ফুটবলের ইতিহাসে ২০টি বিশ্বকাপ দেখেছে বিশ্ব। এসব বিশ্বকাপের সবচেয়ে অভিজ্ঞ পাঁচ দলের একটি মেক্সিকো। কিন্তু এই অভিজ্ঞতা শুধুই দুঃস্মৃতি হয়ে থাকল মেক্সিকানদের কাছে। কারণ অন্তত ১৪টি বিশ্বকাপ খেলে একবার হলেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে অন্য দলগুলো। এই জায়গায় ব্যতিক্রম শুধু মেক্সিকো।

mexico football team

উত্তর আমেরিকা মহাদেশের দলটি ১৫টি বিশ্বকাপে অংশ নিলেও তাদের অর্জনের খাতা এখনো শূন্য। বিশ্বমঞ্চে এল ট্রিদের সর্বোচ্চ সাফল্য বলতে দুবার কোয়ার্টার ফাইনালে খেলতে পারাটা। সেটাও ১৯৭০ ও ১৯৮৬ সালে। অথচ এই দলটাই কনকাকাফ গোল্ড কাপ টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ১০ বার চ্যাম্পিয়ন! দশবার কোপা আমেরিকায় অংশ নিলেও রানার্সআপ হয়েছে দুবার। আন্তর্জাতিক মঞ্চে মেক্সিকোর সবচেয়ে বড় সাফল্য বলতে ১৯৯৯ সালে কনফেডারেশনস কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা।

বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফিটা তো তাদের কাছে শুধুই দিবাস্বপ্ন। এবারের রাশিয়া বিশ্বকাপে শিরোপা জয়ের সেই দুঃসাহসটা অবশ্য দেখাচ্ছে না তারা। ফাইনাল তাদের কাছে আলোকবর্শ দূরের পথ। বড় কিছুর আশা করার আগেই মেক্সিকোকে ভাবতে হচ্ছে গ্রুপপর্ব নিয়ে। কারণ এই বিশ্বকাপের ড্র যে তাদের মৃত্যুকূপে ফেলে দিয়েছে! ‘এফ’ গ্রুপের ম্যাচে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী জার্মানি, সুইডেন ও দক্ষিণ কোরিয়া। ১৭ জুন মস্কোতে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন জার্মানির মুখোমুখি হবে মেক্সিকো।

মহাদেশীয় টুর্নামেন্ট কনকাকাফ গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টে মেক্সিকো বাঘ হলেও বিশ্বকাপের মঞ্চে তারা বেড়াল। ১৯৩০ সালের প্রথম বিশ্বকাপ দিয়েই যাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল। এল ট্রিরা সবশেষ ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে খেলেছে। তবে যতগুলো বিশ্বকাপ খেলেছে মেক্সিকানরা শুধুই হতাশা নিয়ে ঘরে ফিরেছে তারা। যে দুবার শেষ আটে উঠেছিল উত্তর আমেরিকার দলটি দুটো আসরই ছিল আবার তাদের ঘরের মাঠে। ইউরোপের মাটিতে তাই এবার মেক্সিকোর কাছ থেকে বড় কিছুর আশা করাটা নিছকই বোকামি।

তবে ফুটবল বিশ্বের মানচিত্রে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারলেও পৃথিবীতে অন্যভাবে রাজত্ব কায়েম করছে দেশটি। গত কয়েক দশকে মাদক ব্যবসায় বিশ্বের অন্যতম সেরা দেশ হয়ে উঠেছে তারা। এ ছাড়া উত্তাল রাজনীতি এবং দুর্ণীতির কারণে বরাবরই আলোচনায় আছে মেক্সিকো। বিশ্লেষকদের মতে এই দুটো কারণেই দেশটির ফুটবল তুলনামূলক অগ্রসর হতে পারেনি।

এরপরও বিশ্বকাপে সমীহ জাগানিয়া একটা দল ভাবা হয় মেক্সিকোকে। কারণ নিজেদের স্বপ্নপূরণ করতে না পারলেও অন্যদের স্বপ্ন কীভাবে গুঁড়িয়ে দিতে হয় সেটা ভালোই জানা আছে তাদের। এবারের আসরেও তাই মেক্সিকোকে নিয়ে ভাবতে হচ্ছে বড় দলগুলোকে। তবে মেক্সিকানরা ভাবছে শুধুই নিজেদের নিয়ে। তাদের চোখে আপাতত ভর করছে সেমিফাইনাল স্বপ্ন।

মেক্সিকো তাদের প্রথম ছয়টি বিশ্বকাপেই বাদ পড়েছে গ্রুপপর্ব থেকে। ১৯৭০ সালে নিজেদের উঠোনে বিশ্বমঞ্চে গা ঝাড়া দিয়ে ওঠলেও ইতালির কাছে ৪-১ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে শেষ আটে থেমে যায় স্বাগতিকদের স্বপ্নযাত্রা। তিন আসর পর মেক্সিকানরা বীরদর্পে শুরু করলেও সেমিফাইনালের আগেই বিদায় নিতে হয়েছিল তাদের।

অনেক চড়াই-উৎড়াইয়ের মধ্য দিয়ে যাওয়া মেক্সিকো ১৯৯০ সালে বিশ্বকাপে খেলতে পারেনি নিষেধাজ্ঞার কারণে। এরপর টানা ছয়টি বিশ্বকাপে অংশ নেয় তারা। কিন্তু হতাশা পিছু ছাড়েনি তাদের। প্রতিবারই মেক্সিকো বিশ্বকাপের মঞ্চ থেকে থেকে ছিটকে গেছে নক আউট পর্বের শুরুতেই।

সেই দুঃস্বপ্ন ভুলতে মেক্সিকো কতটা মরিয়া হয়ে উঠেছে সেটা বলে দিচ্ছে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে তাদের ধারাবাহিক উন্নতি। ২০১৫ সালে র‌্যাঙ্কিংয়ে ৪০ নাম্বারে চলে যাওয়া দলটা এখন উঠে এসেছে ১৫-তে। তাছাড়া মেক্সিকোর এবারের দলটাও আশা জাগানিয়া। দলে আছেন দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা হ্যাভিয়ের হার্নান্দেজ ‘চিচারিতো’।

অভিজ্ঞ দুই ফুটবলার আন্দ্রেস গুয়ার্দাদো এবং রাফায়েল মার্কুয়েজের মতো তারকা আছেন বিশ্বকাপ দলে। দ্বিতীয়জন এই বিশ্বকাপে তার প্রথম ম্যাচেই গড়ে ফেলবেন দারুণ একটা রেকর্ড। চতুর্থ ফুটবলার হিসেবে সর্বোচ্চ পাঁচটি বিশ্বকাপে খেলার কীর্তি গড়বেন মাকুয়েজ। প্রথম এই রেকর্ডটা গড়েছেন মেক্সিকোরই কিংবদন্তি অ্যান্তনিও কারবাহাল। অন্য দুজন ইতালির মহাতারকা গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি বুফন ও জার্মানির কিংবদন্তি লোথার ম্যাথিউস।

তবে লাইম লাইটটা থাকার কথা শুধুই চিচারিতোর ওপর। যিনি আর একবার জালের ঠিকানা খুঁজে পেলেই মেক্সিকোর ইতিহাসে প্রথম ফুটবলার হিসেবে গোলের হাফসেঞ্চুরি পূরণ করতে পারবেন। মেক্সিকো কোচ হুয়ান কার্লোস ওসোরিওর ওয়েস্টহাম ফরওয়ার্ডকেই তুরুতের তাস হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছেন। রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের প্রাক্তন তারকা কী পারবেন গুরুর আস্থার প্রতিদান দিতে? উত্তরটা মিলে যাবে সামনের ফুটবলযজ্ঞেই।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.