দল পর্যালোচনা: সোনালি অতীতের দেখা পেতে চায় ক্রোয়েশিয়া

ইউরোপের জায়ান্ট দলগুলোর মধ্যে তুলনামূলকভাবে বেশ দেরিতে বিশ্বমঞ্চে পা রেখেছিল ক্রোয়েশিয়া। ১৯৯৮ ফ্রান্স বিশ্বকাপে অভিষেক ঘটে তাদের। প্রথম বিশ্বকাপের আসরেই রীতিমতো চমক নিয়ে হাজির হয়েছিল ক্রোটরা। ওই আসরের জায়ান্ট কিলার হয়ে উঠেছিল দলটি। জার্মানির মতো পরাশক্তির বিশ্বকাপ স্বপ্ন ক্রোয়েশিয়া শেষ করে দিয়েছিল ৩-০ গোলের দারুণ জয়ে।

ক্রোটদের রূপকথা থামল সেমিফাইনালে; স্বাগতিক ফ্রান্সের কাছে ফাইনালে খেলার স্বপ্নভঙ্গ ভঙ্গ হয় তাদের। ২-১ গোলে হেরে যায় তারা। তৃতীয়স্থান নির্ধারণী ম্যাচে আরেক জায়ান্ট নেদারল্যান্ডসকেও হারিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। ডেভর শুকার দুর্দান্ত পারফরম্যান্সকে ভিত বানিয়ে তারা তুলে নিয়েছে একের পর এক জয়।

ক্রোয়েশিয়ার সোনালি দিনের পথচলা সেই শুরু। দলকে ফাইনালে ওঠাতে না পারলেও ফ্রান্স বিশ্বকাপে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন শুকার। আসরে সর্বোচ্চ ছয় গোল করে তিনি জিতে নিয়েছিলেন গোল্ডেন বুট। ক্রোয়েশিয়ার ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে বড় তারকা তিনিই। ক্রোটদের হয়ে সবচেয়ে বেশি ৪৫টি গোল করে ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছেন এই ফরওয়ার্ড।

যুগোস্লাভিয়া ভেঙে ১৬ টুকরা হলে জন্ম হয় ক্রোয়েশিয়ার। খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। ২৭ বছর আগে বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে নেয় ক্রোয়েশিয়া। ফুটবল বিশ্বেও ভালোভাবেই নিজেদের তুলে ধরতে শুরু করে তারা। যার সবচেয়ে বড় সাফল্য তারা পেয়েছে কুড়ি বছর আগের বিশ্বকাপে।

তবে ক্রোয়েশিয়ার বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্নটা পূরণ হতে পারতো আরো চার বছর আগেই। কিন্তু ১৯৯৪ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে তাদের অভিযানটা অল্পের জন্য সফল হয়নি। দাপুটে পারফরম্যান্সে পরের তিনটি বিশ্বকাপেই অংশ নিয়েছে তারা। মাঝে ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপ বাছাইয়ের গণ্ডিটা পাড়ি দিতে পারেনি ক্রোটরা। চার বছর পর ব্রাজিলের বিশ্বমঞ্চে ফেরাটা অবশ্য রঙিন করতে পারেনি তারা। বিদায় নিতে হয়েছিল গ্রুপপর্বেই।

এনিয়ে ছয় বিশ্বকাপের পঞ্চমটিতে রাশিয়াতে অংশ নিতে যাচ্ছে তারা। বিশ্বমঞ্চ ইউরোপের মাটিতে বসায় ক্রোয়েশিয়ার ফুটবলে আশার পালে দিচ্ছে বাড়তি হাওয়া। দেশটিকে আশা দেখাচ্ছে সোনালি একটা প্রজন্ম। নিজেদের শক্তিমত্তা কোন পর্যায়ে আছে সেটা পরীক্ষা করারও দারুণ একটা সুযোগ পাচ্ছে তারা। ৩ জুন বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে ক্রোটরা মুখোমুখি হবে ফর্মের তুঙ্গে থাকা ব্রাজিলের।

ক্রোয়েশিয়ার ফুটবল কতটা এগিয়েছে সেটা বুঝিয়ে দিচ্ছে বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে তাদের উন্নতির গ্রাফটা। বিশ্বকাপ অভিষেকের আগেও যে দলটি র‌্যাঙ্কিংয়ে ১২৫ নাম্বারে ছিল, সেই দলটাই চার বছরের ব্যবধানে ইতিহাস সেরা র‌্যাঙ্কিংয়ে তিন নাম্বারে চলে এসেছিল। যদিও আপাতত তালিকার ১৮ নাম্বারে আছে ক্রোয়েশিয়া।

তবে র‌্যাঙ্কিং নয়, ক্রোয়েশিয়ার ভাবনায় এখন শুধুই বিশ্বকাপ। আসন্ন রাশিয়ার মঞ্চে দেশটিকে নেতৃত্ব দেবেন রিয়াল মাদ্রিদ মিডফিল্ডার লুকা মডরিচ। তার নেতৃত্বের কাজটা সহজ করার জন্য দলে আছেন বেশ কয়েকজন প্রতিভাবান ও অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ে।

মধ্য মাঠে মডরিচ পাশে পাচ্ছেন ক্লাব প্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনা মিডফিল্ডার ইভান রাকিটিচকে। এ যুগলের সামনেই থাকবেন জুভেন্টাস ফরওয়ার্ড মারিও মান্দজুকিচ এবং ফ্রাঙ্কফুর্ট উইঙ্গার আন্তে রেবিক। এদের যে কেউ যে কোনো সময় ম্যাচের ভাগ্য ক্রোয়েশিয়ার পক্ষে গড়ে দিত সক্ষম।

১৯৯৮ বিশ্বকাপে শুকার দলকে প্রায় একক প্রচেষ্টায় সেমিফাইনালে পৌঁছে দিয়েছিলেন ক্রোয়েশিয়াকে। তবে তাদের এবারের দলে বড় কোনো তারকা নেই। আছেন মাঝারি মানের বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ ফুটবলার। যা দলটির মধ্যে তৈরি করেছে ভারসম্য। তারা স্বাভাবিক পারফরম্যান্সটা করতে পারলে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার জন্য বেগ পাওয়ার কথা নয় ক্রোয়েশিয়ার। তা ছাড়া সোনালি অতীত ফেরানোর জন্য এবার মরিয়া হয়ে মাঠে নামবে ক্রোটরা।

রাশিয়া বিশ্বকাপে ‘ডি’ গ্রুপে খেলবে ক্রোয়েশিয়া। গ্রুপপর্বের ম্যাচে তাদের তিন প্রতিদ্বন্দ্বী যথাক্রমে নাইজেরিয়া, আর্জেন্টিনা ও আইসল্যান্ড। আগামী ১৬ জুন আফ্রিকান পরাশক্তিদের বিপক্ষের ম্যাচ দিয়ে এবারের বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করবে ক্রোয়েশিয়া।