দল পর্যালোচনা: মরক্কোর চ্যালেঞ্জ গ্রুপপর্বেই

মরক্কো। ফুটবল মানচিত্রে আফ্রিকান পরাশক্তি তারা। অথচ আফ্রিকা অঞ্চলের এটাই একমাত্র দেশ যেটি আফ্রিকান ইউনিয়নের সদস্য নয়। মরক্কো আরব লিগের সদস্য। দেশটি এক সময় রোমানদের দখলে ছিল। পরবর্তীতে দেশটিকে শাসন করে ফ্রান্স ও স্পেন। স্প্যানিশ এবং ফরাসিদের কাছ থেকেই মূলত ফুটবলে হাতেখড়ি হয় আফ্রিকান দেশটির।

অ্যাথলেটিক্স দুনিয়ায় মরক্কো বড় একটা নাম। আফ্রিকান দেশটিতে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের জনপ্রিয়তা অনেক। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জনপ্রিয়তা বাড়ছে ফুটবলেরও। আরেকবার বিশ্বমঞ্চের টিকিট পাওয়াতে নড়েচড়ে বসেছেন দেশটির জনগণও। নতুন স্বপ্নের বিভোর হয়ে আছেন তারা। দেশের মানুষকে আনন্দে মাতাতে মরিয়া হয়েই তাই রাশিয়ার মঞ্চে নামবে মরক্কো ফুটবল দল।

আফ্রিকান মহাদেশে পরাশক্তির অভাব নেই। বাছাইপর্বের শেষ ম্যাচে জায়ান্ট দল কোস্টারিকাকে হারিয়ে দুই দশকের আক্ষেপ ঘোচায় মরক্কো। এনিয়ে পঞ্চমবার বিশ্বকাপের মূলপর্বের টিকিট পেল আফ্রিকান দেশটি। ১৯৭০ সালে ফুটবল মহাযজ্ঞে অভিষেক হয়েছিল মরক্কোর। আটলাস লায়নরা অবশ্য ওই আসরে বিদায় নিয়েছিল প্রথম রাউন্ড থেকেই।

কিন্তু পরের বিশ্বকাপ খেলার জন্য তাদের অপেক্ষা করতে হয় চারটি আসর অবধি। মরক্কো ফিরে আসে ১৯৮৬ সালে, মেক্সিকোর মঞ্চে। এবার অবশ্য চমক নিয়েই হাজির হয়েছিল তারা। আফ্রিকান প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপে জয় তুলে নেয় মরক্কো। ইতিহাস গড়া ওই জয়ের ওপর দাঁড়িয়ে প্রথমবারের মতো পরের রাউন্ডে উঠে যায় আটলাস লায়নরা।

কিন্তু উদ্যমটা ধরে রাখতে পারেনি মরক্কো। এক আসর তাদের দেখতে হয় টেলিভিশনে। ১৯৯৪ ও ১৯৯৮ পরপর দুই বিশ্বকাপ খেললেও প্রথম রাউন্ডের বাধা আর পাড়ি দিতে পারেনি মরক্কো। এবার ঐতিহ্য ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে মাঠে নামছেন দেশটির এক ঝাঁক প্রতিভাবান ফুটবলার। ব্যর্থতা ভুলে খুব করেই মরক্কো চাইছে নক আউট পর্বে উঠতে।

অবশ্য মরক্কোর আশাটা বাঁচিয়ে রাখা কঠিন হয়ে উঠবে। কারণ ‘বি’ গ্রুপে তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে আছে সাবেক চ্যাম্পিয়ন স্পেন ও বর্তমান ইউরোর শিরোপাধারী ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল। গ্রুপপর্বের অন্য ম্যাচে মরক্কোর প্রতিদ্বন্দ্বী এশিয়ার পরাশক্তি ইরান। ১৫ জুন এই দলটার বিপক্ষের ম্যাচ দিয়ে সুদিন ফেরানোর লড়াইয়ে নামবে আটলাস লায়নরা।

এ যাত্রায় মরক্কোকে আশা দেখাচ্ছে সাম্প্রতিকালে তাদের দারুণ পারফরম্যান্স। এ বছরই আফ্রিকান নেশনস চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছে দলটি। টুর্নামেন্টজুড়ে দাপুটে পারফরম্যান্সে র‌্যাঙ্কিংয়ে ৪২ নাম্বারে উঠে এসেছে মরক্কো। মরক্কো ফুটবলের এই হাওয়া বদলের নেপথ্য নায়ক হার্ভে রেনার্ড। ফ্রেঞ্চ এই কোচের অধীনেই দীর্ঘ বিশ বছরের আক্ষেপ দূর করেছে আফ্রিকান প্রতিনিধি দলটি।

ফিফার বেঁধে দেওয়া সময়ের শেষ দিন অর্থাৎ ৪ জুন আসন্ন বিশ্বকাপের চূড়ান্ত দল দিয়েছেন মরক্কো কোচ বেনার্ড। তার ২৩ সদস্যের দলের নেতৃত্বটা থাকবে জুভেন্টাস ডিফেন্ডার মেধি বেনাতিয়ার কাঁধে। জুভদের হয়ে বিদায়ী মৌসুমে দ্যুতি ছড়িয়ে বেনাতিয়া জানান দিয়েছেন বিশ্বকাপে দারুণ কিছু করতে মুখিয়ে আছেন তিনি।

রক্ষণদুর্গে বেনাতিয়া পাশে পাচ্ছেন রিয়াল মাদ্রিদের উঠতি তারকা আশরাফ হাকিমিকে। এই দুজনের সঙ্গে রক্ষণভাগ সামলাবেন লিঁল তারকা হামজা মেন্ডিল। তবে মরক্কোর মধ্যমাঠের ভরসা ফসাল ফজর এবং শালকে জিরো ফোর ফুটবলার আমিন হেরিত। তবে আক্রমণভাগের নেতৃত্বে দেখা যাবে আয়াক্স তারকা হাকিম জাইয়েজকেকে। নিজেদের দিনে এসব ফুটবলার যে কোনো বড় দলকে হারিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য রাখেন। তাই পর্তুগাল ও স্পেনের নির্ভার থাকার হওয়ার সুযোগ নেই।