বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দল অবিশ্বাস্য এক কাজ করে ফেলেছে। বছরের পর পর ফাইনালে উঠে মুখ কালো করে ফিরেছেন পুরুষ ক্রিকেটাররা। একটা বহুজাতিক আসরও তারা জিততে পারেননি। জিততে পারেননি এমন কি ত্রিদেশীয় কোনো সিরিজও। কিন্তু নারী দল জিতে ফেললো এশিয়া কাপ! এশিয়ান নারী ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্ব এখন বাংলাদেশের!

bangladesh women team beat india in asia cup final

দেশকে প্রথম বহুজাতিক শিরোপা এনে দিলেও নারীদের জন্য এখনো কোনো পুরস্কারের ঘোষণা শোনা যায়নি। দেশের কোথাও তাদের বিজয়ে উৎসব হয়েছে, এমন খবরও নেই। নারীদের ক্রিকেট বাংলাদেশে ঠিক কোথায় আছে, এই পরিস্থিতিই যেনো তা বর্ণনা করছে সবচেয়ে ভালো উপায়ে।

এর একটা মূল কারণ হতে পারে নারীদের এশিয়া কাপ জয়ের মহিমাটা বুঝতে না পারা। সালমা খাতুন আর জাহানারা আলমরা কতো বড় কীর্তি গড়েছেন, তা ক্রিকেটের অনেক মনোযোগী সমর্থকও হয়তো টের পাচ্ছেন না। টের পেলে নিশ্চয় উৎসবের একটা রঙ ঠিকই ছলকে উঠতো।

এবার নিয়ে ষষ্ঠবার অনুষ্ঠিত হলো নারীদের এশিয়া কাপ। এবারের আগে প্রতিবারই যেখানে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত। আসরটা যেনো ক্রমেই হয়ে উঠছিলো কে হবে রানার্সআপ হবে, সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আয়োজন। আগের পাঁচ ভারত শিরোপা তো হারায়ইনি, একটা ম্যাচও হারেনি তারা।

এশিয়া কাপে ভারতীয় নারী দলকে প্রথম হারের তেতো স্বাদটা আস্বাদন করায় বাংলাদেশই। এরপর ফাইনালেও যে নারী ক্রিকেটের অন্যতম সেরা তিন তারকা হারমানপ্রিত কউর, মিতালি রাজ ও স্মৃতি মান্দানাদের দলকে বাংলাদেশ হারিয়ে দিবে, তা ছিলো কল্পনাতীত।

কিন্তু সালমারা করলেন সেটাই। কল্পনার আকাশকে নামিয়ে আনলেন বাস্তবতার সবুজ জমিনে। সেই জমিনে বিশ্বাসের রঙ ও সাহসের তুলি দিয়ে আঁকলেন অসাধারণ এক বিজয়ের উপাখ্যান। ভারতীয় নারী দলের মহাপরাক্রম তাতে প্রথমবার বাধার শিকার হলো এবং বাংলাদেশ পেলো এই সাহস যে, বহুজাতিক শিরোপা জয়ের শক্তিও তাহলে আমাদের আছে!

যে নারীরা বাংলাদেশের পতাকা তুলে ধরলেন এভাবে, সেই তারা ঘরোয়া ক্রিকেটে সহ্য করেন এমন বৈষম্য, যা বর্ণনা করাও তাদের জন্য লজ্জার। সালমারা বেতন পান ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। এশিয়া কাপের ফাইনালে সালমারা যাদের হারিয়েছেন, সেই ভারতীয় নারী ক্রিকেটারদের বেতন এর চেয়ে ১৮ গুণ বেশি! ইংল্যান্ডের নারীরা পান এর চেয়ে ২২ গুণ বেশি। অস্ট্রেলিয়ানরা পান ৩২ গুণ বেশি!

সালমাদের পরিস্থিতি এবার বদলাবে, এমন আশা করাই যায়। কিন্তু আশাটা পূরণ হবে কিনা, সে নিশ্চয়তা কে দিবে? এই প্রশ্নের উত্তর নেই।

প্রথমবার ফাইনালে উঠেই নারীরা যে অর্জনে দেশকে গর্বিত করলেন, মূল জাতীয় দল বহুচেষ্টায়ও তা পারেনি। বহুজাতিক কোনো ক্রিকেট আসরের ফাইনালে বাংলাদেশ প্রথম ওঠে ২০০৯ সালে। ঘরের মাঠে অনুষ্ঠেয় ত্রিদেশীয় সিরিজের সেই ফাইনালে ছয় রানে শ্রীলঙ্কার পাঁচ উইকেট ফেলে দিয়েও বাংলাদেশ হেরে যায়।

পরে ২০১২ সালে ঘরের মাঠের এশিয়া কাপেও পাকিস্তানের বিপক্ষে সহ্য করতে হয় দুই রানের বুক ভারি করা হার। সেই কষ্ট মুছে যেতে পারতো ২০১৬ সালের এশিয়া কাপে। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে সেই ফাইনালে দাঁড়াতেই পারেননি মাশরাফিরা। চলতি বছর ঘরের মাঠে ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজের ফাইনালেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সহ্য করতে হয় হার। এরপর শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত হওয়া নিদাহাস ট্রফির ফাইনালেও ঘুরেফিরে সেই গল্পেই চোখ মুছতে হয় সমর্থকদের।

কিন্তু নারীরা দেখালেন, ফাইনাল মানেই মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়া নয়। বিশ্বাস ও সাহসের দৃঢ়তা থাকলে ফাইনালের ট্রফি নিয়েও করা যায় বিজয়োৎসব। যদিও সেই উৎসবের ঢেউ দেশে ছড়িয়ে পড়ে না, যদিও আসে না বড় বড় পুরস্কারের কোনো ঘোষণা।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.