এবার নয় জেলায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১১ জন নিহত

সরকারের মাদক বিরোধী কঠোর অবস্থান ঘোষণার পর র‌্যাব ও পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নতুন করে নয় জেলায় আরো ১১ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে গত ৪ মে থেকে এখন পর্যন্ত বন্দুকযুদ্ধে অন্তত ৩৩ জন নিহত হয়েছেন। আর বোরবার প্রধানমন্ত্রী মাদক বিরোধী অভিযানের কথা ঘোষণা করার পর থেকে থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ২৫ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাকে বিচারবহিরভূত হত্যাকাণ্ড বা ক্রস ফায়ার হিসেবে আখ্যায়িত করে এর তীব্র বিরোধীতা করে আসছেন। সোমবার, ২১ মে দিবাগত রাত থেকে মঙ্গলবার, ২২ মে ভোর পর্যন্ত চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, নারায়ণগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, নেত্রকোনা, দিনাজপুর ও নীলফামারীতে এসব ঘটনা ঘটেছে।

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ থানাধীন ডেবারপাড় এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ একজন নিহত হয়েছেন। র‌্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মিতানুর রহমান সাংবাদিকদের এ খবর নিশ্চিত করেছেন। নিহতের নাম শুক্কুর আলী (৪৫)। তিনি মাদক বিক্রেতা বলে জানা গেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সোনারামপুর এলাকায় মঙ্গলবার ভোরে র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এক শীর্ষ মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছেন। নিহতের নাম ধন মিয়া (৩৫)। তার বিরুদ্ধে বাঞ্ছারামপুর থানায় চারটি মাদক মামলা রয়েছে। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-১০ এর এডিশনাল এসপি মহিউদ্দিন ফারুকী এ খবর নিশ্চিত করে জানিয়েছেন নিহত ধন মিয়া উপজেলার মরিচাকান্দি গ্রামের হোসেন মিয়ার ছেলে।

তিনি আরো জানান, গোপন খবর পেয়ে র‌্যাব সোনারামপুর এলাকায় অবস্থান নেয়। ভোরের দিকে মাদকের চালানসহ ধন মিয়া ও তার স্ত্রী প্রাইভেটকারে করে সোনারামপুর এলাকায় পৗঁছায়। তারা ওই এলাকা হয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। এ সময় র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে ধন মিয়া র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে শুরু করে। র‌্যাব পাল্টা গুলি ছুড়লে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। তার স্ত্রী আরজিনা বেগমকে আটক করা হয়েছে এবং প্রাইভেটকারটি জব্দ করে ১১ হাজার ৭০০ পিস ইয়াবা, নগদ ৪৮ হাজার ৭০০ টাকা ও একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে।

কুমিল্লা: জেলা সদরের জগন্নাথপুর ইউনিয়নের বাজগড্ডা এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ পেয়ার আলী (২৪) ও শরিফ (২৬) নামে দুজন নিহত হয়েছেন। কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সালাম মিয়া সাংবাদিকদের এ খবর নিশ্চিত করেছেন। নিহতদের মধ্যে পেয়ার আলী জেলা সদরের শুভপুর এলাকার আলী মিয়ার ছেলে এবং শরিফ কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার চৌয়ারা এলাকার মহেশপুর গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে বলে জানা গেছে।

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানার শিমুলতলী এলাকায় মঙ্গলবার, ২২ মে ভোরে র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ হক। নিহতের নাম বাচ্চু খান, সে রাজধানীর উত্তরার উত্তরখান এলাকার আশরাফ খানের ছেলে। র‌্যাবের ভাষ্যমতে, অভিযানের সময় বাচ্চু নিহত হলেও বাকি দুজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। পরে ঘটনাস্থল থেকে বিদেশি অস্ত্র, বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ও মাদক ব্যবসার কাজে ব্যবহৃত একটি জিপও উদ্ধার করা হয়।

চুয়াডাঙ্গা: সোমবার দিবাগত রাত একটার দিকে জেলার আলমডাঙ্গা শহরের রেলস্টেশনের পাশে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। নিহত কামরুজ্জামান ওরফে সাধু (৪৫) আলমডাঙ্গা উপজেলার হারদী ইউনিয়নের মৃত ইমদাদুল হকের ছেলে। পুলিশ জানিয়েছে, বন্দুকযুদ্ধের পর ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, তিনটি গুলি ও এক বস্তা ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার বিষয়ে আলমডাঙ্গা থানার ওসি আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান জানান, কামরুজ্জামান পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে অন্তত ১২টি মামলা রয়েছে। কারাভোগের পর সম্প্রতি বাড়ি ফিরে আবার মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলেও দাবি করেছেন তিনি।

নেত্রকোনা: সদর উপজেলার মেদনী ইউনিয়নের বড়য়ারী এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এক মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছেন। তার নাম আমজাদ হোসেন। নেত্রকোনা মডেল থানার ওসি বোরহান উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, সোমবার রাতে মাদক ব্যবসায়ী আমজাদকে গ্রেপ্তার করার পর তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বড়য়ারী এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় তার সহযোগীরা তাকে ছিনিয়ে নিতে পুলিশের ওপর গুলি চালায়। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি ছুঁড়লে আমজাদ হোসেন ‍গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান। বাকিরা পালিয়ে যান।

দিনাজপুর: মঙ্গলবার, ২২ মে ভোরে জেলার বিরামপুর উপজেলার ভবানিপুর সীমান্ত এলাকায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। নিহতের নাম প্রবাল হোসেন (৩৫), তিনি উপজেলার বাসুপাড়া গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে। প্রবালের বিরুদ্ধে ৮টি মাদক মামলা রয়েছে। বিরামপুর থানার ওসি মোকলেছুর রহমান এ খবর নিশ্চিত করে জানান, মাদক ব্যবসায়ী প্রবালকে আটক করতে গেলে সে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এসময় পুলিশ পাল্টা গুলি চালালে প্রবাল গুলিবিদ্ধ হয়। পরে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, পাঁচ রাউন্ড গুলি, ৫টি হাত বোমা ও দু’টি ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় এসআই খুরশিদ আলম ও এএসআই রামচন্দ্র নামে পুলিশের দুই কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।

নীলফামারী: জেলার সৈয়দপুরের গোলাহাট বধ্যভূমি এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ জনী (৩৪) ও শাহিন (৩২) নামে দুই মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছে। জনি শহরের নিচু কলোনি এলাকায় ও শাহিন ইসলামবাগ এলাকার বসবাস করত। এ ঘটনায় সৈয়দপুর থানার দারোগা ওয়াদুদ হোসেন ও কনস্টেবল মোকারম হোসেন আহত হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। ঘটনার বিষয়ে সৈয়দপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অশোক কুমার পাল বলেন, আটক জনী ও শাহিনকে আটক করার পর জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, গোলাহাট বধ্যভূমি এলাকায় রাতে নূর বাবু ও জসিয়ার রহমান জসি নামে দুই ব্যক্তি মাদকের চালান নিয়ে আসবেন। তাদের তথ্যমতে পুলিশ সেখানে অভিযানে গেলে মাদক বিক্রেতাদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ হয়। এতে জনি ও শাহিন নিহত হলেও বাকিরা পালিয়ে যায়।

ফেনী: সোমবার দিবাগত রাতে সদর উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লেমুয়া এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মঞ্জুর আলম মঞ্জু নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)-৭ সিপিসি-১ এর অধিনায়ক স্কোয়াড্রন লিডার শাফায়াত জামিল ফাহিম এ খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, নিহত মঞ্জুর দেহ তল্লাশি করে ১০ হাজার ইয়াবা, একটি বিদেশি পিস্তল, সাতটি গুলি ও পাঁচটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে।