হায়দরাবাদে সাকিবের এমন পারফরম্যান্সের যতো কারণ

সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে চলতি আইপিএল অনেকটা স্বপ্নের মতোই কাটছে সাকিব আল হাসানের। এক-দুটো ম্যাচ বাদ দিলে প্রতি ম্যাচেই হায়দরাবাদের হয়ে মাঠে দারুণ অবদান রাখছেন বাংলাদেশি অলরাউন্ডার। হায়দরাবাদের একাধিক জয়ে ব্যাট-বলে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাকিব।

গত ৭ মার্চ ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে দলের বিপদের সময় ৩৫ রানের দারুণ কার্যকারী এক ইনিংস খেলার পর বল হাতে দুই উইকেট তুলে নিয়েছিলেন। এর আগে কলকাতার বিপক্ষেও হায়দরাবাদের জয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সাকিব। ১৪ এপ্রিল কলকাতার বিপক্ষে বল হাতে ২১ রানে দুই উইকেট তুলে নেওয়ার পর ব্যাট হাতে ২৭ রানের মহা গুরুত্বপূর্ণ এক ইনিংস খেলেছিলেন।

সব মিলিয়ে হায়দরাবাদের হয়ে এখন পর্যন্ত ১১ ম্যাচ খেলে সাকিব উইকেট শিকার করেছেন ১২টি। এখন পর্যন্ত ৮ ইনিংসে ব্যাট করে সংগ্রহ করেছেন ১৫৮ রান। ইতোমধ্যে সাকিবই চলতি আইপিএলে এখন পর্যন্ত সেরা অলরাউন্ডার কিনা সেই প্রশ্ন উঠছে। আশ্চর্যের বিষয় গত মৌসুমে মাত্র একটা ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন এই সাকিব। কলকাতা নাইট রাইডার্স সাকিবকে গতবার মাত্র একটা ম্যাচে সেরা একাদশে রেখেছিল। তাহলে হঠাৎ কি এমন হলো যে হায়দরাবাদে এসে রাতারাতি ভালো পারফরমার বনে গেলেন সাকিব? তাহলে হায়দরাবাদে সাকিবের সাফল্যের কারণগুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক।

পর্যাপ্ত সুযোগ: চলতি আইপিএলের শুরুর দিকে ভারতের জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে বলেছিলেন, সাকিব এমন একজন ক্রিকেটার যে সুযোগ পেলে যেকোনো পরিস্থিতিতে পারফরর্ম করতে পারে। হার্শার এই কথাটা হয়তো কান খাড়া করেই শুনেছিল হায়দরাবাদের টিম ম্যানেজমেন্ট! এখন পর্যন্ত চলতি আইপিএলে ১১ ম্যাচ খেলেছে দলটি, যার সব কটাতেই সেরা একাদশে ছিলেন সাকিব। মাঝে কিছু ম্যাচে প্রত্যাশা মতো পারফরম্যান্স দেখাতে পারেননি। কিন্তু তাকে ছুড়ে ফেলে দেয়নি হায়দরাবাদ। আর সাকিবও পর্যাপ্ত সুযোগ পেয়ে আস্থার প্রতিদান দিচ্ছেন দুহাত ভরেই। পর্যাপ্ত সুযোগই সাকিবকে এতোটা জ্বলে উঠতে সাহায্য করেছে।

আক্রমণাত্মক বোলি: চলতি আইপিএলে সব দলের মধ্যে হায়দরাবাদের বোলিং ডিপার্টমেন্ট এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সফল, এমন কথা বললে আপত্তি তুলবে না হয়তো কেউই। আর এই সাফল্যের বড় কারণ তাদের বোলাররা প্রায় সবাই আক্রমণাত্মক। রশিদ খান, ভুবনেশ্বর কুমার, সন্দীপ শর্মা, সিদ্ধার্থ কৌল চারজনই বেশ আক্রমণাত্মক বোলার। সাকিব নিজেও আক্রমণাত্মক। আর এটা বড় সুবিধা হচ্ছে সাকিবের জন্য।

ইদানিং হায়দরাবাদ অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন সাধারণত সাকিবকে দিয়ে পাওয়ার প্লেতে এক ওভার বোলিং করাচ্ছেন। আর বাকি ওভারগুলো করাচ্ছেন ইনিংসের মাঝের সময়টাতে। এতে বেশি সুবিধা আদায় করতে পারছেন সাকিব। রশিদ খান, ভুবনেশ্বর কুমার, সিদ্ধার্থ কৌলরা প্রথম দিকে প্রতিপক্ষের ওপর চাপ তৈরি করতে পারলে সাকিব বোলিংয়ে এসে আরও চেপে ধরে সাফল্য পাচ্ছেন।

অধারাবাহিক টপ অর্ডার: সাকিবকে সাধারণত পাঁচ নম্বরে ব্যাট করাচ্ছে হায়দরাবাদ। তবে পাঁচে হলেও কয়েকটা ম্যাচে বেশ আগেই ব্যাট হাতে নামতে পেরেছেন সাকিব। হায়দরাবাদের টপ অর্ডারের মধ্যে কেন উইলিয়ামসই কেবল ধারাবাহিক। মানিশ পান্ডে, শিখর ধাওয়ান, ঋদ্ধিমান সাহারা ধারাবাহিকভাবে বড় রান করতে পারছেন না। মানিশ পান্ডে তো টানা ব্যর্থ ব্যাট হাতে। এতে সাকিব কিছু ম্যাচে তাড়াতাড়ি ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়েছেন। যেটা তাকে ১৫৮ রান করতে বড় সাহয্য করেছে।

কোচের আস্থা: হায়দরাবাদের প্রধান কোচ টম মুডির সঙ্গে আগেও কাজ করা অভিজ্ঞতা আছে সাকিবের। সাকিবকে অনেক আগে থেকেই চিনেন মুরি। আর সেই চেনাজানা থেকে কোচের পূর্ণ সমর্থনই পাচ্ছেন বাংলাদেশি তারকা। পাশাপাশি হায়দরাবাদের মেন্টর ভিভিএস লক্ষণও সাকিবের প্রসংশায় পঞ্চমুখ। অল্পতেই ছুড়ে ফেলার যে ঝুঁকি সেটা অন্তত কম সাকিবের। এই নির্ভরতাও ভালো পারফর্ম করতে সাহায্য করছে বাংলাদেশ অধিনায়ককে।