ক্রমশই বাড়ছে রেস্তোরাঁয় সেহরি খাওয়ার প্রবণতা

রাজধানীতে ইফতারির মতো রমজান মাসে বাসার বাইরে সেহরি খাওয়ার নতুন ধারা চালু হয়েছে। এমন প্রবণতায় পুরো রমজান মাসেই ব্যস্ত নগরীর রাতের ব্যস্ততাও কমছে না। ইফতারি থেকে শুরু করে সেহরি পর্যন্ত তাই রাজধানীতে মানুষের সমাগমের কমতি নেই। রেস্টুরেন্টগুলোতে রাতজুড়েই খাবারপ্রেমীদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়।

ধানমণ্ডির ক্যাফে রিও। কয়েকজন বন্ধুর সাথে এখানে সেহরি খেতে এসেছেন নোমান হাবীব নামে এক কর্মজীবী। গত মঙ্গলবার তার সাথে কথা হয় ইউএনবির এই প্রতিবেদকের।

নোমান বলেন, ‘আমি এখানে আমার বন্ধুদের সাথে এসেছি। এখানে ইফতারির জন্য বুকিং পাওয়া অসম্ভব। আগামী ১০ দিনের জন্য তাদের ক্যাফে বুকিং হয়ে গেছে। সৌভাগ্যক্রমে রাতের খাবারের জন্য একটি টেবিল বুকিং দিতে পেরেছি।’

ইফতারের জন্য রেস্টুরেন্টগুলোর আগাম বুকিং সাধারণ ঘটনা।

ধানমণ্ডির জিগাতলাতে অবস্থিত জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট সুলতানস ডাইন। বিয়ের খাবারের জন্য এটি খুবই প্রসিদ্ধ। এই রেস্টুরেন্টের মালিক সাজিদ জামান জানান, ২০ রমজান পর্যন্ত তাদের রেস্টুরেন্ট ইফতারির জন্য আগাম বুকিং হয়েছে। শুধুমাত্র সেহরির জন্য কয়েকটি টেবিল ফাঁকা রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘যদিও পুরো রমজানে আমরা নিয়মিত খাবারের আইটেমগুলোই রাখছি, আমাদের ধারণাও ছিল না এতোটা সাড়া পাবো।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একজন ফুড ব্লগার রাজ বলেন, ‘যদিও কিছু কিছু রেস্টুরেন্ট ইফতারিতে অতিরিক্ত মূল্য রাখছে তবে সেহরিতে তারা খাবারের স্বাভাবিক দামই রাখছে।’

ট্রাডিশন বিডির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএম ফয়সাল ইউএনবিকে জানান, এবছর প্রথমবারের মতো তারা সেহরির ব্যবস্থা করেছেন। প্রথম দিকে কাস্টমার আসা নিয়ে তাদের যথেষ্ট সংশয় ছিল।

‘বিস্ময়করভাবে আমরা দেখলাম তরুণরা এবং পরিবারের সদস্যরা আমাদের গরুর মাংসের আইটেমগুলোর জন্য ভিড় করছে।'

এদিকে সেহরি উপলক্ষে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট নানা অফার দিচ্ছে। এর নাম হয়েছে ‘সেহরি অফার’। এমনই একটি রেস্টুরেন্ট পার্ক এন স্মার্ক। জিগাতলায় অবস্থিত এই রেস্টুরেন্টটি রাত ৯টা থেকে ৩টা পর্যন্ত সাদা পোলাও, কোর্মা এবং অন্যান্য খাবারের আইটেম অফারে রেখেছে।

এদিকে পুরান ঢাকার আল-রাজ্জাক হোটেলের সহকারী ব্যবস্থাপক রাজীবুল আলম সাদেক এ বছর সেহরিতে ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না বলে জানান।

তিনি বলেন, ‘কাস্টমাররা খাওয়া শেষে তৃপ্তি নিয়ে বেরিয়ে গেলেও গত বছরের তুলনায় এবার আমাদের হোটেলে ভিড় কম। সেহরির খাবারের ব্যবস্থা যে মুষ্টিমেয় হোটেল শুরু করেছিল আমরা তাদের মধ্যে অন্যতম।’

এদিক থেকে এই হোটেলকে সেহরির খাবার আয়োজনের পথপ্রদর্শক ধরা হয়। এক দশক আগে তারাই প্রথম সেহরির খাবারের প্রচলন শুরু করে।

রাজীবুল আলম সাদেক বলেন, ‘এখন মানুষের ঘরের পাশেই অনেক রেস্টুরেন্ট সেহরির আয়োজন করছে। ফলে তারা এতো দূরে আসতে চায় না। এবছর আমরা শুধু পুরান ঢাকার কাস্টমারদেরকেই সেহরির সময় পাচ্ছি’

এদিকে স্টার কাবাবের (এলিফেন্ট রোড) ব্রাঞ্চ সুপারভাইজার আবদুল জলিল জানান, তাদের ওই ব্রাঞ্চের পাশাপাশি ধানমণ্ডি-২ এবং অন্যান্য ব্রাঞ্চেও সেহরির ব্যবস্থা রয়েছে।

রেস্টুরেন্টে সেহরি খাওয়ার প্রবণতাটা বেশি লক্ষ্য করা যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে। বিশেষ করে যারা হলে থাকেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট মেডিকেলসহ অন্যান্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলগুলোতে বসবাস করা শিক্ষার্থীরা আশপাশের রেস্টুরেন্টগুলোতে সেহরি খাওয়ার জন্য ভিড় করেন।

ধানমণ্ডির ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিকের (ইউএপি) ছাত্রী সাদিয়া জেবিন বলেন, ‘ঘুম থেকে উঠে নিজের জন্য রান্না করার চেয়ে রুমমেটকে সাথে নিয়ে বাইরে সেহরি করে আসি।’

ওয়াফিউর রহমান, ইউএনবি।