শেষ মুহূর্তে চমকে দিলো ব্রাজিল

মুহুর্মুহু আক্রমণ। ব্রাজিলের আক্রমণভাগের ঝড় উঠেছিল কোস্টারিকা বিপদসীমায়। সব ঝড়-ঝাপ্টা একাই সামলে নিলেন কেইলর নাভাস। এদিন গোল পোস্টের নিচে রীতিমতো অতিমানব হয়ে উঠেছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের এই তারকা। কিন্তু প্রতিরোধের প্রাচীরটা শেষ অবধি ভেঙে ফেলে ব্রাজিল। পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা ফিরল স্বরূপে।

স্নায়ুক্ষয়ী ম্যাচটাতে শেষ পর্যন্ত ব্রাজিল জিতল ২-০ গোলে। দুটি গোলই আবার দ্বিতীয়ার্ধের ইনজুরি টাইমে। যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে অবিশ্বাস্য হয়ে ওঠা নাভাসের দুই পায়ের ফাঁক গলিয়ে বল জড়িয়ে দেন কোস্টারিকারে জালে। এই গোলের সঙ্গে সঙ্গে আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠে ব্রাজিল। কোচ তিতে তো উচ্ছ্বাসে দৌড় দিতে গিয়ে হুড়োহুড়িতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে যান।

আক্রমণ, গতি, বলের নিয়ন্ত্রণ, কর্নার কিক ম্যাচের সব দিকেই কোস্টারিকার সঙ্গে যোজন যোজন দূরত্ব ছিল ব্রাজিলের। সেলেকাওরা কতটা দাপুটে ফুটবল খেলেছে সেটা বলে দিচ্ছে ম্যাচের পরিসংখ্যান। এদিন ৭২ শতাংশ বল নিজেদের দখলে রেখে খেলেছে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।

পুরো ম্যাচে দশ কর্নারের ৯টিই পেয়েছে ব্রাজিল। ম্যাচের ২৫টি আক্রমণের ২২টিই করেছে সেলেকাওরা। তন্মধ্যে কোস্টারিকার গোলমুখেই দশটি শট। কিন্তু নির্ধারিত দেড় ঘণ্টায় ব্রাজিলের আটটি শট ঠেকিয়ে দেন নাভাস। বিস্ময়কর হচ্ছে ব্রাজিল গোলরক্ষক অ্যালিসনকে কোনো পরীক্ষাই দিতে হয়নি। গোল পোস্টের নিচে অলস সময় পার করেছেন তিনি। কারণ পুরো ম্যাচে কোস্টারিকা যে ব্রাজিলের গোলমুখে একটাও শট নিতে পারেনি!

তবে ব্রাজিল এগিয়ে যেতে পারতো ৭৮ মিনিটে। ডি-বক্সে কোস্টারিকা ডিফেন্ডারের আলতো ছোঁয়ায় পড়ে যান নেইমার। পেনাল্টির সিদ্ধান্ত জানান রেফারি। পাল্টা আবেদন জানায় কোস্টারিকা। পরে ভিডিও অ্যাসিসটেন্ট রেফারির সহায়তায় পেনাল্টি সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেন ম্যাচকর্তা।

ততক্ষণে ব্রাজিলিয়ানদের চূড়ান্ত নাভিশ্বাস উঠিয়ে ছেড়েছেন কোস্টারিকার শেষ প্রহরী নাভাস। হতাশায় মেজাজ হারিয়ে হলুদ কার্ড দেখেছেন নেইমার। সাবধানী কার্ড পেয়েছেন কুতিনহোও। দ্বিতীয়ার্ধের ইনজুরি টাইমেই ম্যাচের সব হতাশাকে উৎসবে পরিণত করেন এ যুগল।

তাতেই নিশ্চিত হয়ে গেল কোস্টারিকার বিদায়। কাঠখড় পোড়ানো এই জয়ে ‘ই’ গ্রুপ থেকে শেষ ষোলোর পথটা প্রায় নিশ্চিত করে ফেলল ব্রাজিল। ২৭ জুন গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে সেলেকাওদের প্রতিপক্ষ সার্বিয়া। একই দিন সুইজারল্যান্ডের মুখোমুখি হবে নাভাসের কোস্টারিকা।

ইনজুরি টাইমের প্রথম মিনিটে নাভাসকে বোকা বানিয়ে কোস্টারিকার জালে বল জড়িয়ে দেন কুতিনহো। বিশ্বকাপে এটা দ্বিতীয় গোল বার্সেলোনা তারকার। এই গোলের ওপর দাঁড়িয়ে জয়ের স্বপ্ন দেখছিল ব্রাজিল। ম্যাচের অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়েছে ছয় মিনিট। কিন্তু ম্যাচটার সুন্দর সমাপ্তির কারণেই বল আউট হচ্ছিল না। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ের সপ্তম মিনিটে এবার বাজিমাত নেইমারের। আরো একবার গ্যালারিতে হলুদ ঢেউ তোলে ব্রাজিল। পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত খেলার পরও গোল না পাওয়ার হতাশাটা তিনি কাটিয়ে উঠলেন।