লড়াইটা মেসি বনাম ফ্রান্সের

লিওনেল মেসির সঙ্গে কার দ্বৈরথটা জমে উঠবে? পল পগবা, অ্যান্তনিও গ্রিজম্যান, কিলিয়াম এমবাপ্পে, অলিভার জিরার্ড- নাকি অন্য কেউ। আসলে মেসির সঙ্গে ব্যক্তিগত নৈপুণ্য প্রদর্শনে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার মতো নির্দিষ্ট কোনো ফুটবলার খুঁজে বের করা মুশকিল। কারণ প্রতিপক্ষ একটা দল হিসেবেই খেলে আসছে। তাই ব্যক্তিগত দ্বৈরথ নয়, ম্যাচের আগে পুরো লড়াইটার আবহটা অন্যরকম। লড়াইটা কার্যত মেসি বনাম ফ্রান্সের!

আজ রাত আটটায় আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স মহারণ দিয়েই শুরু হচ্ছে ঘটন-অঘটনের রাশিয়া বিশ্বকাপের নকআউট পর্ব। যেখানে ফ্রান্সের শক্তি দলীয় পারফরম্যান্স। দলে নেই কোনো মহাতারকা। ধারাবাহিকভাবে দলীয় পারফরম্যান্স করে আসছে ফরাসিরা। অন্যদিকে আর্জেন্টিনার মূল শক্তির উৎস মেসি। তাই লড়াইটা একের সঙ্গে এগারোর।

গোল করা, গোলের জোগান দেওয়া। আর্জেন্টিনা দলের স্বপ্ন টিকিয়ে রাখার গুরু দায়িত্বটা যেন মেসির ওপরই বর্তেছে। অথচ দলে অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া, সার্জিও অ্যাগুয়েরো, গঞ্জালো হিগুয়েইনের মতো ফুটবলাররাও আছেন। কিন্তু ভরসা করার মতো নাম একটাই- মেসি। আর্জেন্টিন দল এবং সমর্থকরা মেসি-জাদু দেখার অপেক্ষায় বুঁদ হয়ে আছেন। সাদা-নীল শিবিরে তিনিই তো ধ্রুবতারা!

চলমান বিশ্বকাপের শুরু থেকেই ধুঁকছে আর্জেন্টিনা। নিন্দুকেরা তো এই দলটার বিদায় দেখে ফেলেছিলেন গ্রুপপর্বেই। কিন্তু ধীরে ধীরে গুছিয়ে উঠছে ল্যাটিন আমেরিকার দলটি। আগের ম্যাচে নাইজেরিয়াকে নাটকীয়ভাবে ২-১ গোলে হারিয়ে দলের আত্মবিশ্বাসও ফিরে এসেছে। সবচেয়ে আশার খবর হচ্ছে- মেসি এখনো সেরা ছন্দে নেই। কে জানে হয় তো নকআউট পর্বেই জাদুর বাক্স খুলবেন ছন্দের জাদুকর!

হিগুয়েইন, ডি মারিয়া, অ্যাগুয়েরো গোলমুখে যতই অসহায় থাকুক না কেন, মেসি দলে থাকায় আক্রমণভাগ খুব একটা ভাবায় না আর্জেন্টিনাকে। দুইবারের চ্যাম্পিয়নদের যত ভয় রক্ষণদুর্গ নিয়ে। এই বিশ্বকাপে ইতোমধ্যেই পাঁচ গোল হজম করেছে তারা। যা শেষ ষোলোতে ওঠা দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গোল খাওয়ার নজির। মার্কোস রোহো, নিকোলাস ওটামেন্ডি, হ্যাভিয়ের মাশ্চেরানোর নিষ্প্রভতা এর জন্য দায়ী।

আর্জেন্টাইনদের এই রক্ষণ দুর্বলতার সর্বোচ্চ সুযোগটাটা আজ নিতে চাইবে ফ্রান্স। শুধু রক্ষণ নয়, মধ্যমাঠের ভঙ্গুর দশা এবং সেরা গোলরক্ষকের অনুপস্থিতি। এর সঙ্গে ফরওয়ার্ডদের নিজেদের হারিয়ে খুঁজছে আর্জেন্টিনা। তবু এই দলটা আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখছে। নীল-সাদা শিবিরে বিশ্বের অন্যতম ফুটবলার মেসি আছেন বলেই প্রত্যাশার পারদটাও উর্ধ্বমূখি।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে মেসি কি পারবেন একা দলকে উদ্ধার করতে? দুঃসময় যে তারও পিছু নিয়েছে! তবু নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ফর্মে ফেরার একটা ইঙ্গিত দিয়েছেন মেসি। নিজে করেছেন এক গোল, সতীর্থ রোহোর জয়সূচক গোলেও ছিল তার অবদান। ফ্রান্সের বিপক্ষে তাই আজ সবটুকু নিংড়ে দিতে মরিয়া থাকবেন মেসি। ফরাসিদের সঙ্গে জিততে হলে তার সঙ্গে সতীর্থদেরও জ্বলে ওঠা খুব দরকার।

অবশ্য আর্জেন্টিনা দলে গোল করতে পারা খেলোয়াড়ের সংখ্যাটা কম হলেও ফ্রান্স শিবিরে অভাব নেই। গ্রিজম্যান, জিরার্ড, পগবা, ডেম্বেলে প্রত্যেকেই প্রতি ম্যাচে কেউ না কেউ পারফর্ম করেছেন। গোল করেছেন। আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগের পরীক্ষা নিতে আজ সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন তারা।

বিশ্বকাপের মঞ্চে এর আগেও দুইবার ফ্রান্সের সঙ্গে দেখা হয়েছে আর্জেন্টিনার। দুবারই গ্রুপপর্বে। দুবারই জয়ের নিশ্ছিদ্র পথে হেঁটেছে ল্যাটিন আমেরিকার জায়ান্টরা। আশার কথা হচ্ছে যে দুবার ফরাসিদের হারিয়েছে আর্জেন্টিনা দুটি আসরেই বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছে তারা। এবার ইতিহাসের পুণরাবৃত্তির স্বপ্ন দেখছেন মেসিরা।

শুধু বিশ্বকাপ পরিসংখ্যান নয়, এর বাইরেও মুখোমুখি লড়াইয়ে ফ্রান্সের চেয়ে ঢের এগিয়ে আছে আর্জেন্টিনা। নয়টি প্রীতি ম্যাচের মাত্র দুটিতে হেরেছে তারা। জয় চারটিতে। মেসিদের জন্য সবচেয়ে প্রেরণাদায়ক তথ্যটা হচ্ছে- ১৯৮৬ সালের পর ফ্রান্সের কাছে আর হারেনি আর্জেন্টিনা। অজেয় থাকার এই গৌরবটা মেসিরা ধরে রাখতে পারবেন তো?

অতীত পরিসংখ্যান প্রেরণা দিতে পারে দলকে। কিন্তু ময়দানের লড়াইয়ে সেদিকে তাকানোর সুযোগ কই। দুই দলের শক্তিমাত্রা এবং সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স যে এগিয়ে রাখছে ফ্রান্সকে। এমন মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে জয়ের জন্য হয়তো আজ প্রথাটা ভেঙে ফেলবেন আর্জেন্টিনা কোচ জর্জ সাম্পাওলি। আগের ১৪ ম্যাচে ১৪টি একাদশ খেলানো সাম্পাওলি নাকি এই ম্যাচে অপরির্বিত একাদশ মাঠে নামাবেন। আর্জেন্টাইন গণমাধ্যমের খবর এমনই।

বাংলাদেশ সময় রাত আটটায় কাজানে অনুষ্ঠিত হবে আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স হাইভোল্টেজ লড়াইটি। ম্যাচটি সরাসরি, সম্প্রচার করবে বিটিভি, মাছরাঙা, নাগরিক টিভি, সনি সিক্স ও সনি টেন ২।