রবিবার থেকে খাগড়াছড়িতে ৩ দিনের হরতাল

রাঙামাটিতে দুর্বৃত্তের হামলায় নিহত মাইক্রো চালক মো. সজিব হাওলাদারের হত্যার প্রতিবাদে এবং অপহৃত তিন বাঙালির মুক্তির দাবিতে রবিবার থেকে খাগড়াছড়ি জেলায় তিন দিনের হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বৃহত্তর পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ ও পার্বত্য অধিকার ফোরাম। শনিবার সকালে শহরে বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষে প্রতিবাদ সমাবেশে এই ঘোষণা দেন পার্বত্য অধিকার ফোরামের আহ্বায়ক মাইন উদ্দিন।

সংগঠন দুটির নেতা-কর্মীরা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শাপলা চত্বরে এক প্রতিবাদ সমাবেশ করে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বৃহত্তর পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার কাউন্সিলর এসএম মাসুম রানা, পার্বত্য অধিকার ফোরামের মাটিরাঙ্গা আহ্বায়ক হেলাল উদ্দিন, কলেজ প্রতিনিধি মো. ইব্রাহীম খলিল, পারভেজ আলম ও সোহেল রানা প্রমুখ।

বক্তারা পাহাড়ে খুন, অপহরণসহ চাঁদাবাজির কারণে ইউপিডিএফকে অবিলম্বে নিষিদ্ধের দাবি জানান। সেই সাথে রবিবারের মধ্যে জড়িতদের আটকে প্রশাসন ব্যর্থ হলে এবং অপহৃতদের উদ্ধার করা না হলে কঠোর কর্মসূচির দেয়ারও হুঁশিয়ারি দেন।

মাইক্রো চালক মো. সজিব হাওলাদার হত্যার প্রতিবাদে একই সময়ে শহরের শাপলা চত্বরে মানববন্ধন পালন করেছে রেন্ট এ কার চালক সমিতির সদস্যরা। ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে তারা সোমবার পুরো জেলায় কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেয়।

পরপর দু’দিনের হত্যাকাণ্ডের জন্য ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টকে (ইউপিডিএফ-প্রসিত খীসা) দায়ী করেছে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা)। অবশ্য ইউপিডিএফ এর পক্ষ থেকে প্রতিপক্ষ দলের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

এদিকে রাঙামাটির নানিয়ারচরে শুক্রবার দুর্বৃত্তের ব্রাশ ফায়ারে নিহত ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) আহ্বায়ক তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মার শেষকৃত্য অনুষ্ঠান খাগড়াছড়িতে সম্পন্ন হয়েছে। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে শনিবার দুপুরে জেলা সদরের তেতুলতলা এলাকায় তার দাহক্রিয়া করা হয়। একই সাথে বর্মার সহযোগী প্রণব চাকমা ওরফে তনয় এর লাশের দাহক্রিয়া ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় শেষ হয়েছে।

দাহক্রিয়ার আগে শুক্রবারের ঘটনায় নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) গ্রুপের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হয়।

দাহক্রিয়ার আগে উপস্থিত সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) গ্রুপের রাজনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক বিভূরঞ্জন চাকমা ঘটনার জন্য প্রসিতপন্থী ইউপিডিএফকে দায়ী করেন। তিনি এই সংগঠনকে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ করে আইনের আওতায় এনে সকল হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানান।

নিহতদের পরিবারের সদস্যরা জানান, সদ্যগঠিত ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) এর শীর্ষনেতা তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মার গ্রামের বাড়ি রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচর এবং প্রণব চাকমা ওরফে তনয় এর বাড়ি একই জেলার বাঘাইছড়িতে হলেও নিরাপত্তাজনিত কারণে খাগড়াছড়িতেই দাহ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এদিকে শুক্রবারের ঘটনায় নিহত সেতু লাল দেওয়ান ও সুজন চাকমার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানও শনিবার দুপুরে জেলার মহালছড়ির স’মিল এলাকায় সম্পন্ন হয়েছে। অন্যদিকে মাইক্রোবাস চালক মো. সজিব হাওলাদারের লাশ শুক্রবার রাতেই গ্রামের বাড়ি বরিশালে পাঠানো হয়। নিহতদের মধ্যে চারজনের লাশের দাহক্রিয়া শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার আলী আহমদ খান জানান, শুক্রবারের দুর্বৃত্ত হামলার ঘটনাস্থল রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর হওয়ায় সেই থানায় মামলা হবে।  তিনি আরো জানান, এই ঘটনায় আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও শান্ত রয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার দুর্বৃত্তদের গুলিতে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির অন্যতম শীর্ষ নেতা শক্তিমান চাকমা নিহত হন। তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে শুক্রবার সকালে নানিয়ারচরের বেতছড়ি এলাকায় দুর্বৃত্তদের ব্রাশফায়ারে ৫ জন নিহত ও ৮ জন গুলিবিদ্ধ হন। ইউএনবি।