ফিরে দেখা ১৯৯৪ বিশ্বকাপ: ম্যারাডোনার ডোপ-কেলেঙ্কারি
- Details
- by খেলাধুলা ডেস্ক
৪ জুলাই, ১৯৮৮। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য স্বপ্নের একটা দিন হয়ে এলো। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ আয়োজনের স্বত্ব পায় উত্তর আমেরিকার দেশটি। অথচ তখনো দেশটিতে জমে ওঠেনি ফুটবল লিগ। ঘাটতি ছিল তাদের ঘরোয়া ফুটবলে। এমন একটি জায়গায় ফুটবল মহাযজ্ঞ কতটা সফল হবে প্রশ্ন জেগেছিল তা নিয়েই। কিন্তু স্বাগতিক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র চমকে দেয় গোটা বিশ্বকে। আর্থিকভাবে সবচেয়ে সফল বিশ্বকাপ উপহার দেয় তারা।
শুধু জমকালো আয়োজন বলে নয়, ১৯৯৪ বিশ্বকাপ অনেক কারণেই গেঁথে থাকবে ফুটবলপ্রেমীদের মনে। ওই বিশ্বকাপ দিয়েই শেষ হয়ে যায় সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার দিয়েগো ম্যারাডেনার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। ডোপ কেলেঙ্কারিতে পড়ে নিষিদ্ধ হন আর্জেন্টাইন মহাতারকা।
আসরটা দুঃস্বপ্ন হয়ে থাকল কলম্বিয়ার তারকা ফুটবলার আন্দ্রেস এস্কুবারের জন্যও। একটি আত্মঘাতী গোল বিশ্বকাপ শেষে কেড়ে নেয় তার প্রাণ। ম্যারাডোনার-এস্কুবার দুঃস্বপ্নের আসরটা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকল ব্রাজিলের কাছে। দুই যুগের বিরতি দিয়ে আবারো বিশ্বকাপ জিতে নেয় ল্যাটিন পরাশক্তিরা। সাম্বার দেশটি ঘরে তোলে বিশ্বকাপের চতুর্থ শিরোপা।
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে শুরু করে ফুটবল বিশ্বকাপের জনপ্রিয়তা। অসংখ্য দেশ বৈশ্বিক আসরে অংশ নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। এমন চাপের মুখে দ্বিতীয় ও শেষবারের মতো ২৪ দলের বিশ্বকাপ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয় ফিফা। আগের আসরে দ্যুতি ছড়ানোয় এই আসরে আফ্রিকান দলের সংখ্যা বাড়িয়ে তিনটিতে নিয়ে যায় ফিফা।
সুযোগটা কাজে লাগায় নাইজেরিয়া। আফ্রিকা অঞ্চল থেকে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের মূলপর্বে জায়গা করে নেয় সুপার ঈগলরা। তাদের মতো যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বমঞ্চে অভিষেক হয় সৌদি আরব এবং গ্রিসেরও। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর নতুন দল হিসেবে এই আসরের মূলপর্ব নিশ্চিত করে রাশিয়া। পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানি মিলিয়ে একটা দলকেই দেখতে পায় ১৯৯৪ বিশ্বকাপ।
সবমিলিয়ে ইউরোপ অঞ্চল থেকে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপে অংশ নেয় ১৩টি দল। এশিয়ার দুটি, উত্তর আমেরিকার দুটি এবং দক্ষিণ আমেরিকার চারটি দেশ দেখা যায় ১৫তম আসরে। অংশ নেওয়া দলগুলো হচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্র (স্বাগতিক), জার্মানি (চ্যাম্পিয়ন), গ্রিস, বেলজিয়াম, বুলগেরিয়া, সৌদি আরব, ইতালি, বলিভিয়া, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো, নাইজেরিয়া, নরওয়ে, দক্ষিণ কোরিয়া, আয়ারল্যান্ড, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, রাশিয়া, রোমানিয়া ও মরক্কো।
আগের দুই আসরে মাঠ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন ম্যারাডোনা। আর্জেন্টাইন সুপারস্টার গ্রুপপর্বের প্রথম দুই ম্যাচে তো অতিমানব হয়ে উঠেছিলেন। তখনই সন্দেহটা জাগে ম্যাচকর্তাদের মনে। নাইজেরিয়া বিপক্ষের ম্যাচের জন্য একটু বেশিই আলোচিত হয়ে উঠেছিলেন ম্যারাডোনা। ডোপ টেস্টে ডাকার পরে তার শরীরে নিষিদ্ধ মাদকের উপস্থিতি পাওয়া যায়। শেষ হয়ে যায় ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা অধ্যায়।
প্রথম দুই ম্যাচে জয় দিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠে যায় আর্জেন্টাইনরা। কিন্তু নক আউট পর্বের শুরুতে রোমানিয়ার বিপক্ষে বিবর্ণ ম্যারাডোনাবিহীন আর্জেন্টিনা। পরপর দুই আসরের ফাইনালিস্টরা ছিটকে যায় বিশ্বকাপ থেকে। কিন্তু আর্জেন্টিনা নয়, পুরো আসরে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন শুধুই একজন। তিনি ম্যারাডোনা।
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপটা দুঃস্মৃতির আসর হয়ে এসেছিল কলম্বিয়ার জন্যও। ল্যাটিন দেশটি বাদ পড়ে প্রথম রাউন্ডেই। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে গ্রুপপর্বের ম্যাচে আত্মঘাতী গোল করে বসেন কলম্বিয়া অধিনায়ক এস্কুবার। ন্যূনতম ব্যবধানে ওই হারটা শেষ করে দেয় কলম্বিয়ানদের স্বপ্ন। ক্ষোভে হতাশায় কলম্বিয়ার সেই ডিফেন্ডারকে বিশ্বকাপ শেষে গুলি করে মেরে ফেলেন দেশটির এক দুর্বৃত্ত।
ওই দুটি দুর্ঘটনা বাদ দিলে যুক্তরাষ্ট্র আসরটা ছিল শুধু ব্রাজিলের জন্য। কেন তারা টুর্নামেন্টের হট ফেভারিট ছিল সেটা বিশ্বকাপ জিতেই বুঝিয়ে দিয়েছে রোমারিও, দুঙ্গা, বেবেতোর দুরন্ত ব্রাজিল। রোমারিওর আগুনঝরা পারফরম্যান্সে চ্যাম্পিয়ন হয় সাম্বার দেশটি।
অথচ বিস্ময়কর হচ্ছে- ওই আসরের সেরা ফুটবলার রোমারিওকে দলের বিশ্বকাপ যাত্রাতেই রাখার পক্ষে ছিলেন না ব্রাজিল কোচ কার্লোস আলবার্তো পেরেরা। তৎকালীন ব্রাজিলের প্রধানমন্ত্রী অনুরোধ করলে রোমারিওকে সুযোগ দেন পেরেরা। দেশকে স্বপ্নের শিরোপা এনে দিয়ে আস্থার প্রতিদান দেন এই কিংবদন্তি।
পুরো আসরে ঝড়ের বেগে ছোটা ব্রাজিল অবধারিতভাবেই ফাইনালে উঠে যায়। রোমারিও, বেবেতো এবং দুঙ্গার দুর্ধর্ষ রসায়নের সামনে প্রতিপক্ষ দলগুলোর অসহায় আত্মসমপর্ণ দেখেছে ফুটবল দুনিয়া। সেলেকাওদের সামনে প্রতিরোধটা এলো ফাইনালে। টুর্নামেন্টজুড়ে গোল উৎসব করা ব্রাজিল নির্ধারিত দেড় ঘণ্টায় ইতালির জালে বলই জড়াতে পারেনি। অতিরিক্ত ত্রিশ মিনিটের লড়াই শেষেও ফলটা থাকল নিস্ফলা।
লস এঞ্জেলস ফাইনালে দুই ঘণ্টার হাড্ডাহাড্ডি গোলশূন্য লড়াই শেষে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। এটাই প্রথম ফাইনাল যেখানে নেওয়া হলো পেনাল্টির আশ্রয়। ভাগ্য নির্ধারণীর কয়েক মিনিটের স্নায়ুক্ষয়ী সেই লড়াইয়ে বাজিমাত করে ব্রাজিল। টাইব্রেকারে ৩-২ গোলে জিতে চ্যাম্পিয়ন হয় সেলেকাওরা।
ইতালির পক্ষে যে তিনজন পেনাল্টি মিস করলেন তাদের মধ্যে ছিলেন রার্বাতো ব্যাজ্জিও-ও। অথচ তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সুবাদে ফাইনালে উঠেছিল ইতালি। সেই ব্যাজ্জিও-ই ফাইনালে পেনাল্টি মিস করে শেষ দৃশ্যে হাজির হলেন খলনায়ক চরিত্রে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.