দুই ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ হার অসিদের

গোটা দুনিয়া কাঁপছে ফুটবল বিশ্বকাপ জ্বরে। ফুটবল মহাযজ্ঞের মাসব্যাপী এই প্রতিযোগিতায় অনেকটা আড়ালে থেকে যাচ্ছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। ঘটন-অঘটনের রাশিয়া বিশ্বকাপের মধ্যেই ঝড় বয়ে গেল ওয়ানডে ক্রিকেটের ওপর দিয়ে। বলা যায়, ঝড়টা গেলো অস্ট্রেলিয়ার ওপর দিয়ে!

শুধু ঝড় বললে ভুল হবে। সাইক্লোন, টর্নেডো কিংবা প্রলয় বললেও সেটা অমূলক হবে না। মঙ্গলবার ট্রেন্ট ব্রিজে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল যা করেছে সেটার বিশেষণ হতে পারে এ রকম অনেক কিছুই। ওয়ানডেতে এক ইনিংসে রেকর্ড সর্বোচ্চ ৪৮১ রান করেছে ইংলিশরা।

স্বাগতিক শিবিরের ইনিংসটাকে হিমালয়, পাহাড়, পর্বত- হয়তো এর চেয়েও বেশি কিছু বলা যেতে পারে। টস হারের দুর্ভাগ্যই যেনো অসিদের দিলো দুঃসহ এক স্মৃতি।

ইংল্যান্ডের ছুড়ে দেওয়া অবিশ্বাস্য রানপাহাড়ের জবাব দিতে নেমে মাত্র ২৩৯ রানে গুটিয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়া। ২৪২ রানের বিশাল জয়ে দুই ম্যাচ বাকি থাকতেই পাঁচ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ জিতে গেছে স্বাগতিকরা। বৃহস্পতিবার রিভারসাইড গ্রাউন্ডে সিরিজের চতুর্থ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।

ইংল্যান্ড যে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে, তার একটা আভাস মিলেছিল শুরুতেই। প্রথম ১১৬ বলেই বিনা উইকেটে ১৫৯ রান তুলে ফেলেন ইংলিশ দুই ওপেনার জ্যাসন রয় ও জনি বেয়ারস্টো। ৬১ বলে ৮২ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে বিদায় নেন রয়। ফেরার আগে সাতটি চার ও চারটি ছক্কা হাঁকান তিনি।

তবে রয় থেমে গেলেও তাণ্ডব চলল বেয়ারস্টোর। অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের কচুকাটা করতে তার সঙ্গে যোগ দেন অ্যালেক্স হেলস। আউট হওয়ার আগে দুজনই খেলেন সমান ৯২টি বল। তাতেই সর্বনাশ হয়ে য়ায় অস্ট্রেলিয়ার। ১৫টি চার ও পাঁচ ছক্কায় ১৩৯ রানে ফেরেন বেয়ারস্টো।

১৬টি চার ও পাঁচ ছক্কার সুবাদে হেলস করেন দলীয় সর্বোচ্চ ১৪৭ রান। ইনিংসের শেষ দিকে এসে তাদের দেখানো পথে হাঁটেন অধিনায়ক ইয়ন মরগান। ৩০ বলে ৬৭ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেছেন ইংলিশ অধিনায়ক। ইনিংসে তিনটি চার ও ছয়টি ছক্কা হাঁকান মরগান।

এক দিনের ক্রিকেটে প্রথম ইনিংসে কোনো দল যখন পৌনে পাঁচশ রান তুলে ফেলে, ম্যাচটা আসলে শেষ হয়ে যায় সেখানেই। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং যেন হয়ে ওঠে, শুধুই খেলার জন্য খেলা। অসম্ভবের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে অসিদের টপ অর্ডারের সবাই আউট হয়েছেন উইকেটে থিতু হয়ে।

আর্চি শট (১৫), ট্রাভিস হেড (৫১), শন মার্শ (২৪), মার্কাশ স্টয়নিস (৪৪), অ্যারন ফিঞ্চ (২০), গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (১৯), অ্যাস্টন অ্যাগার (২৫), জি রিচার্ডসন (১৪) প্রত্যেকেই ছুঁয়েছেন দুই অংক। কিন্তু লড়াইয়ের দৃঢ়তা দেখাতে পারেনন কেউ।

ইংল্যান্ড যেখানে নির্ধারিত পঞ্চাশ ওভার খেলে চার উইকেট অক্ষত রেখেছে, সেখানে ইনিংসের ১৩ ওভার বাকি থাকতেই গুটিয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়া। অসিদের পতন হওয়া উইকেটের চারটি নিয়েছেন আদিল রশিদ, তিনটি শিকার মঈন আলির। দুই উইকেট নিয়েছেন ডেভিড উইলি।

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তো বটেই, ওয়ানডে ক্রিকেটে ইতিহাসে এটাই সবেচেয়ে বেশি রানের ব্যবধানের জয় ইংল্যান্ডের। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটা একাদশতম বড় জয়।

এর আগে ২০১৬ সালের আগস্টে এই ট্রেন্ট ব্রিজেই পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন উইকেটে ৪৪৪ রানের অবিশ্বাস্য সংগ্রহ করেছিল ইংল্যান্ড। কাল নিজেদের ছাড়িয়ে নতুন উচ্চতায় উঠে গেল ইংলিশরা। এর ঠিক দশ বছর আগে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে নয় উইকেটে ৪৪৩ রান করেছিল শ্রীলঙ্কা।