দান্ত খেললেও বেলজিয়ানদের ভাবতে হচ্ছে রক্ষণদুর্গের দুর্বলতা নিয়ে। দলটির কোচ মার্টিনেজ তাই ডিফেন্সে আরো জোর দেওয়ার পক্ষে, ‘ওদের হারাতে হলে আমাদের শক্তির দরকার। যতটা সম্ভব আমাদের রক্ষণদুর্গ আগলে রাখতে হবে। যখন বল পায়ে পাবো তখন তাদের চাপে রাখার চেষ্টা করতে হবে।’

এনিয়ে দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপের মঞ্চে বেলজিয়ামের সঙ্গে দেখা হচ্ছে ব্রাজিলের। ষোলো বছর আগে প্রথম ও শেষবারের লড়াইয়ে এই ব্রাজিলই বেলজিয়ানদের বাড়ি ফেরার পথ দেখিয়েছিল ২-০ গোলের দারুণ জয়ে। তবে বিশ্বকাপের বাইরে আরো তিনবার লড়াই হয়েছে দুই দলের। যেখানে ব্রাজিলের জয় দুটি এবং বেলজিয়ামের একটি। তবে বেলজিয়ামের জয়টা ১৯৬৩ সালে পাওয়া। ব্রাসেলসে সেদিন ব্রাজিলকে ৫-১ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল তারা।

বাংলাদেশ সময় আজ রাত ১২টায় মাঠে নামবে ল্যাটিন আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান জায়ান্ট দল দুটি। ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে বিটিভি, মাছরাঙা, নাগরিক টিভি, সনি সিক্স ও সনি টেন ২।