দেরাদুনে সাকিবদের নিদারুণ যন্ত্রণা

একটা ম্যাচ এখনো বাকি। তার আগেই আফগানিস্তানের কাছে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হেরে গেলো বাংলাদেশ। গোলমেলে আবহাওয়ার জন্য বিখ্যাত ভারতের উত্তরখান্ডের রাজধানী দেরাদুন। সেখানে গোলমেলে হয়ে গেলো বাংলাদেশ দলের ভাগ্যও। দেরাদুন সাকিব আল হাসান ও তার দলকে দিলো নিদারুণ যন্ত্রণা। যে যন্ত্রণা বর্ণনার অতীত হয়ে যেতে পারে সাত জুনের ম্যাচেও যদি সাকিবরা হেরে বসেন।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ মাঠে নেমেছিলো সিরিজ বাঁচানোর তাগিদ নিয়ে। কিন্তু সেই তাগিদটা সাকিবদের খেলায় থাকলো অদৃশ্য। ব্যাটে-বলে এবং ফিল্ডিংয়ে, কোনো বিভাগেই বাংলাদেশকে আফগানিস্তানের চেয়ে শ্রেয়তর দল মনে হলো না। এমন কি বাংলাদেশ যে প্রায় ২০ বছর ধরে টেস্ট ক্রিকেট খেলছে, গত তিন বছরে বাংলাদেশ যে ওয়ানডেতে প্রায় পরাক্রমশালী হয়ে উঠেছে, তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের দ্বিতীয়টিতেও সে সবের কোনো ছাপ রাখতে পারলেন না সাকিবরা।

প্রথম ম্যাচে টস জিতে বোলিং নিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন বলে এবার ব্যাটিং বেছে নেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। দলেও আসে দুটি পরিবর্তন। কিন্তু কোনো কিছুই ভাগ্যে কোনো পরিবর্তন আনতে পারলো না। প্রথম ম্যাচে ৪৫ রানের হার হজম করার পর এবার গিলতে হলো ছয় উইকেটের পরাজয়ের গ্লানি।

গ্লানি? খেলাধুলায় হারলে আবার গ্লানি কিসের? অনেকে হয়তো এই প্রশ্ন করে দেশপ্রেমের গল্প বলা শুরু করে দিতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা বলছে, দুই দেশের ক্রিকেটীয় ঐতিহ্যে এখনো বিপুল পার্থক্য। জিম্বাবুয়ে ছাড়া আফগানিস্তান আর কোনো টেস্ট দলের বিপক্ষে কোনোদিন সিরিজ জিতেনি। এতোদিনের এই সত্যটা শেষ হয়ে গেলো মঙ্গলবার নামতে থাকা রাতের প্রথম প্রহরে। এবার টেস্টখেলুড়ে বাংলাদেশকেও ঘায়েল করলো আফগান যোদ্ধারা। লিখলো নতুন ইতিহাস।

এই সিরিজ হারকে গ্লানিকর মনে হচ্ছে দুই দেশের ক্রিকেটীয় ঐতিহ্য, শক্তি-সামর্থ্য ও অভিজ্ঞতার তুমুল ব্যাবধানের কারণে। সাকিব-তামিমদের প্রায় বিনাযুদ্ধের দুই পরাজয় সেই গ্লানিকে করে দিচ্ছে মর্যাদাহানিকরও।

আগে ব্যাটিংয়ে নেমে এবারও বাজে শুরু করে বাংলাদেশ। আগের ম্যাচের মতো প্রথম বলে উইকেট না গেলেও, দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে ঠিকই পা হড়কান লিটন দাস। গত ম্যাচে তার ব্যাটে দেখা গেছে নিঃসঙ্গ যোদ্ধার আত্মপ্রত্যয়। কিন্তু এবার লিটন নিজের পাজোড়া শক্ত করে উইকেটে দাঁড়ই করাতে পারলেন না।

সাব্বির এসে শাপুর জাদরানকে এক ওভারে পরপর তিন চার মেরে প্রথম ম্যাচের হারের ক্ষতে প্রলেপ দেয়ার যে আভাস দিলেন, তাও উধাও হয়ে যায় কিছুক্ষণের মধ্যেই। মুশফিক এবার কিছুটা দৃঢ়তার সাক্ষর রাখতে যাওয়ার চেষ্টা করতে করতেই বিদায় নেন। সাকিব এসেও করতে পারেননি কিছু। অন্য প্রান্তে তামিম অবশ্য কিছুক্ষণ টিকে থাকলেন, কিন্তু তাতে দুই দলের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দেয়ার কোনো প্রচেষ্টা চোখে পড়লো না। ধীর ব্যাটিংয়ে তামিম বরং হয়ে থাকলেন বিরক্তি উদ্রেককারী।

তামিমের বিরক্তি দূর করার কাজটা করেন রশিদ খান। তামিমকে দিয়ে শুরু করা ঝড়টা রশিদ থামান এক ওভার তিন উইকেট এবং পরে আরো এক উইকেট নিয়ে। এর মধ্যে দুটি আবার পরপর দুই বলে। শেষ পাঁচ ওভারে বাংলাদেশ যখন ঝড় তোলার জন্য হাতাটা একটু গুটিয়ে নিবে, তখনই রশিদ খানের হঠাৎ ঝড়। যে ঝড়ে লণ্ডভণ্ড বাংলাদেশ।

শেষমেষ তাও ১৩৪ রান ওঠে এই ম্যাচ দিয়ে একাদশে ফেরা আবু হায়দার রনির ১৪ বলে ২১ রানের দৃঢ়তায়। কিন্তু এই ঝড় মনে রাখার মতো কোনো অবস্থাই তখন নেই বাংলাদেশের।

১৩৪ রানের পুঁজি নিয়ে হয়তো আশার কুপির সলতেটা এক বা দুইবার দুপ করে জ্বলে উঠতে দেখা যায়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিজয়ীর হাসি দেয়ার উপলক্ষ্য ছোঁয়া যায় না। এই ম্যাচেও তাই হলো। ১৩৫ রানের লক্ষ্যটা আফগানিস্তান ছুঁয়ে ফেলে প্রায় হেসেখেলে। তাও সাত বল বাকি থাকতেই। আবু হায়দার রনি একটি, রুবেল হোসেন একটি এং মোসাদ্দেক হোসেন দুটি উইকেট নিয়ে পরিস্থিতি কিছুটা নিজেদের দিকে হেলানোর চেষ্টা করেছেন বটে, কিন্তু আফগানিস্তান নামের যে পাহাড় তাদের দিকে হেলে ছিলো, তা আর সরাতে পারেননি তারা।

১৯তম ওভারে রুবেল হোসেনের উপর আক্ষরিক অর্থেই কালবৈশাখি ঝড় তুলেন মোহাম্মদ নবি। পাঁচ বলে ২০ রান তুলে সাত বল বাকি থাকতেই ম্যাচটা শেষ করে দেন তিনি। রুবেলের উপর তোলা এই ঝড় অবশ্য কেবলই রুবেলের থাকেনি, তা আসলে বয়ে গেছে পুরো বাংলাদেশ ক্রিকেটের উপর দিয়ে। যে একটা ম্যাচ এখনো বাকি, সাকিবদের জন্য সেটা আর শুধুমাত্র একটা ম্যাচ নয় এখন, তা বরং যে কোনোভাবে এই ঘোষণা দেয়ার উপলক্ষ্য যে, আমরা কিন্তু এতোটা খারাপ দল নই!