একাধিক কোচের হাস্যকর পথে হাঁটবে বিসিবি?
- Details
- by খেলাধুলা প্রতিবেদক
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কি সত্যিই একাধিক কোচের পথে হাঁটবে? দ্বিধা ও সংশয়মিশ্রিত এই প্রশ্নটাই ঘুরছে দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে। ইতিহাস ও বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় দুই কোচের ধারণাকে কেবলই হাস্যকর মনে হচ্ছে। দীর্ঘ সাত মাস ধরে চেষ্টা করেও একজন কোচ খুঁজে পায়নি বিসিবি। কিন্তু গ্যারি কারস্টেন হঠাৎ করে বাংলাদেশে এসে দেখিয়ে গেছেন দুই কোচের তত্ত্ব। বিসিবির নীতি নির্ধারণ পর্যায়ের কর্তা-ব্যক্তিদের তা পছন্দও হয়েছে। অথচ ইতিহাস বলছে, এই পথে সম্ভবত শুধুই ব্যর্থতা অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের জন্য।
একটি দেশের জাতীয় দল সব সময় চেষ্টা করে নিজস্ব ব্রান্ডের ক্রিকেট খেলতে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। সর্বশেষ কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহের সময়ে বাংলাদেশ দল নিজেদের একটা ব্রান্ড দাঁড় করানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে এবং এর কিছু সুফলও মিলেছে। বিসিবির যেখানে উচিত, ওই ধারা বজায় রাখার পথ খোঁজা, সেখানের দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা খুঁজছে ‘ইনোভোটিভ’ কোনো রাস্তা। প্রশ্ন হলো, যেখানে সরল ও সহজ পথেই সফলতা ধরা দিচ্ছে, সেখানে নতুন কিছুর দরকার কেনো পড়ছে?
নিজস্ব ব্রান্ডের ক্রিকেটের জন্য দরকার একটি নিজস্ব চিন্তার পথ। দুই কোচ হলে সেটা আদৌও সম্ভব কিনা, তা নিয়ে থাকছে বড় প্রশ্ন। দুই কোচের ধারণা যতোই নতুন বা চিত্তাকর্ষক হোক না কেনো, বাংলাদেশের ইতিহাস বলছে, এই ধারণা এখানে উদ্ভট।
গ্যারি কারস্টেন ক্রিকেটার হিসেবে ছিলেন অসাধারণ। কোচ হিসেবে তিনি আরো এগিয়ে। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট সম্পর্কে তার যতোটুকু জ্ঞান, তা অর্জিত হয়েছে কেবলই কিছু মেইল চালাচালি ও ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাটি করে। এই জ্ঞান নিয়ে তিনি হয়তো বাংলাদেশের পরামর্শকের কাজ করতে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন না। ফলে তিনি এক ঝটিকা সফরে সম্প্রতি বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন। কথা বলেছেন জাতীয় দলের একাধিক ক্রিকেটের সাথে, কথা বলেছেন নির্বাচক ও বোর্ড প্রধানের সাথে। এতেও কি বাংলাদেশের পরামর্শক হিসেবে কাজ করার তো আত্মবিশ্বাস তার অর্জিত হয়েছে? উত্তর সম্ভবত— না।
নিজের কাজ ও দায়িত্ব সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী না হলে কী হতে পারে, তার সেরা উদাহরণ সম্ভবত জন বুকানন। কোচ হিসেবে অস্ট্রেলিয়াকে বিশ্বকাপ জেতালেও ২০০৯ সালে কলকাতা নাইট রাইডার্সের কোচ হিসেবে তিনি এমনই তালগোল পাকিয়েছেন যে, নিজের বিগত সাফল্যকেই তিনি প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছেন।
জন বুকানন কলকাতাকে চার অধিনায়কের ‘নতুন ধারণা’ গেলাতে চেয়েছিলেন। ওই সময় কলকাতার অধিনায়ক ছিলেন ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি। কিন্তু গাঙ্গুলির সঙ্গে ঠিক কিভাবে কাজ করবেন, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো কর্মপরিকল্পনা ছিলো না বুকাননের। এরপরই তিনি অধিনায়কত্বকে চার ভাগে ভাগ করার অদ্ভুত উপায় বের করেছিলেন তিনি।
কারস্টেনও সম্ভবত নিজের কাজ ও দায়িত্ব নিয়ে ঠিক স্পষ্ট নন। ফলে দায়সারা কাজ করার এবং নিজের বিশেষজ্ঞ সত্তাকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য ‘আজগুবি’ এক তত্ত্ব গিলিয়েছেন বিসিবিকে। যে কারণে বিসিবি প্রধানও চেনা সাফল্যের পথ এড়িয়ে ‘নতুন কিছু’র মোহে পড়েছেন।
আপাতত দৃষ্টিতে কারস্টেনের দুই কোচের তত্ত্ব বৈপ্লবিক বলে মনে হলেও এটি বাংলাদেশ ক্রিকেটকে নিয়ে যেতে পারে পিছনের দিকে। দুই কোচের পথে ২০০২ সালে একবার হেঁটেছিলো বিসিবি। সে সময় পাকিস্তানের মোহসিন কামাল ও আলি জিয়াকে কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো। তাদের অধীনে যা হয়েছিলো, বিসিবি এখনো তা ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, সব কিছু চাইলেই ভোলা যায় না।
দুই কোচ দেখা গেছে চলতি বছরের শুরুর দিকেও। চান্দিকা হাথুরুসিংহে বাংলাদেশের কোচের পদ ছাড়ার পর মাশরাফি-সাকিবরা প্রথম মাঠে নামেন শ্রীলঙ্কা-জিম্বাবুয়েকে নিয়ে আয়োজিত ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজে। যেখানে বাংলাদেশ দলের কোচের দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হয় চান্দিকার সময়ে সহকারী থাকা রিচার্ড হ্যালসাল ও খালেদ মাহমুদ সুজনের মধ্যে। মাহমুদ ঘরোয়া পর্যায়ে কোচ হিসেবে দারুণ সফল। হ্যালসালের অভিজ্ঞতাও কম নয়। কিন্তু এ দুজন মিলে যে ফলাফল দিয়েছেন, তাতে এক সিরিজের বেশি তদের উপর ভরসা করার সাহস করেনি বিসিবি।
মোহসিন কামাল-আলি জিয়া এবং রিচার্ড হ্যালসাল-খালেদ মাহমুদ, বাংলাদেশের দুই সময়ের দুই কোচ-জুটির ইতিহাস দেখলে, বাংলাদেশের আর দুই কোচের চিন্তাও করা উচিত নয়। কিন্তু গ্যারি কারস্টেন আসলে ঠিক ওই দুই জুটির মতো কোনো কিছুর প্রস্তাব দেননি। তিনি লাল ও সাদা বলে আলাদা কোচের কথা বলেছেন।
কিন্তু এই চিন্তাকেও অবাস্তব মনে হতে বাধ্য। কারণ বাংলাদেশ এমন এক দল, যাদের সব ফরম্যাটের মূল খেলোয়াড় একই। ফরম্যাটভেদে বাংলাদেশ দলে বড় দুই থেকে তিনটি পরিবর্তন আসে। সুতরাং মূল খেলোয়াড়রা কিভাবে দুজন আলাদা কোচের দর্শন রপ্ত করে দুটি আলাদা ফরম্যাট খেলবেন— এই চিন্তা কিভাবে বাস্তবসম্মত হতে পারে?
দুজন কোচের দর্শনে রপ্ত হওয়ার চেষ্টা করা মানেই খেলোয়াড়দের মনোজগতটা এলোমেলো হয়ে যাওয়া। ক্রিকেটের মতো খেলায় বিক্ষিপ্তত মনোজগত নিয়ে যে কিছুই করা সম্ভব নয়, বাংলাদেশের দর্শকরা এখনো পরিপক্ক হয়ে উঠতে না পারলেও, অন্তত এটা বোঝেন।
মনে করা হয়, চান্দিকা হাথুরুসিংহের অধীনেই বাংলাদেশ ক্রিকেট মাঠের খেলায় সবচেয়ে বেশি সফল হয়েছে। এই সাফল্যের মূল শক্তি ড্রেসিংরুমে একটা মাত্র লক্ষ্য ছড়িয়ে দেয়া। কিন্তু দুই কোচ এসে কখনোই একটা লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারবেন না। বাস্তবতার কারণেই তা সম্ভব নয়। চান্দিকা সব সময় ইতিবাচক ফলাফলে বিশ্বাস করতেন। সেটা পাওয়ার জন্য কখনো কখনো তিনি হয়ে উঠতেন একনায়ক। শোনা যায়, নিজের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কখনো কখনো অধিনায়কের কথাকেও গ্রাহ্য করতেন না তিনি।
চান্দিকার এই চরিত্র নিয়ে প্রায়ই সমালোচনা হয়, কিন্তু এর জন্য যে সফলতা এসেছে, সেটাকে উপেক্ষা করার কিন্তু কোনো পথ নেই। কোচ যদি দুজন হয়, এ ধরনের কোনো প্রক্রিয়ায় সফল হওয়ার রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। এই সব কিছুতে একটা ব্যাপারই প্রতীয়মাণ হয়, তা হলো দুই কোচের তত্ত্ব চিত্তাকর্ষক হতে পারে, কিন্তু হাস্যকরও বটে। বিসিবি এখন এই পথে আর কয় কদম হাঁটবে, সেটা তাদের ব্যাপার।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.