দল পর্যালোচনা: এবার আরো বড় স্বপ্ন কলম্বিয়ার

ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোকে কম-বেশি শাসন করেছে স্পেন। যেটার কিছুটা প্রভাব এখনো রয়ে গেছে। স্প্যানিশ উপনিবেশগুলোর মধ্যে কলম্বিয়া ছিল অন্যতম। ১৮১৯ সালে স্পেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেয় কলম্বিয়ানরা। বিভিন্ন খনিজ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বড় একটা উৎস এই দেশটি। যা কলম্বিয়ার অর্থনীতিকে সচল রাখার অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠেছে বহু বছর ধরে।

দেশটির অর্থনৈতিক এই সমৃদ্ধিতে কাজ করেছে ফুটবলও। স্বাধীনতার পর থেকে ক্রমেই খেলাটির জনপ্রিয়তাও তুঙ্গে উঠতে থাকে। প্রতিবেশী ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও উরুগুয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যেতে শুরু করেছিল কলম্বিয়া। তবু ফুটবল থেকে প্রত্যাশিত ফল পায়নি দেশটি। কারণ কলম্বিয়ার রাজনৈতিক অস্থিরতা। 

প্রথম বিশ্বকাপ খেলার জন্য কলম্বিয়াকে অপেক্ষা করতে হয় ১৯৬২ সাল পর্যন্ত। ওই আসরে গ্রুপপর্বেই থেমে যায় তারা। অথচ তৃতীয় বিশ্বকাপেই স্বপ্নটা পূরণ হতে পারতো কলম্বিয়ানদের। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে জলাঞ্জলি দিতে হয় তদের ১৯৩৮ সালের বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন। বিশ্বকাপের মূলপর্বের টিকিট পেলেও শেষ সময়ে নিজেদের গুটিয়ে নেয় কলম্বিয়া।

টানা ছয়টি বিশ্বকাপে বাছাইপর্বের গণ্ডি উৎড়াতে পারেনি তারা। ১৯৯০ বিশ্বকাপে ফিরেই চমকে দেয় কলম্বিয়া। ডিয়েগো ম্যারাডোনার চ্যাম্পিয়ন দল আর্জেন্টিনাকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে বড় ধরনের অঘটনের জন্ম দেয় কলম্বিয়া। দাপুটে ওই জয়টা কলম্বিয়ানদের প্রথমবারের মতো এনে দেয় দ্বিতীয় রাউন্ডের টিকিট। পরের দুই বিশ্বকাপে টানা অংশ নেওয়া কলম্বিয়ার পথচলা থেমে যায় গ্রুপ পর্বেই।

১৯৯৮ ফ্রান্স বিশ্বকাপ শেষ হতেই হতাশার চোরাবালিতে ফের হারিয়ে যায় কলম্বিয়া। পরের তিন বিশ্বকাপের বাছাইপর্বও তারা পেরোতে পারেনি। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে কলম্বিয়া ফিরে আসে দারুণভাবে। সবাইকে চমকে দিয়ে চার বছর আগের স্বপ্নের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে যায় হ্যামেশ রদ্রিগেজদের কলম্বিয়া। স্বাগতিক ব্রাজিলের সামনে থেমে যায় তাদের স্বপ্নযাত্রা।

ব্রাজিলের কাছে হেরে বিদায় নিলেও ব্রাজিল বিশ্বকাপে কলম্বিয়ার পারফরম্যান্স মন ভরিয়ে দেয় ফুটবলপ্রেমীদের। আরেকটু ছোট করে বললে দলটির ফরওয়ার্ড হ্যামেস রদ্রিগেজের পারফরম্যান্সে মোহিত হয় বিশ্ববাসী। সর্বোচ্চ ৬ গোল করে কলম্বিয়ার ইতিহাসে প্রথম ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপের গোল্ডেন বুট জিতে নেন রদ্রিগেজ।  ব্রাজিলের আসরে ফেয়ার প্লে অ্যাওয়ার্ডটাও যায় তাদের দখলে।

কলম্বিয়ার এই ইতিহাস সেরা সাফল্যের রূপকার হোসে পেকারম্যান। সাফল্যের সেই নেপথ্য নায়ক এবারো আছেন কলম্বিয়ার ডাগ আউটে। সাফল্য অব্যাহত রাখতে এবার আগের চেয়ে শক্তিশালী দল পাচ্ছেন তিনি। ইনজুরির কারণে ব্রাজিল বিশ্বকাপে কলম্বিয়া পায়নি তাদের প্রধান খেলোয়াড় রাদামেল ফ্যালকাওকে। তার শূন্যস্থান ভালোভাবেই পূরণ করেছিলেন রদ্রিগেজ। প্রায় একক প্রচেষ্টায় বিশ্বকাপে দেশকে এনে দিয়েছেন সেরা সাফল্য। কলম্বিয়ানদের জন্য আশার খবর হচ্ছে- এবারের আসরে দেশটির আক্রমণভাগে থাকছেন ফ্যালকাও-রদ্রিগেজ দুজনই।

উত্থান-পতনের কলম্বিয়া জাতীয় ফুটবল দল এ নিয়ে সপ্তমবার বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছে। এবার রাশিয়ার মঞ্চে আরো বড় কিছুর স্বপ্ন দেখছে তারা। তাদের আশাটা একেবারে অমূলক নয়। কারণ ১৯৯০ সালের পর সম্ভাব্য সেরা দল নিয়েই বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে কলম্বিয়া। রদ্রিগেজ-ফ্যালকাওদের পাশাপাশি ইউরোপিয়ান ফুটবল মাতানো ক্রিশ্চিয়ান জাপাতা, ইয়েরি মিনা, ফরিদ দিয়াজের মতো তারকা আছেন কলম্বিয়া দলে।

এবারের বিশ্বকাপে কলম্বিয়াকে নেতৃত্ব দেবেন ফ্যালকাও। তার জন্য এটাই প্রথম বিশ্বকাপ। বিশ্বমঞ্চে অভিষেকটা রাঙিয়ে বিদায় নেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন মোনাকোর প্রাণভোমরা। কিন্তু কাজটা মোটেও সহজ হবে না। কারণ গ্রুপপর্বেই তাদের কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। ‘এইচ’ গ্রুপে তাদের তিন প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে জাপান, পোল্যান্ড ও সেনেগাল। আগামী ১৯ জুন জাপানের বিপক্ষের ম্যাচ দিয়ে এবারের বিশ্বকাপযাত্রা শুরু হবে কলম্বিয়ার।