এবার স্বপ্ন পূরণের কথা জানালেন আনোয়ার ইব্রাহিম

‘আমার পরিবার এতদিন যথেষ্ট কষ্ট ভোগ করেছে। এটা আসলেই যথেষ্ট কষ্ট। এবার তাদের স্বপ্ন পূরণের পালা। যা তারা এতদিন চেয়েছিল। এবার তারা সেই স্বপ্ন পূরণ করবে।’ এ কথাগুলো সদ্য কারামুক্ত মালয়েশিযার সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের। একটি ব্রিটিশ পত্রিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

নিজের এবং পরিবারের দীর্ঘদিনের আক্ষেপ তুলে ধরে আনোয়ার খুব শিগগিরই তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রীর পদ অলঙ্কৃত করার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়ে দিলেন।

রাজনৈতিক মতপার্থক্যের জেরে আনোয়ার ইব্রাহিমকে বরখাস্ত করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। এখানেই শেষ নয়, তথাকথিত দুর্নীতি ও সমকামিতার অভিযোগে দীর্ঘদিন জেলে ঘানি টানতে হয়েছে আনোয়ারকে। তার সঙ্গে একই আচরণ করেছেন মাহাথিরের উত্তরসূরী নাজিব রাজাকও।

আনোয়ার রবাবরই বলে আসছেন, তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস করতেই এমন প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন তিনি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মাহাথির তার ভুল স্বীকার করলে শত্রু থেকে আবারও মিত্র হয়ে ওঠেন আনোয়ার।

মাহাথিরের সঙ্গে ঐক্যের বিষয়ে আনোয়ার বলেন, ‘শত্রুর সঙ্গে ঐক্য করা আমার জন্য অত্যন্ত কঠিন কাজ ছিল। কারণ এতে পরিবারেরও সম্মতি ছিল না। তারপরেও আমি তার সঙ্গে জোট বেধেছি।’

গত জানুয়ারিতে আনোয়ারের সঙ্গে কারাগারে সাক্ষাৎ করেন মাহাথির। ওই ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আনোয়ার বলেন, ‘তিনি আমার সঙ্গে জেলে দেখা করতে এলে আমি সন্দিহান হয়ে পড়ি। তাকে প্রশ্ন করেছিলান, আমি কেন আপনার সঙ্গে সম্পর্ক করবো? বলেছিলাম, আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো।'

৯২ বছর বয়সী মাহাথিরকে পাকাতান হারাপান জোটের প্রধান করে ভুল সংশোধনের সুযোগ করে দেন আনোয়ার। তার নেতৃত্বেই ভোটে নিরঙ্কুশ জয় নিয়ে ক্ষমতায় আসে বিরোধীরা। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রাজকীয় বিশেষ ক্ষমতা বলে মুক্তি পান ৭০ বছর বয়সী আনোয়ার। এখন তার দ্বারে ক্ষমতার হাতছানি।

মাহাথিরের সঙ্গে ঐক্যের আলোচনার বিষয়ে আনোয়ার বলেন, "আমার সন্তানরা তার সঙ্গে ঐক্যের বিপক্ষে ছিল। তখন আমি তাদের বলেছিলাম, কোনো শত্রু যদি ফিরে আসে এবং বলে চলো অতীত ভুলে আজ থেকে আমরা বন্ধু হই। তাতে সাড়া না দেয়া উচিৎ নয়। তারপরেও সন্তানরা বলেছিল, ‘আপনি ভুগেছেন, আমরা ভুগেছি।”

সাক্ষাৎকারে নিজের দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের বর্ণনা দিয়ে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, ‘আমি সব সময়ই গণতন্ত্র, স্বাধীনতা এবং উদার চিন্তার কথা বলেছি। এ জন্য অনেকের বিরাগভাজন হয়েছি।’

এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনি যখন গণতন্ত্র, স্বাধীনতা এবং উদার চিন্তার চর্চা করতে যাবেন, তখন একটা পার্থক্য চোখে পড়বে। স্বাধীনতা অস্বীকার করলে আপনার কাছে অত্যাচার মনে হবে এবং এটা বেঁচে থাকারও কারণ।’

উদীয়মান নেতা আনোয়ারকে উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ১৯৯৮ সালে বরখাস্ত করেন মাহাথির মোহাম্মদ। এরপর শুরু হয় তার জেলজীবন। অবশ্য ছয় বছর কারাবাসের পর ২০০৪ সালে মুক্তি পান তিনি। এরপর নিজেই রাজনৈতিক দল ও পরে জোট গঠন করে ২০১৩ সালের নির্বাচনে অংশ নেন। কিন্তু নাজিব রাজাক নেতৃত্বাধীন বারিসান নাসিওনালের কাছে হেরে যায় তার জোট। তারপর আবার জেলে যেতে হয় তাকে।