ঢাকার সাথে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো উন্নত করতে ছয় লেনের একটি এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। ২১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ সড়কটি বর্তমানের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশেই নির্মাণ করা হবে। এর জন্য রাস্তার পাশের বিভিন্ন স্থাপনা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বসত-ঘর স্থানান্তরের প্রয়োজন পড়বে।

dhaka chittagong 6 lane

সড়ক যোগাযোগ ও সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্প বাস্তবায়নে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। আর এর তদারকির দায়িত্বে থাকবে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ।

তবে প্রকল্প সম্পর্কে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর শামসুল হক ও প্রফেসর সারোয়ার জাহান এবং নগর উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর নজরুল ইসলাম ইউএনবিকে ভিন্ন মত দেন। তারা জানান, ছয় লেনের এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ আমাদের মতো দেশের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। বিভিন্ন কারণে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ সম্ভব নয়, বিশেষ করে ভূমি স্বল্পতা এবং অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে এটা সম্ভব হয়ে উঠবে না।

এসব সমস্যা উতড়ে যেতে প্রচুর টাকা খরচ করতে হবে। বিশেষ করে ভূমি অধিগ্রহণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, বাড়ি-ঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা স্থানান্তরে এই বিপুল পরিমাণ খরচ হবে।

তারা এর বিকল্প হিসেবে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকারকে বর্তমান ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ব্যবহার করে মাল্টিমডেল পরিবহন করিডোরের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ অথবা বর্তমান মহাসড়কটির লেন বৃদ্ধি করে তা বড় করার পাশাপাশি রেল যোগাযোগের উন্নতির পরামর্শ দেন।

সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের প্রকল্প পরিচালক রুহুল আমিন ইউএনবিকে জানান, ২০২৪ সালের মধ্যে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকার প্রবেশমুখ কাঁচপুর ব্রিজের পাশ থেকে এটি নির্মাণ হয়ে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের সাথে সংযুক্ত হবে।

সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের প্রকল্প ব্যবস্থাপক শিশির কান্তি রুথ জানান, অর্থ মন্ত্রণালয় প্রকল্পটিতে অনুমোদন দেয়ার পর টেন্ডার আহ্বান করা হবে।

তিনি আরো জানান, ২০ হাজার কোটি টাকার সিংহভাগই খরচ হবে ৭৯৮ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, বাড়ি-ঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা স্থানান্তরে।

তবে প্রফেসর শামসুল হক বাংলাদেশের মতো অধিক জনসংখ্যার দেশে মসৃণ সড়ক যোগযোগ সম্ভব নয় বলে জানান। কারণ এখানে সড়কের পাশে বাজার ও বসবাসের বাড়ি-ঘর গড়ে ওঠায় সড়কে দ্রুত গতিতে চলাচল সম্ভব হয়ে উঠে না বলে জানান।

তিনি বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক আমাদের ইকোনমিক করিডর। ভূমির সঠিক ব্যবহারে আমাদের উচিত মাল্টিমডেল ট্রান্সপোর্ট করিডর নির্মাণ করা।

প্রফেসর হক মনে করেন, ভূমি ধ্বংস করে সড়ক নির্মাণ সেকেলে ধারণা। বর্তমানে মাল্টিমডেল এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ ও রেল যোগাযোগের উন্নয়ন করাই কৌশলগত অর্থনৈতিক উন্নয়নের অংশ।

প্রফেসর নজরুল ইসলামও একই ধরনের মত দেন। বাংলাদেশের মতো বৃহৎ জনসংখ্যার ছোট দেশে ভূমি স্বল্পতার কারণেই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ সফল হবে না বলে মনে করেন তিনি। এর বদলে সরকারকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ এবং বর্তমান সড়ক সম্প্রসারণসহ বিকল্প চিন্তা করার আহ্বান জানান। অধিক ব্যয়বহুল এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প ফলপ্রসূ ও যুগোপযুগি হবে না বলেই তার মত।

প্রফেসর সারোয়ার আলমও ছয় লেনের বিশেষ এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ সঠিক সিদ্ধান্ত হবে না বলে মনে করেন। তিনি এর জন্য খরচ না করে রেল যোগাযোগের উন্নয়নের মাধ্যমে হাইস্পিড ট্রেন সার্ভিস চালু করার আহ্বান জানান।

তিনি আরো বলেন, সড়ক যতই নির্মাণ করবেন, ততই যানবাহন বাড়বে। আমরা যদি একটি কার্যকর রেল যোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন করতে পারি, তাহলে সড়কে যানবাহনের অাধিক্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে পাশাপাশি ট্রেন সার্ভিস বাড়ানোর মাধ্যমে আমাদের যোগাোযগও অব্যাহত থাকবে।

এদিকে প্রস্তাবিত এক্সপ্রেসওয়ের বিষয়ে দুই শহরের আশপাশের মানুষও নিজেদের উদ্বেগ জানিয়েছেন। এদের অনেককেই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ হলে বড় ক্ষতি এবং ঝামেলা ভোগ করতে হবে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশের মিরসরাই এলাকার বাসিন্দা ওয়াহিদ উল্লাহ বকুল বলেন, এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ হলে এর আশপাশে যাদের বাড়িঘরের অবস্থান তাদের বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।

তিনি বলেন, আমরা শুনেছি বারোদরগার হাট উচ্চ বিদ্যালয়, বারোদরগার হাট মাদ্রাসা, তেরাইল উচ্চ বিদ্যালয়সহ বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই এক্সপ্রেসওয়ের পথে পড়বে। এগুলো সরিয়ে দিতে হবে। এটা হলে আমাদের শিক্ষা জীবন একটি সমস্যার মধ্যে পড়বে। বকুল বলেন, বর্তমান সড়ককে কেন্দ্র করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে এই সমস্যা থেকে বাঁচা যাবে।

মিরসরাই সদরের আরেক বাসিন্দা ব্যবসায়ী হাসান শাহরিয়ার চৌধুরী বলেন, ছয় লেনের এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ হলে মিরসরাই উচ্চ বিদ্যালয়, মিরসরাই মাদ্রাসা এবং পীর মাওলানা অলি আহমেদের মাজার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শুধু এতটুকুই নয়, ঢাকা ও চট্টগ্রামের পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যোগ করেন তিনি।

মাসুদুল হক ও আব্দুর রহমান জাহাঙ্গীর, ইউএনবি।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.