শুরু হয়েছে, কিন্তু শেষ হচ্ছে না কক্সবাজার স্টেডিয়ামের নির্মাণ!

গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে ক্রিকেটের এমন জোয়ার বয়ে গেছে যে, তা এখন আর কেবল খেলা নেই; হয়ে গেছে সংস্কৃতির অংশ। যে সংস্কৃতি দিন দিন কেবল বিকশিতই হচ্ছে। ক্রিকেট হয়ে উঠছে জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। ক্রিকেটের এই জোয়ার আরো বেগবান করতে ২০১৪ সালে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে উদ্বোধন করা হয় শেখ কামাল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম। তখন স্বপ্ন ছিলো, এই স্টেডিয়ামকে কেন্দ্র করে পর্যটন নগরী হয়ে উঠবে ক্রিকেটের নগরীও। কিন্তু স্বপ্নটা গত চার বছরে কেবল ফিকেই হয়েছে। কক্সবাজারকে ক্রিকেট নগরী করার যে পরিকল্পনা, তা ব্যাহত হচ্ছে নানা কারণে।

২০১৪ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ভেন্যুর তালিকায় ছিলো কক্সবাজার স্টেডিয়াম। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে নির্মাণ কাজ শেষ করতে না পারায় এই মাঠে কোনো ম্যাচ আয়োজন সম্ভব হয়নি। তবে ২০১৬ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে কক্সবাজারে বেশ কয়েকটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। 

মূল স্টেডিয়াম কমপ্লেক্সের মধ্যে আছে এক লাখ দর্শক ধারণ ক্ষমতার গ্যালারি, মিডিয়া সেন্টার, একাডেমির ডরমেটরি, অ্যাকাডেমি ভবন, জিম, সুইমিংপুল। এর কোনোটিই নির্মিত হয়নি। এখন পর্যন্ত প্রস্তুত হয়েছে কেবল মূল স্টেডিয়াম মাঠ, আউটার মাঠ ও কিছু উইকেট। অর্থাৎ মূল অবকাঠামোর ২০ শতাংশ কাজও সম্পন্ন হয়নি।

কক্সবাজার স্টেডিয়ামের মাত্র ৫০০ মিটারের মধ্যেই বঙ্গোপসাগরের উপকূল। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের এতো কাছে হওয়ায় এই স্টেডিয়াম হয়ে উঠতে পারে পর্যটকদের অবশ্য গন্তব্যগুলোর একটি। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেট ভেন্যুগুলোরর বাইরে যে কটি স্টেডিয়াম আছে, সেগুলোকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার পথে সবচেয়ে বড় বাধা হলো অবকাঠামোগত অনুন্নয়ন। এ ক্ষেত্রে বিদেশি দলগুলোর থাকার জন্য পর্যাপ্ত হোটেল, যাতায়াত ব্যবস্থা হয়ে দাঁড়ায় বিশাল বাধা। কিন্তু কক্সবাজার স্টেডিয়ামের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো বাধা নেই।

দেশের অন্যান্য বড় শহরের মতো কক্সবাজারে নেই যানজট। কক্সবাজার বিমানবন্দরের অবস্থানও গাড়িতে মাত্র ১০ মিনিটের দূরত্বে। দেশের প্রধান পর্যটন শহর হওয়ায় কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক মানের হোটেলেরও অভাব নেই। তারপরও কক্সবাজার স্টেডিয়ামের উন্নতি অদৃশ্য কারণে আটকে আছে।

কক্সবাজার স্টেডিয়ামটি মূলত একটি ক্রীড়া কমপ্লেক্সের অন্তর্ভুক্ত। যেখানে মূল স্টেডিয়ামের সঙ্গে আছে আরো দুটি মাঠ। এই তিনটি মাঠকে খেলার উপযোগী রাখতে এবং রক্ষণাবেক্ষণ করতে অন্তত ৬০ জন লোকের প্রয়োজন। কিন্তু এখানে বিসিবি দায়িত্ব দিয়ে রেখেছে মাত্র ২২ জনকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যাশিত উন্নয়ন তো হচ্ছেই না, বরং যে উন্নয়নটুকু আছে, তাও যাচ্ছে ক্ষয়ে।

এ বিষয়ে আহসানুল হক বাহার, কক্সবাজার স্টেডিয়ামের ব্যবস্থাপক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘বিসিবির কাছে আমার পক্ষ থেকে নিয়মিত বার্তা পাঠাচ্ছি। যাতে রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন কাজের জন্য পর্যাপ্ত লোকবল দেয়া হয়। বিসিবি প্রায়ই দুই একজন করে নিয়োগ দেয়। কিন্তু তাতেও হচ্ছে না। পুরো প্রকল্পের দেখাশোনার জন্য আমাদের অন্তত ৬০ জন লোকের দরকার।’

কেনো আটকে আছে উন্নয়ন?

৫১ একর জমির উপরের নির্মাণাধীন এই স্টেডিয়ামের সম্পন্ন করণের কাজ আটকে আছে মূলত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) কর্তৃক অর্থের বরাদ্দ যথাসময়ে না হওয়ায়। পুরো স্টেডিয়াম প্রকল্পের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে ১৪০ কোটি টাকা। এই টাকার বরাদ্দ ও জোগান যথাযথভাবে না হওয়ার কারণেই মূলত আটকে আছে প্রস্তাবিত স্টেডিয়ামের সম্পন্নকরণ কাজ।

বিসিবির গ্রাউন্ডস অ্যান্ড ফ্যাসিলিটি কমিটির ব্যবস্থাপক সৈয়দ আব্দুল বাতেন এ বিষয়ে বলেন, ‘আমাদের কাছে কক্সবাজার স্টেডিয়ামের উন্নয়ন কেনো আটকে আছে এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। এক সময় বিসিবি এটি নিজস্ব অর্থায়নে করতে চেয়েছিলো। কিন্তু এখন আর তা নেই। এটি সরকারের অর্থায়নেনই সম্পন্ন করা হবে। কিন্তু সরকারের অর্থায়ন কোন পর্যায়ে আছে, সে বিষয়ে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ তথ্য জানাতে পারবে।’

বিষয়টি নিয়ে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব মাসুদ করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে এখন কিছুই জানি না।’

মন নেই বিসিবির

কক্সবাজার স্টেডিয়াম কমপ্লেক্সের সম্পন্নকরণ কাজ এগিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া আটকে গেলেও বিসিবির তাতে মন নেই বললেও চলে। যে স্টেডিয়ামকে প্রস্তুত করা হচ্ছিলো ২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সামনে রেখে, সেটা কোন যুক্তিতে ২০১৮ সালে এসেও আর উন্নত হয়নি, তা বলতে পারছে না বিসিবিও!

এর মধ্যেই রাজধানীর পূর্বাচলে নতুন ক্রিকেট স্টেডিয়াম তৈরির দিকে মনোযোগ দিয়েছে বিসিবি। সেখানে ৩৭.৫ একর জমিও বরাদ্দ পেয়ে গেছে দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা। কিন্তু কক্সবাজারের মতো জায়গায় অবিশ্বাস্য সব সম্ভবানা নিয়ে নির্মাণাধীন স্টেডিয়ামের কাজ চার বছর ধরে বাদ রেখে নতুন প্রকল্পে হাত দেয়া কতোটা যৌক্তিক, তা নিয়ে হচ্ছে না কোনো কার্যকর আলোচনা।