কক্সবাজারের পাহাড়ে ৫০ হাজার পরিবারের ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস
- Details
- by নিজস্ব প্রতিবেদক
কক্সবাজারের পাহাড়ি কোলে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করছে ৫০ হাজারের বেশি পরিবার। অব্যাহতভাবে পাহাড় কাটা ও পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতির কারণে বর্তমানে পাহাড় ধসের শঙ্কা বেড়ে গেছে। কক্সবাজার শহর ও শহরতলিতে প্রায় ৩০ হাজার পরিবার এবং জেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় আরো ২০ হাজার পরিবার ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ে বসবাস করছে।
অভিযোগ রয়েছে, প্রতিবছর পাহাড়ে অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদ করার ঘোষণা দিলেও মূলত তা বাস্তবায়ন করা হয় না। বর্ষায় প্রশাসনের একটু লোক দেখানো কার্যক্রম দেখা গেলেও বর্ষার পরে আর কোনো কার্যক্রম থাকে না।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আলী কবির জানান, প্রায় ছয় হাজার একর বনভূমিতে গড়ে উঠেছে রোহিঙ্গাদের বসতি। রোহিঙ্গাদের দখলে চলে যাওয়া ভূমি বাদ দিয়ে জেলায় প্রায় ২০ হাজার একর বনভূমি বেহাত হয়েছে। এর মধ্যে ৫০ হাজারের বেশি পরিবার পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বাস করছে।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক সাইফুল আশ্রাব জানান, পাহাড়ি অঞ্চল হিসেবে কক্সবাজার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ২০১০ সালের ১৫ জুন হিমছড়িতের ছয় সেনা সদস্যসহ সেই বছর জেলার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধসে ৫৪ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এছাড়া ২০১০ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দুই শতাধিক প্রাণহানি হয়েছে। প্রতিবছরই পাহাড় ধসে কক্সবাজারে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে থাকে।
তিনি আরো বলেন, বৃষ্টি বা অতি বৃষ্টিতে প্রতিবছর পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দিলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তৎপর হয়ে উঠেন। এবারো বর্ষার শুরুতে জেলা প্রশাসন পাহাড় কাটা বন্ধ ও ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের বাঁচাতে উদ্যোগ নিয়েছেন।
এ বিষয়ে সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খালেদ মাহমুদকে প্রধান করে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের তালিকা প্রণয়ন ও তাদের সরিয়ে নিতে ছয়টি কমিটি গঠন করা হয়।
এই কমিটিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশের প্রতিনিধি, কক্সবাজার উন্নয়ন কতৃপক্ষের প্রতিনিধি, ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি, পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, বনবিভাগের প্রতিনিধি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সদস্য হিসাবে রাখা হয়। গঠিত এসব কমিটির কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খালেদ মাহমুদ বলেন, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের তালিকা প্রণয়ন করার জন্য গঠিত কমিটি তালিকা প্রণয়ন করার পাশাপাশি নিয়মিত মাইকিংও করবে। এরপরও ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীরা যদি সরে না যায় তাহলে তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে কমিটি কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
তিনি জানান, কক্সবাজার শহর ও শহরতলিতে ৩০ হাজারের বেশি পরিবারের মানুষ পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন। বিশেষ করে শহরের লাইট হাউজ, সৈকত পাড়া, ডিসি পাহাড়, সার্কিট হাউস সংলগ্ন, মোহাজের পাড়া, দক্ষিণ ঘোনারপাড়া, বাদশাঘোনা, বৈদ্যঘোনা, মধ্যম ঘোনারপাড়া, পাহাড়তলি, কলাতলী আদর্শগ্রাম, ঝরিঝরিকুয়া, সদর উপজেলা অফিস সংলগ্ন, লিংকরোড পাহাড়ি এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বসতি বেশি। আর এসব ঝুঁকিপূর্ণ বসতি গড়ে উঠেছে বনভূমি ও পাহাড়ি খাস জমিতে।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আজমল হুদা বলেন, কক্সবাজারের বন বিভাগের জমি আর জেলা প্রশাসনের পাহাড়ি জমি দখল করে প্রতিনিয়ত অবৈধ বসতি গড়ে উঠছে। রাজনৈতিক নেতা, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এসব পাহাড় দখলে জড়িত। এমনকি বিভিন্ন হাউজিং গ্রুপ, ডেভেলপার কোম্পানি দখল করে রেখেছে পাহাড়ি জমি। প্রতিদিন নতুন নতুন পাহাড় দখল হচ্ছে আর কাটা হচ্ছে পাহাড়।
এজন্য জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘যখন তাদের (জেলা প্রশাসন ও বনবিভাগের) পাহাড়ি জমি দখল করে বসত নির্মাণ করা হয় তখন তারা বাধা দেন না। এভাবে অবাধে সারা বছর পাহাড় দখল হতে থাকে। আর বর্ষা মৌসুম আসলেই শুরু হয় তাদের তৎপরতা। তাও আবার অনেকটা মিডিয়া ফটোসেশনের মতোই।’
এদিকে কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি এডভোকেট আয়াছুর রহমান জানান, ‘বর্ষা মৌসুমের আগে পাহাড়ে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা প্রয়োজন। পাহাড়ে দিন দিন অবৈধ বসতি বেড়ে যাচ্ছে। এখন পাহাড় ধস হলেই মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘ হবে। আর এই মৃত্যুর দায়ভার বর্তাবে দায়িত্বশীলদের উপর।’
অন্যদিকে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ বলেন, ‘জেলা প্রশাসন, উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পুলিশ বিভাগ, পৌরসভা, পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি নিয়ে একটি কমিটি গঠন হয়েছে। কমিটি যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। শুধু কমিটি কাজ করলে হবে না এ জন্য নাগরিকদের সচেতন হতে হবে।’
জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমের আগে ঝুঁকিপূর্ণ বসতির তালিকা তৈরি সম্ভব হবে। পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যদি নির্দেশনা মানা না হয় তাহলে উচ্ছেদ করে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় দেয়া হবে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.