রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসনে জোর দিন, ওআইসিকে মন্ত্রী

রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে দ্রুত ফেরাতে মিয়ানমার সরকারকে রাজি করাতে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্য দেশগুলোর প্রচেষ্টা আরো দৃঢ় করার আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী। 

তিনি বলেন, ‘ওআইসিতে রোহিঙ্গাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশের জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। সেই সাথে মিয়ানমার সরকারকে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রচেষ্টা জোরদার করা উচিত।’

শনিবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনের (ওআইসি-সিএফএম) ৪৫তম অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন,‘মিয়ানমার থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাধ্য হয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। ১১ লাখেরও বেশি মানুষ মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডা গণহত্যার পর রোহিঙ্গা সংকট বিশ্বের সবচেয়ে বড় সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে। তাদেরকে প্রায়শই বিশ্বের সবচেয়ে অত্যাচারিত সংখ্যালঘু হিসেবে অভিহিত করা হয় ।’

ওআইসি সদস্যদের তাদের (রোহিঙ্গা) প্রতি সংহতি প্রকাশের জন্য পদক্ষেপের আহ্বান জানান মন্ত্রী।

ওআইসির সদস্য নয় এমন অনেক দেশে বিপুল সংখ্যক মুসলমান রয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী তাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। যাতে আরো বেশি সংখ্যক মুসলিম জনগোষ্ঠী ওআইসির ভালো কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পারে।

এই বছর সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘টেকসই শান্তির জন্য ইসলামি মূল্যবোধ, সংহতি ও উন্নয়ন’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শান্তি, সংহতি ও উন্নয়ন এই তিনটি স্তম্ভ একই সূত্রে গাঁথা।

‘আজ আমরা ইসলাম ফোবিয়া, সন্ত্রাসবাদ, উগ্রবাদ, দ্বন্দ্ব এবং বৈষম্যসহ নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছি’, যোগ করে মন্ত্রী বলেন, ফিলিস্তিনকে দখল করা অব্যাহত রয়েছে এবং ফিলিস্তিনিরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হচ্ছে।

প্রযুক্তিগত রূপান্তর সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের একটি দ্রুত প্রযুক্তিগত অগ্রগতি দেখছি যা আমাদের বিশ্বকে রূপান্তরিত করছে। এটি সমাজ ও অর্থনীতিতে নাটকীয় সামাজিক-অর্থনৈতিক পরিবর্তন এনেছে। কীভাবে আমরা দ্রুত প্রযুক্তিগত রূপান্তরের সুবিধাগুলো ব্যবহার এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারবো তার ওপর আমাদের ভবিষ্যত নির্ভর করবে।’

তিনি বলেন, ন্যায়বিচার, আইন-শৃঙ্খলা ও জনগণের ক্ষমতায়নের মাধ্যমেই একটি জাতির উন্নয়ন অর্জন করা সম্ভব।

দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে কার্যক্রম পরিচালনার গুরুত্বারোপ করে মাহমুদ আলী বলেন, ‘বর্তমান যুগের চাহিদা অনুযায়ী আমাদের কার্যক্রম এবং পদ্ধতি পুনরায় চিন্তা করতে হবে। অন্যথায় আমাদের সংগঠনের অবস্থান ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।’

মাহমুদ আলী ৪৪তম সিএফএম এর দায়িত্বভারের জন্য আইভরি কোস্টের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্সেল আমন তানহকে ধন্যবাদ জানান। আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। ১৯৮৩ সালের পর দ্বিতীয়বারের মতো সিএফএম সম্মেলন আয়োজন করছে বাংলাদেশ।

সম্মেলনে ২৭ জন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ১২ জন প্রতিমন্ত্রীসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রায় ৬০০ প্রতিনিধি যোগ দিয়েছেন। কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিশ্চিয়া ফ্রিল্যান্ড বিশেষ অতিথি হিসেবে সম্মেলনে উপস্থিত আছেন।