আফগানিস্তান সিরিজে বাংলাদেশের সামনে যতো বাঁধা

ক্রিকেটীয় সামর্থ্য, ইতিহাস, ঐতিহ্যের দিক দিয়ে বাংলাদেশের চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে আফগানিস্তান। সেই ১৯৭৯ সাল থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছে বাংলাদেশ। টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছে ২০০০ সালে। যেখানে আফগানিস্তান টেস্ট খেলার স্বীকৃতি পেলে এই তো ক’মাস আগে। বিশ্বের যে কোনো দলকে নিয়মিত হারানোর ক্ষমতাধর দল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। যেখানে আফগানিস্তান দল হিসেবে বেশ অগোছালো।

তারপরও এবারের আফগানিস্তান সিরিজটা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। কারণ খেলাটা হবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। ক্রিকেটে এটা এমন একটা ফরম্যাট যেখানে ফেভারিট তত্ত্ব খুব একটা কাজে আসে না। অল্প সময়ের মধ্যে ম্যাচের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। আশ্চর্যের ব্যাপার এই ফরম্যাটে র‌্যাঙ্কিংয়ের দিক দিয়ে বাংলাদেশ আফগানদের চেয়ে পিছিয়েও। আফগানিস্তান টি-টোয়েন্টি র‌্যাঙ্কিংয়ের আট নম্বর দল। আর বাংলাদেশ দশে।

শুধু ফরম্যাট আর র‌্যাঙ্কিং হিসেবেই নয়, আফগানদের বিপক্ষে সিরিজের আগে বাংলাদেশকে ভাবতে হচ্ছে আরও কিছু বিষয় নিয়ে। সেসব নিয়েই এই অলোচনা-

কন্ডিশন ও উইকেট: আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজটা অনুষ্ঠিত হবে ভারতের দেরাদুনে। সেখানকার কন্ডিশন ইতোমধ্যেই ভোগাতে শুরু করেছে বাংলাদেশকে। এই মুহূর্তে দেরাদুনে প্রচন্ড গরম। পবিত্র রমজান মাসে রোজা রেখে গরমে অনুশীলন করতে নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের। এই আবহাওয়া ম্যাচেও হয়তো ভোগাবে বাংলাদেশকে। উইকেটও ভোগাতে পারে সাকিব-তামিদের। উত্তরখণ্ডের রাজধানী দেরাদুনের রাজিব গান্ধি স্টেডিয়ামে এই প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নতুন এই ভেন্যু নিয়ে একেবারেই অজ্ঞাত বাংলাদেশ। অর্থাৎ একেবারে নতুন একটা জায়গায় খেলতে নামতে হচ্ছে। এটাও ভোগাতে পারে বাংলাদেশকে।

আফগানিস্তানের স্পিন: সিরিজে আফগানদের স্পিন আক্রমণ হয়তো বেশ করেই ভোগাবে বাংলাদেশকে। তাদের দলে আছেন রশিদ খানের মতো বোলার যাকে অনেকেই বর্তমান বিশ্বের সেরা টি-টোয়েন্টি বোলার হিসেবে মেনে নিচ্ছেন। সম্প্রতি শেষ হওয়া আইপিএলে বল হাতে বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানদের নাকাল করে ছেড়েছেন এই রশিদ। তার সাথে মুজিব-উর-রহমানকে নিয়েও ভাবতে হবে সাকিবদের। কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের হয়ে এবার প্রথমবার আইপিএল খেলতে নেমে বাজিমাত করেছেন মুজিব। ১১ ম্যাচ খেলা এই তরুণ স্পিনার ৬.৯৯ রান খরচায় ১৪টি উইকেট তুলে নিয়েছেন। আফগানদের এই স্পিন যুগলের বিপক্ষে বড় পরীক্ষাই দিতে হবে বাংলাদেশকে।

নিজেদের পেস আক্রমণ: নিজেদের নিয়েও চিন্তা করার আছে বাংলাদেশের। সিরিজের আগ মুহূর্তে চোটের কারণে ছিটকে গেছেন পেস আক্রমণের সেরা ভরসা মোস্তাফিজুর রহমান। মাশরাফি বিন মর্তুজা অনেক আগেই অবসর নিয়েছেন। মাশরাফি টি-টোয়েন্টি ছাড়ার পর থেকে মোস্তাফিজই পেস ডিপার্টমেন্টের বড় ভরসা। সিরিজের আগ মুহূর্তে তার ছিটকে পড়াটাও বড় বিপদে ফেলতে পারে বাংলাদেশকে। রুবেল হোসেন অবশ্য বেশ ভালো বোলিং করেছেন গত নিদাহাস ট্রফিতে। কিন্তু ধারাবাহিকতায় বরাবরই পিছিয়ে রুবেল। আর পেস আক্রমণের অন্যরা বেশ অনভিজ্ঞ।

চাপ: আফগানিস্তানের মতো দলের বিপক্ষে হার প্রত্যাশা করে না কেউই। হারলে স্বাভাবিকভাবেই কড়া সমালোচনা হজম করতে হবে। প্রত্যাশার এই চাপটাও বিপদের কারণ হতে পারে বাংলাদেশের জন্য।

তবে বহু প্রতিকূলতা জয় করার অহরহ উদাহারণ আছে সাকিব, তামিম, মুশফিকদের। বাংলাদেশি সমর্থকদের প্রত্যাশা আফগানিস্তানের বিপক্ষেও তার পুনরাবৃত্তি ঘটবে। দেখা যাক, কী হয়।