যে পাঁচ কারণে ডুবলো আর্জেন্টিনার তরী
- Details
- by খেলাধুলা ডেস্ক
রাশিয়া বিশ্বকাপের শেষ ষোলোর প্রথম ম্যাচে পরিষ্কার ফেভারিট ছিল ফ্রান্স। আর্জেন্টিনার চেয়ে দলীয় শক্তির বিচারে এই মুহূর্তে ঢের এগিয়ে ফরাসিরা। কিন্তু এই পিছিয়ে থাকার হিসেবটা প্রথমার্ধে এক ফুৎকারে উড়িয়ে দিল লিওনেল মেসির দল। প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনার খেলা মাঠের এগারো ফরাসিকে শুধু নয়, গ্যালারিতে উপস্থিত দর্শক এবং টিভি পর্দার সামনে থাকা পুরো বিশ্বই চমকে দিয়েছিল।
আর্জেন্টিনার গ্রুপ পর্বের 'ভোতা' মাঝমাঠকে মনে হচ্ছিল বড্ড ধারালো। লিওনেল মেসিকে এই ম্যাচে আক্রমণভাগের মাঝখানে অর্থাৎ 'নাম্বার নাইনে'র পজিশনে খেলিয়েছেন হোর্হে সাম্পাওলি। ফলে মেসিকে প্রথমার্ধে ঠিকভাবে মাঝমাঠে উঠতে দেখা গেল না। কিন্তু তারপরও আর্জেন্টিনার মাঝমাঠ আর আক্রমণভাগের সমন্বয়কে মনে হচ্ছিল 'বেহালার মিস্টি সুর'। শুধু মাঝমাঠ নয়, প্রথমার্ধে ফ্রান্সের চেয়ে সব বিষয়েই এগিয়ে ছিলেন মেসিরা।
৬৩ শতাংশ বলের দখল ছিল আর্জেন্টিনার। অপর দিকে ফ্রান্সের দখলে বল ছিল ৩৭ শতাংশ। প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনা পাস খেলেছে ২৯১টি। আর ফ্রান্স ১৬৭টি। গোল লক্ষ্যে আর্জেন্টিনা শট নিয়েছে ৩টি, ফ্রান্স ১টি। প্রথমার্ধে দুদলই একটি করে গোল পেয়েছে। আর দ্বিতীয়ার্ধের আর্জেন্টিনাকে নিয়ে বলার তেমন কিছু নাই-ই। তড়িৎ আক্রমণে উঠতে চাওয়া ফ্রান্সের বিপক্ষে রীতিমতো নাকানি-চুবানি খেল আর্জেন্টিনার ডিফেন্স। দুবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের ডুবতে হলো এই কারণেই। নির্ধারিত ৯০ মিনিটে ৪-২ গোলে পিছিয়ে থাকা আর্জেন্টিনা শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা হেরেছে ৪-৩ ব্যবধানে। অর্থাৎ শেষ ষোলো থেকেই বিদায় নিশ্চিত হলো দুবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের।
কিন্তু প্রথমার্ধে যেভাবে খেললেন মেসি, ডি মারিয়ারা, তাতে এই বিদায়টা মেনে নিতে কষ্টই হবে আর্জেন্টিনা সমর্থকদের। চলুন আর্জেন্টিনার এভাবে বিদায় নেওয়ার কারণ খোঁজা যাক-
নিম্নমানের রক্ষণভাগ: আর্জেন্টিনার ডিফেন্স দুর্বলতা চিরাচরিত। কখনোই আলাদাভাবে নজড় কাড়তে পারেনি দেশটির ডিফেন্স। চলতি বিশ্বকাপেও বাজে খেলছিলেন আর্জেন্টিনার ডিফেন্ডাররা। তবে আজ ফ্রান্সের বিপক্ষে যতোটা বাজে খেললো আগের ম্যাচগুলোতে এতো বাজে ডিফেন্স দেখা যায়নি আর্জেন্টিনার। ম্যাচের মাত্র ১৩ মিনিট বয়স তখন কিলিয়ান এমবাপ্পেকে ডি-বক্সের ফেতর ফেলে দেন মার্কাস রোহো। এরপর রেফারির কঠোরতায় পেনাল্টি পায় ফরাসিরা।
দ্বিতীয়ার্ধে ফরাসিদের বিপক্ষে অার্জেন্টিনা ডিফেন্সের কলঙ্কটাই বেরিয়ে পড়েছে আজ। পল পগবা, অ্যান্থনি গ্রিজমান, কিলিয়ান এমবাপ্পেদের প্রতি আক্রমণগুলো যতোটা নিখুঁত ছিল আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগ ছিল যেন ঠিক ততোটাই বাজে আর আলগা। এমবাপ্পে ৬৪ ও ৬৮ মিনিটে গোল করে ম্যাচের গতিপথটাকেই পরিবর্তন করে দেন। আর এই দুটি গোলেই আর্জেন্টিনার রক্ষণ দুর্বলতা ছাপ দৃশ্যমান হলো। ম্যাচের ৫৭ মিনিটে এসে ২-২ গোলে সমতায় ফেরে ফ্রান্স। ফ্রান্সের পক্ষে গোল করেন বেঞ্জামিন প্যাভার্ড। ওই গোলটাতেও আর্জেন্টিনার রক্ষণদূর্বলতা ফুটে উঠেছে।
প্রতিআক্রমণে দুর্দান্ত ফ্রান্স: একদিকে আর্জেন্টিনার দুর্বল ডিফেন্স অন্যদিকে প্রতি আক্রমণে দুর্দান্ত খেলছিল ফ্রান্স। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম ২০-২৫ মিনিট দেখা গেল প্রতিআক্রমণের ভয়ঙ্কর ফ্রান্সকে। ডিফেন্স থেকে বল বেরুলেই পল পগবা, অ্যান্থনি গ্রিজমান, কিলিয়ান এমবাপ্পেদের ভোঁ-দৌড়। সামনে আর্জেন্টিনার রক্ষণ আলগাই ছিল। ফলে এই দুইয়ের সমন্বয়েই পরপর তিনটা গোল পেয়েছে ফ্রান্স। ফরাসিরা তিন গোল পাওয়ার পর ম্যাচ থেকে অনেকটাই ছিটকে গেছে আর্জেন্টিনা।
পগবা-গ্রিজমান-এমবাপ্পে: ফ্রান্সের হয়ে আজ দুর্দান্ত খেলেছেন ফ্রান্সের তিন তরুণ তারকা পল পগবা, অ্যান্থনি গ্রিজমান ও কিলিয়ান এমবাপ্পে। ডিফেন্স থেকে বল বের হলেই পগবাকে পাস দেওয়ার চেষ্টা করেছেন ফরাসিরা। বেশ কয়েকবার দেখা গেল বল ধরে অনেকটা দৌড়ে গ্রিজমান আর এমবাপ্পেকে খুঁজছেন পগবা। এই তিনজনের সমন্বয়ে বাধা হতে পারেনি আর্জেন্টিনার মাঝমাঠ ও রক্ষণভাগ। এটাও ডুবিয়েছে আর্জেন্টিনাকে।
সাম্পাওলির ফরমেশন: এই হারের জন্য আর্জেন্টিনা কোচ হোর্হে সাম্পাওলির ফরমেশনকেও হয়তো দায়ি করবেন কেউ কেউ। আজ ৪-৩-৩ ফরম্যাটে দল সাজিয়েছিলেন সাম্পাওলি। আক্রমণভাগে সেরা একাদশে দুই পাশে ছিলেন ক্রিস্টিয়ান পাভন ও ডি মারিয়া। তাদের মাঝখানে খেলেছেন লিওনেল মেসি। অর্থাৎ মেসিকে 'নাম্বার নাইন' হিসেবে খেলিয়েছেন সাম্পাওলি। আর্জেন্টিনা ৪-২ গোলে পিছিয়ে পড়ার আগে মেসিকে খুব একটা উপরে উঠে খেলতে দেখাও গেল না। 'নাম্বার নাইনে'র দাবি মেটাতেই হয়তো উপরে উঠতে পারছিলেন না মেসি। আর এটা বেশ ভুগিয়েছে আর্জেন্টিনাকে।
মাঝমাঠ থেকে আক্রমণভাগের যে একটা সেতুবন্ধন তৈরি করার কথা সেটাতে পিছিয়ে থাকতে দেখা গেছে আর্জেন্টিনাকে। প্রথমার্ধে যেভাবে আক্রমণের পর আক্রমণ করে যাচ্ছিল আর্জেন্টিনা, মেসি একটু উপরে খেললে হয়তো আরও সুযোগ তৈরি হতো। সেক্ষেত্রে আর্জেন্টিনা প্রথমার্ধে আরেকটা গোল পেলে ম্যাচের হিসেব পাল্টেও যেতে পারত।
আর্জেন্টিনার ঝিঁমিয়ে পড়া: ম্যাচের ৮৫ মিনিটে দেখা গেল ডি-বক্সে ভেতরে সুবিধাজনক স্থানে বল পেয়েও ঠিকমতো শট নিতে পারলেন না লিওনেল মেসি। শুধু ওই সময়ে নয়, ৪-২ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ার পরই যেন ঝিমিয়ে পড়তে দেখা গেছে আর্জেন্টিনাকে। থ্রো-ইনের আগে মাঠের বাইরে থেকে বল নেওয়া বা ফ্রি-কিক নেওয়ার সময় মনে হচ্ছিল, আর্জেন্টিনা ফুটবলাররা হার 'মেনে নিয়েছে'। ম্যাচের যোগ করা সময়ে (৯৩ মিনিটে) সার্জিও আগুয়েরোর গোলে ব্যবধান ৪-৩ হয়ে যায়। আর একটু এদিক-ওদিক হলেই তো অতিরিক্ত সময়ে যেতে পারত ম্যাচ। তখন যে কোনো কিছুই ঘটতে পারত। তবে আর্জেন্টিনা শুরুর গতিটা ধরে রাখলে অন্যরকমও হতে পারতো ম্যাচের ফলাফল।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.