চীনের মুসলিমদের নতুন আতঙ্ক ‘রি-এডুকেশন ক্যাম্প’

চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় এক কোটির বেশি মুসলিমের বসবাস। এখানকার মুসলিমদের ওপর দেশটির কমিউনিস্ট সরকারের নিপীড়ন সারা বিশ্বে কুখ্যাতি পেয়েছে। নিপীড়ন-নির্যাতনের নতুন নতুন ঘটনা সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে। সেখানকার মুসলিমদের জন্য নতুন এক দুঃস্বপ্নের নাম সরকারি পরিচালিত ‘রি-এডুকেশন ক্যাম্প তথা পুনঃশিক্ষা শিবির’। যা রীতিমতো আতঙ্কে পরিণত হয়েছে।

কায়রাত সামারকান্দ নামের জিনজিয়াং প্রদেশের এক মুসলিম বলেন, 'তার একমাত্র ‘অপরাধ’ হলো তিনি মুসলিম এবং তিনি পার্শ্ববর্তী কাজাখস্তান ভ্রমণে গিয়েছিলেন। কেবল এই জন্যই পুলিশ তাকে আটক করে। তিন দিন আটকে রেখে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে। এরপর নভেম্বরে জিনজিয়াংয়ের একটি ‘রি-এডুকেশন ক্যাম্পে’ তিন মাসের জন্য তাকে স্থানান্তর করা হয়।'

এক সাক্ষাৎকারে কায়রাত বলেন, 'সেখানে তিনি অন্তহীন মগজধোলাইয়ের (ব্রেইনওয়াশিং) এবং অবমাননাকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। তাকে প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা কমিউনিস্ট প্রোপাগান্ডা পড়তে বাধ্য করা হয় এবং প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে ধন্যবাদ জানিয়ে এবং তার দীর্ঘায়ু কামনা করে স্লোগান দিতে হয়।'

ভুক্তভোগী এই মুসলিম বলেন, 'কেউ যদি এই নিয়ম অমান্য করে এবং ঠিকমতো অনুসরণ না করে, হাতাহাতিতে জড়ায় কিংবা পড়তে গড়িমসি বা দেরি করে, তাকে হাতকড়া এবং পায়ে শিকল পরিয়ে ১২ ঘণ্টা ফেলে রাখা হয়।'

এরপরও কেউ যদি অবাধ্য হয় তাকে কুখ্যাত ওয়াটারবোর্ডিং (নাকে-মুখে কাপড় বেঁধে এর ওপর টানা পানি ঢালা) পদ্ধতি ব্যবহার করে এবং ‘টাইগার চেয়ার’ নামে পরিচিত একটি ধাতব চেয়ারে বসিয়ে ইলেক্ট্রিক শক দিয়ে শাস্তি দেয়া হয়। কায়রাত নিজেও এই শাস্তি পেয়েছেন। কুখ্যাত গুয়ান্তনামো বে কারাগারে সন্দেহভাজন আলকায়েদা সদস্যদের এমন শাস্তি দিতো মার্কিন সেনা ও গোয়েন্দারা।

মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জার্মানির কর্নটালের ইউরোপিয়ান স্কুল অব কালচার অ্যান্ড থিয়লজি’র আদ্রিয়ান জেনজ বলেন, 'এসব গণ ‘রি-এডুকেশন’ ক্যাম্পে কয়েক হাজার থেকে শুরু করে এক লাখের বেশি মুসলিমকে আটকে রাখা হয়েছে।'

চীনের প্রত্যন্ত পশ্চিমাঞ্চলীয় জিনজিয়াং প্রদেশের দুই কোটি ১০ লাখ অধিবাসীর মধ্যে মুসলিম হলো এক কোটি ১০ লাখ। বাকিদের অধিকাংশ জাতিগত চীনা হান সেটলার। এখনকার মুসলিম তরুণরাই বিশেষ করে এই ‘রি-এডুকেশন ক্যাম্পের’ নিপীড়নের শিকার।

সূত্র: এনডিটিভি