রাতে ল্যাটিন আমেরিকা বনাম ইউরোপ যুদ্ধ

এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে সফল এবং ভয়ঙ্কর জুটির নাম লুইস সুয়ারেজ ও এডিনসন কাভানি। আসরে দলের সাত গোলের পাঁচটিই করেছেন এই দুজন। তন্মধ্যে চারটি গোল আবার সরাসরি যুগলবন্দিতে। কিন্তু উরুগুয়ের জন্য দুঃসংবাদ শেষ ষোলোর ম্যাচটা কেড়ে নিয়েছে কাভানিকে।

ফর্মের তুঙ্গে থাকা এই স্ট্রাইকারের আজ মাঠে নামার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে সুয়ারেজ তাই হয়ে পড়লেন নিঃসঙ্গ। কাভানির অনুপস্থিতে দলের আক্রমণভাগের নেতৃত্বটা এককভাবে পড়ে গেল সুয়ারেজের কাধে। চাপটা তিনি সামলাতে পারবেন তো?

হারলে স্বপ্নের সমাধি। জিতলে হারানো শিরোপা উদ্ধারের পথে আরেকটা বড় সিঁড়ি পার হওয়া যাবে। এমনই বাঁচা-মরার লড়াইয়ে আজ মাঠে নামছে উরুগুয়ে এবং ফ্রান্স। নিঝনি নোভগোরদের মহারণটা এক অর্থে ল্যাটিন আমেরিকা বনাম ইউরোপিয়ান ফুটবল যুদ্ধও বলা চলে।

দুই মহাদেশের দুই দেশের লড়াই দিয়েই আজ শুরু হচ্ছে কোয়ার্টার ফাইনালের রোমাঞ্চকর পর্ব। বাংলাদেশ সময় রাত আটটায় মুখোমুখি হবে উরুগুয়ে এবং ফ্রান্স। ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে বিটিভি, মাছরাঙা, নাগরিক টিভি, সনি সিক্স ও সনি টেন ২।

যাকে নিয়ে এত দুশ্চিন্তা সেই কাভানির জোড়া গোলেই শেষ ষোলোতে পর্তুগালকে বিদায় করেছিল উরুগুয়ে। কিন্তু প্রাণভোমরার ইনজুরি উরুগুয়ানদের শেষ আটে ওঠার আনন্দটা মাটি করে দিয়েছে। তাই কাভানিবিহীন উরুগুয়েকে আজ ফ্রান্সের কাছে অগ্নিপরীক্ষাই দিতে হবে। টানা চার ম্যাচ জিতে উড়তে থাকা ল্যাটিন জায়ান্টরা এদিন ছন্দটা ধরে রাখতে পারবে তো?

কাজটা অবশ্যই কঠিন। কারণ ফ্রান্স ফিরেছে সেরা ছন্দে। দলের প্রায়সব ফুটবলারই ক্রমাগত আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন। এদের মধ্যে কিলিয়ান এমবাপ্পের নামটা আলাদাভাবেই বলতে হয়। শেষ ষোলোতে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে অতিমানবীয় পারফরম্যান্স করে সবার নজরে চলে এসেছেন ফ্রেঞ্চ এই তরুণ তুর্কি।

সঙ্গে অ্যান্তনিও গ্রিজম্যান তো আছেনই। এ দুজনের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের ওপর দাঁড়িয়ে আর্জেন্টিনাকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে শেষ আটে জায়গা করে নিয়েছিল ফরাসিরা। তবে দল ছন্দ থাকলেও কিছুটা অস্বস্তি আছেন প্রধান কোচ দিদিয়ের দেশম। নিষেধাজ্ঞার কারণে যে ব্লেইসি মাতুইদিকে খেলাতে পারছেন না তিনি।

মাতুইদি না থাকায় মধ্যমাঠের চাপটা আজ নিতে হচ্ছে পল পগবাকে। এ জন্য মিডফিল্ডে তিনি সঙ্গী হিসেবে পাচ্ছেন করেন্টিন টলিস্যোকে। মাঝমাঠ থেকে আক্রমণের জোগান দিয়ে কিংবা তাদের নিজেদেরও গোলকরার সামর্থ্য আছে। উরুগুয়ে কোচের যত ভয় ফরাসিদের এই আক্রমণভাগ নিয়েই।

বৃহস্পতিবার কোয়ার্টার ফাইনাল পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে উরুগুয়ে কোচ অস্কার তাবারেজ বলেছেন, ‘ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় শক্তির উৎস তাদের আক্রমণভাগ। যেখানে গ্রিজম্যান এবং এমবাপ্পের মতো প্রতীভাবান ফুটবলাররা আছেন। একটু সুযোগ দিলেই ওরা ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। তাই ওদের কোনো সুযোগ দেওয়া যাবে না।’

ওদিকে কাভানির পরিবর্তিত হিসেবে আজ সুয়ারেজের পাশে দেখা যেতে পারে ক্রিশ্চিয়ান স্টুয়ানিকে। ম্যাচটা তার জন্যও নিজেকে প্রমাণ করার। তবে নির্ভার হতে পারছেন না ফ্রান্স কোচ দিদিয়ের দেশম। কাভানিকে হিসেবে রেখেই রণ পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন তিনি। বলেছেন, ‘কাভানি খেলবে নাকি খেলবে না এটা আমি ম্যাচের দেড় ঘণ্টা আগে জানতে পারব। তাই কাভানির ব্যাপারটা মাথায় রেখেই আমি পরিকল্পনা সাজিয়েছি।’

অবশ্য কাভানিকে না পেলেও ইতিহাসকে পাশে পাচ্ছে উরুগুয়ে। ফ্রান্সের বিপক্ষে তাদের পারফরম্যান্স বরাবরই ভালো। বিশ্বকাপে তিনবারের দেখায় ফরাসিদের বিপক্ষে অজেয় আছে তারা। জয় একটিতে। সেটাও ১৯৬৬ বিশ্বকাপে। তবে তিনবারই গ্রুপপর্বে দেখা হয়েছিল দুই দলের। এবারই প্রথম নকআউট পর্বে দেখা হচ্ছে তাদের।

বিশ্বকাপের বাইরে শেষবারের সাক্ষাতেও জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছিল উরুগুয়ে। পাঁচ বছর আগে প্রীতি ম্যাচে ফ্রান্সকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল উরুগুয়ে। সেদিন ম্যাচের একমাত্র জয়সূচক গোলটি করেছিলেন সুয়ারেজ। পক্ষান্তরে, ফ্রান্স উরুগুয়েকে শেষবার হারিয়েছিল ১৯৮৫ সালে।