এই ‘অকৃতকার্য’ একাদশ তো বিশ্বকাপও জিততে পারে..

বিশ্বকাপ উন্মাদনা শুরু হয়ে গেছে। অংশ নিচ্ছে বাছাই করা বিশ্বের সেরা ৩২টি দল। এই ৩২ দলের পাঁচশ’র বেশি ফুটবলার নিজেদের শান দিয়ে প্রস্তুত। কিন্তু এই বিশ্বকাপ যারা খেলতে যাচ্ছেন তারাই কি শুধু বিশ্বের সেরা? বা যে ৩২টি দল বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছে তারাই কি বিশ্বের সেরা ৩২ দল? মোটেও না।

অনেক দলই আছে যাদের সামর্থ্য থাকলেও বিশ্বকাপ বাছাইয়ের মারপ্যাচে পড়ে বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ মিলেনি। আবার বাদ পড়া দলে অনেক ফুটবলার আছেন যাদের চেয়ে মানের দিক দিয়ে যোজন যোজন পিছিয়ে থাকা ফুটবলাররাও বিশ্বকাপ খেলতে পারছেন। ওই সব বাদ পড়া ফুটবলারদের নিয়েই এই আয়োজন।

রাশিয়া বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের মারপ্যাচে পরে ইতালি, নেদারল্যান্ডস, চিলির মতো দলগুলো বিশ্বকাপ খেলতে পারছে না। এই তিন দলের ফুটবলাররা তো নয়ই সাথে অনেক দলের নামকরা বহু ফুটবলাররাও বিশ্বকাপ খেলতে পারছেন না। চলুন তাদের নিয়ে একটা একাদশ বানানো যাক।

বাদ পড়া একাদশের গোলবারের নিচে জিয়ানলুইজি বুফন। এবারের মৌসুম শেষে জুভেন্টাস ছাড়া বুফন এখনো বিশ্বের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক। অনেক আগেই নামের আগে ‘কিংবদন্তি’ শব্দটা জুড়ে গেছে বুফনের। কিন্তু ইতালি বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব না পেরুতে পারাতে বুফনের বিশ্বকাপ খেলা হচ্ছে না। বাদ পড়াদের মধ্যে গোলরক্ষক হিসেবে বুফনই নিঃসন্দেহে বড় তারকা।

রক্ষণভাগে ইতালিরই জর্জো কিয়েলিনি, লিওনার্দো বেনুচ্চি ও ভার্জিন ফন ডাইককে রাখা যাবে। চতুর্থ ডিফেন্ডার হিসেবে ব্রাজিলের ডেভিড লুইজকে। ব্রাজিল সবার আগে রাশিয়া বিশ্বকাপ নিশ্চিত করেছে। কিন্তু দলীয় কম্বিনেশনের কারণে বিশ্বকাপ দলে জায়গা হয়নি লুইজের। এবারের মৌসুমে পিএসজির হয়ে দুর্দান্ত খেলেছেন লুইজ। এদিকে জুভেন্টাস এবং ইতালির হয়ে কিয়েলিনি, বেলুচ্চি আর নেদারল্যান্ডেসের ফন ডাইক তো এই মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে দামি ডিফেন্ডারই।

মাঝমাঠের রাজা নাইনগোলান, মিরালেম পিয়ানিচ, অ্যান্থেনিও ভ্যালেন্সিয়া দারুণ পছন্দ হতে পারে। ইকুয়েডরের ভ্যালেন্সিয়াকে এবারের প্রিমিয়ার লিগের সেরা রাইন উইং ব্যাক বলা হচ্ছে। রক্ষণ ও আক্রমণ দুই বিভাগেই সমান পারদর্শী এই ফুটবলার বিশ্বকাপ খেলতে পারছেন না। বসনিয়ার পিয়ানিচ ও বেলজিয়ামের নাইনগোলানও অসাধারণ ফুটবল খেলছেন অনেকদিন যাবত। শোনা যাচ্ছে, কোচের অপচ্ছন্দের কারণেই শুধু বেলজিয়ামের বিশ্বকাপ দলে সুযোগ হয়নি নাইনগোলানের।

আক্রমণভাগের কথা উঠলে সবার আগে আসবে আর্জেন্টিনার বাতিল ফরোয়ার্ড মাউরো ইকার্দির কথা। ইন্টার মিলানের হয়ে সম্প্রতি কয়েকটা বছর ইতালিয়ান সিরি ‘এ’ লিগে রীতিমতো জাদু দেখাচ্ছেন ইকার্দি। এবারের মৌসুমে তো ছিলেন রীতিমতো অবিশ্বাস্য। তারপরও আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ দলে জায়গা হয়নি তার। চিলি বিশ্বকাপের বাছাই পর্ব পেরুতে পারেনি বলে বিশ্বকাপ খেলা হচ্ছে না অ্যালেক্সিস সানচেসেরও। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে এবার আলাদাকরে যে কয়েকজন আলো ছড়িয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম এই সানচেস।

এদিক রিয়াল মাদ্রিদের ওয়েলস তারকা গ্যারেথ বেলও এবার বিশ্বকাপ খেলতে পারছেন না। অনেকদিন বিশ্বের দাবি ফুটবলারের মুকুট নিজের মাথায় রাখা বেল গত ইউরোতে ওয়ালসের হয়ে দুর্দান্ত পারফর্ম দেখিয়েছিলেন। বিশ্বকাপ বাছাইয়েও দারুণ খেলেছেন তিনি। এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা ফুটবলারের তালিকা করলে বেলের নাম খুব নিচে থাকবে না। কিন্তু দল বাছাই পর্ব পেরুতে পারেনি বলে তার বিশ্বকাপ খেলা হচ্ছে না। এই তিনজনকে আক্রমণভাগে রাখলে যে কোনো রক্ষণই কাঁপিয়ে উঠবে।

এবার পুরো দলটার দিকে একবার নজর দিন তো। মনে হবে হয়তো, এই ‘অকৃতকার্য’ দলটা তো ব বিশ্বের যে কোনো দলকেই হারিয়ে দিতে পারে। আলাদা করে বিশ্বকাপ খেলা সুযোগ পেলে এই একাদশ তো বিশ্বকাপও জিততে পারে।

গোলরক্ষক: জিয়ানলুইজি বুফন।

ডিফেন্ডার: জর্জো কিয়েলিনি, ভার্জিন ফন ডাইক , লিওনার্দো বেনুচ্চি, ডেভিড আলাবা।

মিডফিল্ডার: রাজা নাইনগোলান, মিরালেম পিয়ানিচ, আন্তোনিও ভ্যালেন্সিয়া।

ফরোয়ার্ড: অ্যালেক্সিস সানচেজ, গ্যারেথ বেল ও মাউরো ইকার্দি।