লবণাক্ততা সহিষ্ণু ‘বিনা’ ধান চাষে সাফল্য

গোপালগঞ্জে লবণাক্ততা সহিষ্ণু ‘বিনা’ ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। অন্যান্য হাইব্রিড ধানের মতোই ফলনের হার বেশি হওয়াতে কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি। বিনা গোপালগঞ্জ উপ-কেন্দ্রের কৃষি বিশেষজ্ঞদের তথ্যানুসারে এবার জেলার প্রতি হেক্টরে ১০.১০ টন বিনা ধান উৎপাদন হয়েছে। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) এই বিশেষ জাতের ধানের বীজ উৎপাদন করে কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণের ব্যবস্থা করে।

গোপালগঞ্জ বিনা উপকেন্দ্র জানিয়েছে, নিম্ন জলাভূমি বেষ্টিত গোপালগঞ্জে এক ফসলি বোরো জমি বেশি। এ জেলার অধিকাংশ কৃষক এসব জমিতে বোরো ধান আবাদ করেন। বোরো ধান দিয়েই তাদের সারা বছরের সংসারের চাল খরচ চলে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে চৈত্র মাসে এ জেলার পানিতে লবণ চলে আসে।

লবণাক্ততার জন্য বোরো ফসলের উৎপাদন হ্রাস হওয়ার আশংকা দেখা দেয়। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি থেকে কৃষককে রক্ষা করতে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গোপালগঞ্জে জলবায়ু সহনশীল প্রকল্প শুরু করে। প্রকল্পের আওতায় বিনা উদ্ভাবিত জলবায়ু সহনশীল জাতের ধানসহ বিভিন্ন জাতের ফসল আবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

রামদিয়া গ্রামের কৃষক আসাদুজ্জামান শেখ ও টুকু শেখ বলেন, ‘গত ৫/৬ বছর ধরে চৈত্র মাসে পানিতে লবণ চলে আসছে। লবণের জন্য প্রচলিত জাতের ধান আবাদ করে আশানুরূপ ফলন পাচ্ছি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর বিনা উপকেন্দ্র থেকে বিনামূল্যে লবণাক্ততা সহিষ্ণু বিনা ১০ জাতের ধান বীজ, সার, ছত্রাক নাশক সংগ্রহ করি। সেখান থেকে ট্রেনিং নিয়ে এ জাতের ধান আবাদ করি। এ ধানে রোগবালাই নেই। প্রতি শতাংশে বিনা ধান ১ মণ করে ফলেছে। হাইব্রিড ধানের মতোই ফলন পেয়েছি। আগামী বছরের জন্যও বীজ সংরক্ষণ করছি। ধানের বাম্পার ফলন দেখে আমাদের এলাকার কৃষকরা আগামীতে এ জাতের ধান আবাদে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।’

গোপালগঞ্জ বিনা উপ-কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শেফাউর রহমান বলেন, ‘লবণাক্ততা সহিষ্ণু বিনা ১০ জাতের ধানে পাতা পোড়া, খোল পোড়া, খোল পঁচা রোগ দেখা দেয়নি। এমনকি মাজড়া পোকা, বাদামি গাছ ফড়িং, সবুজ পাতা ফড়িং পোকার আক্রমণও হয়নি। এ ধানে সেচ ও অন্যান্য খরচ কম লাগে। পাকা ধান ঝড়ে পড়েনা।’

গোপালগঞ্জের পানিতে লবণ আসার পরও এ ধান হাইব্রিড ধানের সমান ফলন দিয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘কৃষক এ ধানের আবাদ করে অধিক ফসল ঘরে তুলে লাভবান হয়েছেন। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এ ধানের বীজ উৎপাদন করে কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ নিলে কৃষকরা আরো উপকৃত হবেন।’

এদিকে, জলবায়ু সহিষ্ণু বীজ উদ্ভাবনের সাফল্য সম্পর্কে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড প্রকল্পের বিনার প্রকল্প পরিচালক ড. মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, বিনা জলবায়ু সহিষ্ণু ধানসহ বিভিন্ন ধরনের বীজ উদ্ভাবন করে মাঠে উপযোগিতা যাচাই করছে। এতে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড প্রকল্পের ডিডি পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. আবি আব্দুল্লাহ বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকবেলা করতে আমরা এখনই কৃষকের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। কৃষককে জলবায়ু সহিষ্ণু জাতের ফসল আবাদে উদ্বুদ্ধ করছি।

সৈয়দ মিরাজুল ইসলাম, ইউএনবি।