সন্ধ্যায় ব্রাজিলের কোস্টারিকা পরীক্ষা

একটা দুশ্চিন্তার কথা শুনিয়েছেন ব্রাজিল কোচ তিতে। জানালেন দলের প্রাণভোমরা নেইমারের পুরোপুরি ফিট হয়ে উঠতে অন্তত পাঁচ ম্যাচ সময় লাগবে। উৎকণ্ঠার খবরের সঙ্গে একটা সুখবরও দিয়েছেন তিতে। নিশ্চয়তা দিলেন কোস্টারিকার বিপক্ষে শুরুর একাদশেই খেলবেন ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার।

প্রথম ম্যাচে ‘ই’ গ্রুপের সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছে ব্রাজিল। এ কারণেই কোস্টারিকা ম্যাচটা কিছুটা হলেও কঠিন হয়ে উঠছে সেলেকাওদের জন্য। আজ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ছয়টায় এই দলটার বিপক্ষেই আত্মবিশ্বাস ফেরানোর লড়াইয়ে নামবে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিতব্য ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে মাছরাঙা ও নাগরিক টিভি।

এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে নেইমারকে নিয়ে বড্ড ঝামেলায় ফেঁসে গিয়েছিল ব্রাজিল। সুইজারল্যান্ড ফুটবলারদের কড়া ট্যাকলের শিকার হয়ে নতুন করে ইনজুরিতে পড়েছিলেন আক্রমণভাগের এই সারথি। গত চারদিন পায়ের গোড়ালির ব্যথায় যথেষ্ঠ ভুগেছেন তিনি। তবে আশার খবর হচ্ছে- আজ দ্বিতীয় ম্যাচে ব্রাজিলের শুরুর একাদশেই থাকছেন নেইমার। ঘুরে দাঁড়ানোর ম্যাচে পিএসজি স্ট্রাইকারের দিকেই তাকিয়ে থাকবেন ব্রাজিলিয়ানরা।

প্রথম ম্যাচে অন্তত এক পয়েন্ট পেয়েছে ব্রাজিল। সেটাও পায়নি কোস্টারিকা। সার্বিয়ার কাছে ১-০ গোলে হেরে শুরু হয়েছে তাদের রাশিয়া বিশ্বকাপ অভিযান। টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে তাই ব্রাজিলের বিপক্ষে আজ জয়ের বিকল্প নেই উত্তর আমেরিকার প্রতিনিধি দলটির কাছে। লস টিকোসরা জয়ের আশা করতেই পারে। অঘটনের বিশ্বকাপে যে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়!

চলমান বিশ্বকাপের হট ফেভারিট মুষ্ঠিমেয় কয়েকটা দলের মধ্যে একটা ব্রাজিল। অথচ প্রথম ম্যাচে হোঁচট খেয়ে ফেভারিটের অবমূল্যায়ন করেছে সেলেকাওরা। পিছিয়ে থাকার পরও ব্রাজিলিয়ানদের রুখে দিয়েছে সুইসরা। নেইমারকে তো ঠিকভাবে দাঁড়াতেই দেননি সুইজারল্যান্ডের ফুটবলাররা।

তবে পিএসজি সুপারস্টার বোতলবন্দি থাকলেও ফিলিপ্পে কুতিনহো দুর্দান্ত এক গোল করে জানান দিয়েছেন বিশ্বকাপ মাতাতে চান তিনি। তাই শুধু নেইমার নয়, কুতিনহোকে নিয়েও ভাবতে হচ্ছে কোস্টারিকাকে। এ যুগল এক মঞ্চে জ্বলে উঠলে প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক কেইলর নাভাসকে অগ্নিপরীক্ষাই দিতে হবে।

একমাত্র দল হিসেবে একুশটি বিশ্বকাপ খেলছে ব্রাজিল। এভাবে কখনোই তাদের নক আউট পর্বের জন্য ভাবতে হয়নি। সাম্প্রতিক কয়েক দশকে গ্রুপপর্বেও হারার নজির নেই ব্রাজিলের। প্রথম রাউন্ডের ১৩ ম্যাচ ধরে অজেয় আছে সেলেকাওরা। দশ জয়ের পাশাপাশি তিনটিতে ড্র করেছে ল্যাটিন আমেরিকার পরাশক্তি দেশটি।

গত বিশ্বকাপে সবাইকে চমকে দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গিয়েছিল কোস্টারিকা। নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে বিশ্বকাপে এটাই তাদের সবচেয়ে বড় সাফল্য। ধারাটা অব্যাহত রাখার স্বপ্ন নিয়ে রাশিয়ায় এসেছে কোস্টারিকা। কিন্তু প্রথম ম্যাচে হারটা ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে তাদের। আজ তেমন কিছু হলে পঞ্চম দল হিসেবে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাবে কোস্টারিকা।

গত বিশ্বকাপের ‘জায়ান্ট কিলার’ তকমা পেয়েছিল উত্তর আরেমিকার দলটি। উরুগুয়ে, ইতালির মতো দলকে গ্রুপপর্বে হারিয়েছে তারা। শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডের সঙ্গে ড্র। বড় দলগুলোর সঙ্গে ভালো খেলার সামর্থ্য যে কোস্টারিকার আছে সেটা তারা বুঝিয়ে দিয়েছে গত বিশ্বকাপেই। তবে এবার তাদের সেই সুযোগটা দিতে চাইবে না ব্রাজিল। এমন একটা ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দেবেন থিয়াগো সিলভা। বৃহস্পতিবার এ ডিফেন্ডারের হাতে পুনরায় দলের দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন তিতে।

কারণ আজকের ম্যাচ তো বটেই, টুর্নামেন্টে সব ম্যাচকে ফাইনাল হিসেবে ধরে নিয়েছে সেলেকাওরা। সংবাদ সম্মেলনে ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার ফিলিপ্পে কুতিনহো সাফ বলে দিয়েছেন, ‘আগের ম্যাচ শেষেই বলেছিলাম আমাদের আরো উন্নতি করতে হবে। এই বিশ্বকাপে সবই ম্যাচই এখন আমাদের জন্য ফাইনাল। আমাদের আরো দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হবে যাতে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারি। তাই এই ম্যাচটা আমাদের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আমরা তিন পয়েন্টের জন্যই মাঠে নামব।’ চোটের কারণে গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচটা অবশ্য খেলতে পারছেন না ড্যানিলো। তার পরিবর্তে একাদশে দেখা যাবে ফাগনারকে।

এই যাত্রায় ব্রাজিল পাশে পাচ্ছে ইতিহাসকে। কারণ দশবারের সাক্ষাতে নয়বারই কোস্টারিকাকে হারিয়েছে সেলেকাওরা। ব্রাজিলের সঙ্গে দুবার বিশ্বকাপে দেখায় দুবারই হেরেছে উত্তর আমেরিকার দলটি। ল্যাটিন জায়ান্টদের সঙ্গে কোস্টারিকা মাত্র একবারই জিতেছিল। সেটাও ৫৮ বছর আগে, প্রীতি ম্যাচে। আপাতত সেই দিনটি ফেরনোর স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছে কোস্টারিকা।