প্যারিস অলিম্পিক লাভজনক করতে ড. ইউনূসের পরামর্শ নিচ্ছে ফ্রান্স

আগামী ২০২৪ সালের অলিম্পিক আয়োজন করতে যাচ্ছে ফ্রান্স। দেশটির রাজধানী প্যারিস হবে অলিম্পিক সিটি। সফল আয়োজনের পাশপাশি এটাকে লাভজনক করতে চায় দেশটি। এজন্য সামাজিক ব্যবসার পথিকৃত নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পরামর্শ নিচ্ছে ফ্রান্স সরকার।

অষ্টম সামাজিক ব্যবসা দিবসে গত সপ্তাহে ভারতের প্রযুক্তি নগরী বেঙ্গালুরুতে এক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ইনফোসিস ক্যাম্পাসে গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আলোচক ও পেনেলিস্টরা অংশগ্রহণ করেন।

ওই সম্মেলনে ড. ইউনূস বলেন, আমি প্যারিসে অনেক সময় কাটিয়েছি। আমি মাত্র সেখান থেকে আসলাম এবং শিগগিরই সেখানে ফিরে যাব। আমি সেখানে ২০২৪ অলিম্পিক নিয়ে প্যারিসের মেয়র অ্যানি হিদেগোর সঙ্গে কাজ করছি।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ক্রীড়া আসর ও ক্রমবর্ধমান সামাজিক ব্যবসা মধ্যে সংযোগ স্থাপন এবং বৃহত্তর প্যারিস এলাকায় এর অর্থনৈতিক সুবিধা ছড়িয়ে দিতে ড. ইউনূসের সঙ্গে কাজ করছেন প্যারিসের মেয়র হিদেলগো এবং ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিক আয়োজক কমিটির প্রধান টনি ইস্টেনগেট।

অলিম্পিক আয়োজন কোনো কালেই লাভজনক ছিলো না বলা চলে। গত ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকে ১৮ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের বিপরীতে আয় হয়েছে মাত্র ৫.২ বিলিয়ন ডলার। এর আগে ভ্যাঙ্কুভারে ২০১০ সালে শীতকালীন অলিম্পিকে ব্যয় হয়েছিল ৭.৬ বিলিয়ন ডলার, বিপরীতে আয় হয়েছিল ২.৮ বিলিয়ন ডলার। আর ২০০৮ সালে বেইজিং অলিম্পিকে ব্যয় হয়েছিল ৪০ বিলিয়ন ডলার, বিপরীতে আয় হয়েছে মাত্র ৩.৬ বিলিয়ন ডলার। অলিম্পিকের অধিকাংশ কাজ চলে যায় চাকরিরতদের হাতে। ফলে কোনো ধরনের কর্মসংস্থানও হয় না।

ড. ইউনূস বলেন, ‘আপনি অলিম্পিকে ১৫ দিনের জন্য ১৫ হাজার মানুষের আবাসান তৈরি করছেন। হ্যাঁ, আপনি অনেক সুন্দর সুন্দর বাড়ি বানাচ্ছেন, থাকার জন্য বিশ্বমানের ব্যবস্থা নিচ্ছেন। অলিম্পিক শুরুর আগে জাকজমক অবস্থা থাকে, মন্ত্রীরা আসেন, তারকা খেলোয়াড়রা আসেন আর থাকেন বহু দর্শক। কিন্তু ১৫ দিন পর তারা এটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রেখে যান। পরে নিলামে উঠলে ধনীরা সেগুলো কিনে নিয়ে যায়।’

প্রোজেক্টরে এনিমেশন দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি প্রশ্ন করব কেন? কেন আপনি এটা করবেন? আপনি কেন অলিম্পিক ভিলেজ আপনার শহরের জন্য বানাবেন, দর্শকদের জন্য নয়? এটা আপনি বাস্তুহারা মানুষদের জন্য তৈরি করুন, সেভাবেই এটার নকশা করুন। শপিং সেন্টার এবং স্কুলসহ এটাকে প্রকৃত ভিলেজে রূপ দিন। অলিম্পিক শেষে স্টেডিয়ামকে শিশুদের খেলার মাঠে রূপান্তর করুন। সুইমিং পুলগুলো কমিউনিটির জন্য উন্মুক্ত করে দিন।’

ড. ইউনূস বলেন, তখন আপনার হাতে ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন দিক খোলা থাকবে। বড় কোম্পানিগুলো দরপত্রে লড়বে। তাদের সঙ্গে চুক্তি করুন এবং বিপুল অর্থ আয় করুন। আপনি স্থানীয়দের কেন প্রশিক্ষণ দেবেন না? তাদের প্রশিক্ষণ দিন যাতে তারা অলিম্পিক শেষে এটাকে আয়ের উৎস হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।

তিনি বলেন, এভাবে অলিম্পিক ভিলেজ আপনার শহরের একটি অংশ হয়ে উঠবে। মানুষ সেখানে বসবাস করবে এবং কাজ করবে। সেখানে তারা পরিবার নিয়ে বেড়ে উঠবে এবং উদ্যোক্তায় পরিণত হবে।

শান্তিতে এই নোবেল জয়ী বলেন, এই উদ্যোগের পেছনে রয়েছেন প্যারিসের মেয়র। তিনি প্যারিসকে সামাজিক ব্যবসার বৈশ্বিক রাজধানী ঘোষণা করেছেন। তিনি আমাকে সেখানে ডেকে নিয়েছেন, অনারারি সিটেজেনশিপ দিয়েছেন। একটি ঐতিহাসিক সুন্দর ভবন দিয়ে বলেছেন- আপনার ইউনূস সেন্টার এখানে স্থাপন করুন, এখানে কাজ করুন।

ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোনও এই উদ্যোগের সঙ্গে আছেন জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, এটা একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ, এজন্য আমি সেখানে এতো সময় ব্যয় করছি।