যেসব কারণে এরদোয়ানের নিরঙ্কুশ জয়
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
তুরস্কের বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান। নিজের প্রতিষ্ঠিত দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি ২০০২ সালে ক্ষমতায় আসলে তিনি ২০০৩ সালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হন। নিষেধাজ্ঞার কারণে শুরুতেই তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
এরদোয়ান ২০১৪ সালের শেষ নাগাদ পর্যন্ত দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকায় তিনি প্রেসিডেন্ট হন। প্রথমবারের মতো ভোটের মাধ্যমেই তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এরপর তিনি দেশটিতে প্রেসিডেন্ট শাসিত ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নিয়ে গত বছর গণভোট দিয়েও বিজয় ছিনিয়ে আনেন।
বিশ্লেষকদের মতে, এরদোয়ানের ক্যারিশমাটিক রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে এবারের নির্বাচন ছিল সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং। কারণ রাষ্ট্রপতি শাসন চালু করায় মোটামুটি সবক’টি রাজনৈতিক দল তার বিরুদ্ধে জোট গড়ে নির্বাচনে অংশ নেয়। জোটে ছিল কট্টরপন্থী ইসলামপন্থী দলও। তার ওপর ছিল অর্থনীতির নেতিবাচক প্রবণতা এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির টালমাটাল অবস্থা।
তবে সব আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে জয় হয়েছে এরদোয়ানের জনপ্রিয়তার। দেশের জন্য তার ত্যাগের স্বীকৃতি ব্যালটে দিয়েছে তুরস্কের জনগণ। একসময় দুর্দশাগ্রস্ত তুরস্ককে ‘ইউরোপের রুগ্ন ব্যক্তি’ বলে ব্যঙ্গ করা হতো। গত প্রায় ১৫ বছরের বলিষ্ট নেতৃত্বে এখন গোটা ইউরোপের সামনে সেই তুরস্ককে চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত করেছেন তিনি। এরদোয়ানের জয়ের নেপথ্যে সেসব বিষয়গুলো বিবেচনা করা হচ্ছে সেগুলো হলো-
অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি: উসমানী খিলাফত ভেঙে যাওয়ার পর চরম দুর্দশার মধ্যে পড়া তুরস্ক রীতিমতো উপহাসের পাত্রে পরিণত হয়। দীর্ঘ সামরিক শাসনের কবলে পড়ে সর্বগ্রাসী দুর্নীতির কারণে পিছিয়ে পড়ে অর্থনৈতিকভাবে। এরদোয়ান দেশটিকে সেখান থেকে টেনে তোলেন।
ব্লুমবার্গের মতে, এরদোয়ান তার দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনে দেশের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৬ ভাগের উপরে রাখেন। বিশ্বমন্দা সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতি স্বাভাবিক রাখতে সক্ষম হন। স্বাস্থ্য খাতে তিনি বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেন। আধুনিক সড়ক ও রেল যোগাযোগের মাধ্যমে গোটা দেশকে যুক্ত করেন। চোখ ধাঁধাঁনো কয়েকটি সেতু ও টানেল তৈরি করেন।
সাম্প্রতিক সময়ে তুর্কি মুদ্রা লিরার মান কমে যাওয়া, সেনা অভ্যুত্থান চেষ্টায় জড়িত গুলেনপন্থীদের সঙ্গে বিরোধ, কুর্দিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান এবং এরদোয়ানের ওপর আন্তর্জাতিক চাপের কারণে বিরোধীরা মনে করেছেন, এবার জনগণ হয়তো পরিবর্তনের দিকে ঝুঁকবে।
তবে জনগণ তাদের ধারণা ভুল প্রমাণ করেছেন। পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ভাহাপ কারায়িলান এরদোয়ানকে ভোট দিয়েছেন বলে জানান। তিনি বলেন, সাময়িক নেতিবাচক কী ঘটেছে জনগণ তা ভুলে গেছে।
এরদোয়ানের শাসন আমলের আগের কথা স্মরণ করে ৬৩ বছর বয়সী কারায়িলান বলেন, ওই সময় আমার বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে গোটা রাত লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। আর এখন ফোনে একটি সিরিয়াল নিয়ে গেলেই হয়। হাসপাতালগুলো সুন্দর-ঝকঝকে।
অভ্যুত্থান চেষ্টাকারীদের প্রতি বিরোধী দলের সহানুভূতি: অভ্যুত্থান চেষ্টাকারীদের প্রতি বিরোধী দলের সহানুভূতি ভালোভাবে নেয়নি জনগণ। ওই অভ্যুত্থান চেষ্টা ঠেকাতে গিয়ে আড়াই হাজারের বেশি সাধারণ মানুষ মারা যায়। অভ্যুত্থান চেষ্টাকারীদের বিচার শুরু হলে বিরোধী দল বিচার বন্ধে দেশব্যাপী ‘ন্যায়বিচারের জন্য অভিযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করে।
এছাড়া সামরিক অপসাশনের প্রতি তুরস্কের জনগণ বরাবরই খুবই ক্ষুব্ধ। তারা কোনভাবেই গণতন্ত্রের বিকল্প হিসেবে সামরিক শাসন বেছে নিতে রাজি নয়। কার্যত ব্যালটে আবারো তারা সেটার প্রমাণ দিয়েছে।
অপারেশন ইউফ্রেতিস শিল্ড ও অলিভ ব্রাঞ্চ: যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো মিলে সিরিয়ায় তুর্কি সীমান্তে দেশটির চিরশত্রু কুর্দিদের একটি বিশেষ বাহিনী তৈরি শুরু করে। পরিস্থিতি টের পেয়ে প্রথমে অপারেশন ইউফ্রেতিস শিল্ড এবং পরবর্তীতে অলিভ ব্রাঞ্চ নামে সিরীয় সীমান্তে দুটি অভিযান চালায় তুর্কি সেনাবাহিনী।
দুটি অভিযানই সফলভাবে শেষ করে তুরস্কের সেনাবাহিনী। এছাড়া সিরিয়ার মানবিজেও অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন এরদোয়ান। এসব অভিযানের প্রতি ছিল জনগণের বিপুল সমর্থন। অথচ এসব অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল বিরোধী দল।
লক্ষ্যহীন বিরোধী দল: সর্বোপরি এরদোয়ানের দক্ষ নেতৃত্বের বিপরীতে তুরস্কের বিরোধী দলগুলোর অবস্থা ছন্নছাড়া। এরদোয়ান ও তার দল একেপি’র সমালোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল বিরোধীরা। এরদোয়ানের বিকল্প হিসেবে জনগণের জন্য তারা এর চেয়ে ভালো কী কী পদক্ষেপ নেবেন, সে বিষয়টি জনগণের সামনে স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.