প্রতীক্ষার পালা শেষ, ফুটবল উৎসব শুরু

বছর, মাস, সপ্তাহ ও দিন শেষে ঘড়ির কাটা ছুঁয়ে দিলো মাহেন্দ্রক্ষণ। শুরু হয়ে গেলো ৩২ দলের ফুটবল-যুদ্ধ। জমকালো উদ্বোধনী শেষে শুরু হয়ে গেলো ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রথম ম্যাচ। যে ম্যাচে মস্কোর লুজনিকি স্টেডিয়ামে মুখোমুখি স্বাগতিক রাশিয়া ও গ্রিন ফ্যালকন সৌদি আরব।

ফুটবলের মানবিক আবেদন এতোটাই তীব্র যে, আগামী একটা মাস সারা পৃথিবী বুদ হয়ে থাকবে ফুটবলের জ্বরে। যা ভুলিয়ে দিবে সমাজের নানা স্তরের ভেদাভেদ। যা ভুলিয়ে দিবে বহু অকারণ ব্যস্ততা। যা পৃথিবীজুড়ে অন্তত তিনশ কোটি মানুষকে বসিয়ে রাখবে টিভির সামনে, চোখ রাখতে বাধ্য করবে মোবাইলে, কম্পিউটারে; যাতে বিশ্বকাপ বিশ্ব-যুদ্ধের একটা মুহূর্তও চোখের বাইরে চলে না যায়!

ফুটবলই একমাত্র খেলা, যার বিশ্ব আসরের একটা চোখ ধাঁধানো ড্রিবলিংয়ে বা একটা চিত্তহরি দৌড়ে পুরো পৃথিবী চিৎকার করে উঠবে সমস্বরে। ফুটবলের বিশ্ব আসরের ক্ষমতা এতোটাই পরাক্রমশালী যে, যেখানে একটা গোল এক করে দিতে পারে পুরো পৃথিবীর কণ্ঠ।

বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মূলত ঘুরতে থাকে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনাকে কেন্দ্র করে। সঙ্গে ইদানিং শোনা যায় জার্মানির নামের স্লোগান। শোনা যায় স্পেন-বেলজিয়ামের নামও। এ ছাড়া শোনা যেতো ইতালির নাম; কিন্তু এবার তাদের ভাগ্য তাদেরকে বিশ্বকাপ পর্যন্ত টেনে আনতে পারেনি।

তাতে অবশ্য বাংলাদেশের বিশ্বকাপ রঙ হারাচ্ছে না। ইতালিয়ান সাপোর্টাররা গায়ে চাপিয়েছেন অন্য দলের জার্সি, স্লোগান তুলছেন মেসি-আগুয়েরোদের নামে। কেউ বা মুখে তুলে নিয়েছেন নেইমারের নাম, কেউ বা ওজিল-গোটশেদের ছবিতে রাখছেন চোখ।

ধারণা করা হচ্ছে, এবারের বিশ্বকাপে মাঠেই উপস্থিত থাকবেন অন্তত ১৫ লাখ দর্শক। অর্থাৎ ম্যাচ প্রতি ২৩ হাজারের বেশি দর্শক মাতাবেন মাঠ। মাঠের বাইরের জায়ান্ট স্ক্রিনেও চোখ রাখবেন লাখ লাখ মানুষ। সারা বিশ্বের বড় বড় সব শহরের দোকানপাট, সুপারশপ, রেস্টুরেন্টেও টানানো হয়েছে জায়ান্ট স্ক্রিন। সেগুলোতেও চোখ রাখবেন অগণন ফুটবল-পাগল মানুষ।

সব মিলিয়ে আগামী একটা মাস কেবলই ফুটবলের। ফুটবলের সম্মোহনী আবেদনের কারণে বাংলাদেশে তো সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদুল ফিতরও কেমন যেনো বিবর্ণ হয়ে উঠেছে! বাংলাদেশ যদিও বিশ্বকাপে খেলে না, তারপরও বাংলাদেশিদের মধ্যে ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে উন্মাদনার কোনো কমতি নেই।

উল্টো বাংলাদেশের শহরে-গঞ্জে বিশ্বকাপের দলগুলোর পতাকা এতটাই দাপট নিয়ে উড়ে যে, মনে হয়, সে সব দেশের চেয়ে তাদের দলের সমর্থন বাংলাদেশেই বেশি। কে যেনো এই বিষয়ে কৌতুক করে বলেছেন, বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার যতো সমর্থক আছেন, আর্জেন্টিনার জনসংখ্যাকে দুই দিয়ে গুণ করলেও সংখ্যাটা ততো হবে না!

কথাটা কেবল কৌতুক হতে পারে, কিন্তু মিথ্যা নয় মোটেই! দীর্ঘ চার বছরের প্রতীক্ষার পালা শেষে যে উৎসব শুরু হলো, তাতে বাংলাদেশের মতো বুদ হয়ে থাকে খুব কম দেশই।