ফিরে দেখা ১৯৩০ বিশ্বকাপ: আয়োজনই কঠিন ছিল

আর্জেন্টাইন মানুষের ফুটবল-প্রীতি কতোটা তীব্র, তা বোঝাতে একটা তথ্যই যথেষ্ঠ। ১৯৩০ সালে একটা ম্যাচ দেখার জন্য বিশ্বের সবচেয়ে প্রশস্ত নদী ‘রিভার প্লাতে’ পাড়ি দিয়ে উরুগুয়ে এসেছিলেন ৩০ হাজারেরও বেশি আর্জেন্টাইন সমর্থক। ম্যাচটাও আবার যেন তেন ম্যাচ নয়। মন্টিভিডিওতে উরুগুয়ে-আর্জেন্টিনা লড়াইটা ছিল প্রথম বিশ্বকাপের ফাইনাল!

এমন একটা ম্যাচ নিয়ে সমর্থকদের উন্মাদনা থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক। তাই বলে ফাইনাল রোমাঞ্চ যে আর্জেন্টাইনদের এভাবে ছুঁয়ে যাবে সেটা হয়তো কেউ কল্পনাতেও ভাবেননি! কিন্তু যে স্বপ্ন নিয়ে আর্জেন্টাইনরা এতদূর এসেছেন সেটা পূরণ হয়নি। প্রথম বিশ্বকাপের ফাইনালে স্বাগতিক উরুগুয়ের কাছে ৪-২ গোলে হেরে হাতছোঁয়া দূরত্বে শিরোপা রেখে এসেছিল মেসি-ম্যারাডোনাদের দেশ আর্জেন্টিনা।

ইতিহাসের প্রথম বিশ্বকাপ ফাইনাল আরেকটি ঘটনার কারণে সারাজীবন মনে থাকবে ফুটবলপ্রেমীদের। মন্টিভিডিওর ঐতিহাসিক ম্যাচটা হয়েছিল দুটি বল দিয়ে। প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনার এবং দ্বিতীয়ার্ধে উরুগুয়ের পছন্দসই বল দিয়ে টুর্নামেন্টের সমাপ্তি টানা হয়। দুই দেশের আলোচনার মাধ্যমেই ফাইনালে দুটি বল দিয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ফিফা।

আয়োজন সফলভাবে শেষ হলেও প্রথম বিশ্বকাপ মাঠে গড়াবে কিনা তা নিয়ে ছিলো জোর সংশয়। ১৯৩০ সালে ফিফা বিশ্বের প্রায় সব দেশকে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের আহ্ববান জানায়। তাদের এই আহ্ববানে সারা দিয়েছে মাত্র ১৩টি দল। অনেক নাটকীয়তার পর দক্ষিণ আমেরিকার সাতটি, ইউরোপের চারটি এবং উত্তর আমেরিকার দুটি দেশ অংশ নেয় বিশ্বকাপে।

প্রথম সেই বৈশ্বিক আসরের আয়োজক ছিল উরুগুয়ে। দেশটির স্বাধীনতার শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে ফিফা তাদের বিশ্বকাপ আয়োজনের সুবর্ণ সুযোগ দেয়। বিস্ময়কর হচ্ছে- বিশ্বকাপের সফরকারী ১২টি দেশেরই যাবতীয় ব্যয় বহন করে স্বাগতিক উরুগুয়ে। তবু এই আসর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল ইউরোপের জায়ান্ট দলগুলো। আটলান্টিক সাগর পাড়ি দিয়ে দুই মাসের দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল সফরের পক্ষে ছিল না তারা।

শেষ পর্যন্ত ইউরোপ থেকে বেলজিয়াম, ফ্রান্স, রোমানিয়া ও যুগোস্লোভাকিয়াকে বিশ্বকাপে নিয়ে আসে ফিফা। মজার বিষয় হচ্ছে ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দল পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই হেরেছিল যুগোস্লোভাকিয়ার কাছে।

প্রথম বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া দলগুলো হচ্ছে- উরুগুয়ে (স্বাগতিক), ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো, প্যারাগুয়ে, চিলি, পেরু, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, রোমানিয়া, যুগোস্লোভাকিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও বলিভিয়া। এই দলগুলোকে চারটি গ্রুপে বিভক্ত করা হয়। চারটি দল নিয়ে গ্রুপ ‘১’ এবং বাকি তিনটি গ্রুপ হয় তিনটি করে দল নিয়ে।

তিনটি ভেন্যুতে প্রথম বিশ্বকাপের ১৮টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। এই আসর দিয়েই রবিন লিগ রাউন্ডের প্রচলন শুরু হয়। ৭০ গোলের টুর্নামেন্ট ম্যাচপ্রতি গড়ে ৩.৯টি গোল দেখেছে। সর্বোচ্চ ১৮টি গোল করেছিল আর্জেন্টিনা।

আর্জেন্টাইন ফরওয়ার্ড গুলারমো স্টাবির্লো সর্বোচ্চ (৮টি) গোল করে জিতেছিলেন গোল্ডেন বুট। যদিও বিশ্বকাপের প্রথম গোলটা ছিল ফ্রান্সের লুসেন লরেন্টের। আর বিশ্বমঞ্চে প্রথম লাল কার্ড দেখার দুঃস্বপ্নের অভিজ্ঞতাটা হয়েছিল পেরু ডিফেন্ডার প্লাসিডো গালিন্ডোর।